Debabrata Biswas: তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী!
রাজা পঞ্চম জর্জের দিল্লি আগমনের ঠিক আগে জন্ম বলে তাঁর ডাকনাম রাখা হয়েছিল 'জর্জ'; ২৬ বছরের সঙ্গীতজীবন, তারপর 'ব্রাত্য' করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে'; তিনি ভারতের গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধাপুরুষ এবং একজন প্রখ্যাত গণসঙ্গীত গায়কও। ১৯১১ সালের আজকের দিনে, ২২ অগস্ট তাঁর জন্ম। তিনি আর কেউ নন দেবব্রত বিশ্বাস।
দেবব্রতের জন্ম বরিশালে। বাবা দেবেন্দ্রমোহন বিশ্বাস। মা অবলা দেবী। দেবব্রতের দাদু কালীমোহন বিশ্বাস ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলে ইটনা থেকে বিতাড়িত হন। শৈশবে কিশোরগঞ্জ বিদ্যালয়ে দেবব্রতকে সেই কারণে 'ম্লেচ্ছ' শব্দটিও শুনতে হত। ছোট বয়স থেকেই দেবব্রত মায়ের কাছে ব্রহ্মসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হন।
তার পর দেবব্রতের জীবন চলিয়া গেছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। পড়াশোনা করবেন। ১৯২৭ সালে ভর্তি হলেন সিটি কলেজে।
কিন্তু দেবব্রতর জীবনের সব চেয়ে বড় ঘটনাটা ঘটল পরের বছরে-- ১৯২৮ সালের ব্রাহ্ম সমাজের ভাদ্রোৎসবে কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে তিনি সেই প্রথম দেখলেন রবীন্দ্রনাথকে!
আর এর দশ বছর পরে ১৯৩৮ সালে কনক দাশের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই তাঁর রবীন্দ্রগানের গায়ন, মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের সঙ্গে তাঁর বিরোধ শুরু।
এ দিকে আবার ছায়াছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে দেবব্রত এক মাইলস্টোন হয়ে গেলেন। হলেন ঋত্বিক ঘটকের সূত্রে। ঋত্বিকের 'মেঘে ঢাকা তারা' ছবিতে গীতা ঘটকের সঙ্গে তাঁর 'যে রাতে মোর দুয়ারগুলি' বাঙালির জীবনে একটা অনন্য স্মৃতিসম্পদ হয়ে যায়; এ ছাড়া 'কোমলগান্ধার' ছবিতে 'আকাশভরা সূর্যতারা' এবং 'যুক্তি তর্ক ও গল্প'তে স্বয়ং ঋত্বিকের 'লিপে' 'কেন চেয়ে আছ গো মা' গানগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করল।
তবে শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, এর পাশাপাশি দেবব্রত গণসঙ্গীত ও অন্যান্য গানও গাইলেন। তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, নজরুল ইসলামের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়েছিল। নজরুল তাঁর গান শুনে তাঁকে তাঁর নিজের দু'টি গান শিখিয়ে সেগুলি রেকর্ডও করিয়েছিলেন। একটি গান ছিল 'মোর ভুলিবার সাধনায় কেন সাধো বাদ'। অপর গানটি তিনি স্মরণ করতে পারেননি। যদিও এই রেকর্ড দু'টি দিনের আলো দেখেনি।
১৯৬৪ সাল থেকেই বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়ন বিষয়ে দেবব্রতের মতভেদ শুরু। বিরক্ত দেবব্রত রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করাই ছেড়ে দেন। যদিও গান গাওয়া বন্ধ করেন না। ঘরোয়া ভাবে গান গেয়ে যান আপন প্রাণের আনন্দে। ১৯৭১ সালের পর থেকে তিনি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেননি।