দেবস্নান পর্বের পরে `জ্বর` হয় জগন্নাথদেবের, দর্শন বন্ধ পক্ষকাল
কোভিড-পর্বে স্নানযাত্রা নিয়ে একটা সংশয় ছিলই। কিন্তু বহু মন্দিরেই যথারীতি নিষ্ঠার সঙ্গে স্নানযাত্রার (Snana Yatra) অনুষ্ঠান পালন সম্ভব হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
স্নানযাত্রার পূর্ণিমাকে 'দেবস্নান পূর্ণিমা'ও (Devasnan Purnima) বলে। বহু প্রতীক্ষিত সেই Snana Yatra এল। এ এক এমন তিথি যা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে প্রচুর আবেগ ও শ্রদ্ধা জমে থাকে। জগন্নাথের রথযাত্রার (Rath Yatra of Lord Jagannath)আগে এই স্নানযাত্রা এক বিশেষ অনুষ্ঠান।
এটা ঠিক যে, এই অতিমারী পরিস্থিতিতে ভক্তেরা কোনও মন্দিরে স্নানযাত্রায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না। পুরীর মন্দিরে শ্রীজগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার অনুষ্ঠানও এবারে ভক্ত-বিবর্জিত অবস্থাতেই অনুষ্ঠিত হল।
Skanda Purana মতে, রাজা Indradyumna কাষ্ঠনির্মিত এই দেবমূর্তি নির্মাণ করিয়েছিলেন। যেদিন এই দেবমূর্তির প্রতিষ্ঠা সেদিনটিই স্নানযাত্রা। এক হিসেবে এদিনটি জগন্নাথের জন্মদিনও। তবে স্নানযাত্রা শুধু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নয়, গোটা ওড়িশা জুড়ে নানা মন্দিরে এটি নিষ্ঠাভরে পালিত হয়। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয় পশ্চিমবাংলায়।
পুরীতে এদিন খুব ভোর বেলা রত্নসিংহাসন থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নামিয়ে এনে স্নানের জন্য তাঁদের স্নানবেদিতে স্থাপন করা হয়। এই স্নান-পর্বের জন্য জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরের এক কুয়ো থেকে জল নেওয়া হয়। সেই জলে নানা ভেষজ উপাদান ও গন্ধদ্রব্য মেশানো হয়। মোট ১০৮ কলস জল নিয়ে এই স্নান সমাধা হয়। তবে স্নানের পূর্বে কিছু শাস্ত্রীয় আচার থাকে।
১০৮ কলস পবিত্র সুগন্ধি জলে স্নান পর্ব সমাধা করে দেবতাদের নববেশ পরানো হয়। ঠিক স্নানের পরেই তাঁদের যে বেশ পরিধান করানো হয় তাকে বলে সদা বেশ।
ওই দিনই পরে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে 'হাতিবেশ' পরানো হয়। 'হাতিবেশ' আর কিছু নয়। Lord Ganesha-এর ধাঁচে পোশোক পরানো হয় এই তিন মূর্তিকে। এর পর রাতে তাঁদের বিশ্রামে পাঠানো হয়। এই বিশ্রাম অবশ্য দীর্ঘ।
এই সময়-পর্বে ভক্তজন দর্শন পান না জগন্নাথের। কথিত আছে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নাকি জগন্নাথ আদেশ করেছিলেন, স্নান-অন্তে তাঁর বেশবাসহীন রূপ যেন কেউ না দেখে। তাই ১৫ দিনের বিরতি দেওয়া। আরও শোনা যায়, এই স্নান-পর্বের শেষে জগন্নাথের জ্বর হয়। সেই সময়ে তাঁর বিশ্রাম জরুরি। তাই সেই কারণেও দর্শনে বিরতি। যাই হোক, রথযাত্রার ঠিক আগের দিন দেবতারা বিশ্রাম থেকে ওঠেন। মন্দিরদ্বার খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য।