‘আমি প্রথমে হিন্দু, তার পর ব্রাহ্মণ, তারও পরে কমিউনিস্ট’
২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট, সেই যে বেরিয়েছিল, তারপর আর ঘরে ফেরে নাই সুভাষ। বছর ৯ হল, পৃথিবী ছেড়েছেন ‘বাংলার দামাল ছেলে’।
জন্ম অবিভক্ত ভারতের ঢাকায়। সাল ১৯৪২ (১৮ মার্চ), বাংলা ভাগ তো দূর, তখনও ‘ভারত ভাগই’ হয়নি। পরাধীন ভারতেই চক্রবর্তী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সুভাষ।
রাজনীতিতে হাতেখড়ি কলেজের সময় থেকেই। দমদম মতিঝিল কলেজের ছাত্র সুভাষ চক্রবর্তী ছাত্রাবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। সে সময় সুভাষ ছিলেন বঙ্গীয় ছাত্র পরিষদের সম্পাদক। পরে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনেরও (এসএফআই) সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি।
১৯৬২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন সুভাষ চক্রবর্তী। এর পর থেকেই ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনি হয়ে ওঠেন একনিষ্ঠ কর্মী। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে গণতান্ত্রিক পথে মার্ক্সবাদী পথ অনুসরণ করেন তিনি। তার পর এক সময় শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বও দেন তিনি।
ভোটের রাজনীতিতে সুভাষ চক্রবর্তী বরাবরই ছিলেন একটা ফ্যাক্টর। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে, সে বার বেলগাছিয়া (পূর্ব) বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে বাম সরকারের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সুভাষ চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিল যুবকল্যাণ দফতরও। এরপর ১৯৯৬-সালে জ্যোতি বসুর মন্ত্রীসভায় পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ক্রীড়া দফতরের সঙ্গেই তাঁকে দেওয়া হয় পরিবহণ দফতরের দায়িত্বও। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই মন্ত্রকগুলোর দায়িত্বই বহন করেছেন।
সুভাষ চক্রবর্তী ছিলেন বরাবরই বিতর্কিত কমিউনিস্ট নেতা। রেয়াত করতে না দলের শীর্ষ স্থানীয়দেরও। মিষ্টভাষী সুভাষ তারাপিঠে পুজো দিয়ে এসে বলেছিলেন, “‘আমি প্রথমে হিন্দু, তারপর ব্রাহ্মণ, তারপরে পার্টির”। যা নিয়ে কম বিতর্কও হয়নি। জ্যোতি বসু পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন সুভাষের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
প্রত্যুত্তরে সুভাষ বলেছিলেন, “আমি যখন পাগল, আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, তা হলে আমাকে দলে রেখেছে কেন”?
উল্লেখ্য বামেদের এই নেতা ফুসফুসের সংক্রমণের শিকার হন এবং ৬৭ বছর বয়সে মারা যান।
তাঁর মৃত্যুর পর বিস্মিত জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “ও ছোট বেলা থেকেই আমাদের মধ্যেই রয়েছে”। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “এমন একজন কর্মচঞ্চল অফুরান কর্মপ্রাণ নেতা এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন, ভাবতেই পারছি না”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় বলেছিলেন, “আমরা ভিন্ন মতামতের ছিলাম। তবে তাঁর এভাবে চলে যাওয়ায় আমি শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে একজন মহান রাজনীতিক-কে হারাল বাংলা”।