নবান্নের সিবিআই `অনুমতি` বিজ্ঞপ্তি আইনসঙ্গত? সারদা-নারদা তদন্তেরই বা কী হবে?
সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইকে শুনতে হয়েছে তারা খাঁচায় বন্দি তোতা। বিরোধী আসনে বসে সব দলেরই অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। সিবিআইয়ের দুই শীর্ষকর্তার বিরোধে, এখন গোটা দেশেই এই সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। এবার, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই কড়া পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সিবিআইকে ব্যবহারের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই তুলেছেন। আঙুল তুলেছেন বিজেপি-র দিকে। এ বার সরাসরি সংঘাত। এখন থেকে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজ্যে সিবিআই আর তদন্ত করতে পারবে না।
১৯৮৯ সালে তত্কালীন বাম সরকার রাজ্যে তদন্তের বিষয়ে সিবিআইকে পূর্ণ ছাড় দেয়। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকে সেই ছাড় তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ফলে, রাজ্যের সীমানার মধ্যে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসেও তদন্ত চালাতে চাইলে এখন থেকে সিবিআইকে রাজ্যের আগাম অনুমতি নিতে হবে।
সম্প্রতি কর্ণাটক এবং গত ৮ই নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় আগাম অনুমতি ছাড়া সিবিআই তাদের রাজ্যে তদন্ত চালাতে পারবে না।
কোনও রাজ্য কি আইনি এক্তিয়ারের মধ্যেই সিবিআইকে কার্যত নিষিদ্ধ করতে পারে? বিষয়টি সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়।
আইনজ্ঞরা বলছেন, সিবিআই আইনের ৫ এবং ৬ নম্বর ধারার মধ্যে সংঘাতই এই ধোঁয়াশার কারণ। '৪৬ সালের দিল্লি স্পেশাল পুলিস এসট্যাবলিসমেন্ট আইন অনুযায়ী কাজ করে সিবিআই।
এই আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, রাজ্যের কোনও থানার কোনও আইসি-র যে ক্ষমতা, সেই একই ক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিবিআইয়ের কোনও ইন্সপেক্টর তদন্ত করতে পারবেন।
আবার আইনের ৬ নম্বর ধারা বলছে, কোনও রাজ্যে তদন্ত চালাতে গেলে সেই রাজ্যের অনুমতিও নিতে হবে।
আইনে এই ধোঁয়াশা থাকায় তদন্তের কাজ ব্যাহত হতে পারে। এ আশঙ্কায় দিল্লি হাইকোর্টে যায় সিবিআই।
গত মাসে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দেয়, সংশ্লিষ্ট মামলাটি যে রাজ্যে নথিভুক্ত সেই রাজ্য ছাড়া, অন্য কোনও রাজ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইকে কোনও অনুমতি নিতে হবে না। রাজ্যের ছাড়পত্রের জন্য তদন্ত থমকে গেলে আইনের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
রাজ্যের অনুমতি বলতে কী বোঝায়, তার ব্যাখ্যা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যায় সিবিআই। এবছর জানুয়ারি মাসেই শীর্ষ আদালত জানায় সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকারের অনুমতির বিষয়টি তারা বিচার করে দেখবে।
ফলে, সিবিআই আইন নিয়ে আইনি যুদ্ধের রাস্তা এখনও খোলাই রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্য সরকার সিবিআইকে কার্যত নিষিদ্ধ করলেও এ রাজ্যে সিবিআইয়ের হাতে থাকা নানা মামলার তদন্তে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সারদা, রোজ ভ্যালি বা নারদ মামলার তদন্ত চলায় এ ক্ষেত্রেও সিবিআইয়ের এগিয়ে যেতে কোনও বাধা নেই।