পুজোয় দুদিনের সফর, কম খরচে দু-দণ্ড রেহাই পেতে ঘুরে আসুন লেপচাজগত, বাঁকিপুটে

Sat, 10 Oct 2020-5:49 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন: পুজোয় প্যান্ডেল হপিং সম্ভব নয়। মনে ইচ্ছা থাকলেও করোনার চোখ রাঙানো বেড়াজালে ঘরবন্দী থাকাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু, মন কি আর দুনিয়ার এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে! সে তো নিজের খেয়াল খুশিতে ডানা মেলতে চায়। আর তখনই মস্তিষ্কের সঙ্গে বেঁধে যায় দন্ধ। আপনারও কি একই দশা? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের পরামর্শ মনের কথা শুনুন। কারণ, এই ভয়াবহ অবসাদের সময় মনকে অযথা কষ্ট দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। এতে পরবর্তীকালে মস্তিস্কের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই, বেরিয়ে পড়ুন। মন্ডপ হপিং-এ নয়। ঘুরতে। শহরের কাছে পিঠে। সবুজ ঘাসে কিংবা ভেজা বালির চরে হেঁটে আসুন। পুজোর মরশুমে ঝোড়ো বাতাসে গা ভাসিয়ে নিন।

দূরে কোথাও নয়, যান কাছে পিঠের অজানা অচেনা জায়গায় যেখানে করোনার নজর থেকে আড়াল হতে পারবেন আপনি । নিশ্চই ভাবছেন কোথায় যাবেন? দীঘা পুরি যাওয়ার পরামর্শ দেবে না এই প্রতিবেদন। 

ঘুরে আসুন জুনপুর, মৌসুনি দ্বীপ, ঝিলিমিলি ট্রি হাউস, বাওয়ালি ফার্ম ট্রি হাউস, লেপচাজগত পাইন ফরেস্ট হোমস্টে, বাংরিপোসি ইকো কটেজ, বোরাল বিচ, বাঁকিপুট সমুদ্র, জুন পুট, মাসানজোর।

মৌসুনি দ্বীপ কম বেশি সকলেরই এখন চেনা জায়গা হয়ে উঠেছে সোশাল মিডিয়ার দৌলতে। উত্তাল সমুদ্র না থাকলেও সেখানের মনোরম গ্রামীণ দৃশ্য সমুদ্রকে অন্যভাবে চেনাবে আপনাকে। মানুষের যাতায়াত কম বলে, অনেক লাল কাঁকড়া দেখতে পাবেন। তাবুতে থাকার অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে আপনার। কারণ সেখানে বিলাসবহুল হোটেল নেই। রাতের অন্ধকারে সমুদ্রতটে বৃহদাকার শামুক ঘুরে বেড়াতে দেখবেন সেখানে। তবে যাঁরা গাড়ি নিয়ে যাবেন তাদের হুজুদিঘাটে গাড়ি পার্ক করে নৌকা করে ওপারে যেতে হবে। গাড়ি পার্ক করার জন্য হোটেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের ওই স্থানে পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। 

বোরাল, বাঁকিপুট , জুন পুট,এই তিনটে সমুদ্র উপকূল এলাকা। কাঁথি বাস স্টপ থেকে খানিক এগিয়ে আমরা যে পথ ধরি দীঘা মন্দারমণি যাওয়ার জন্য, তাঁর বিপরীত রাস্তা অর্থাৎ ডান দিকের রাস্তা ধরে  পৌঁছাতে হবে  বোরাল, বাঁকিপুট , জুন পুট। ফাঁকা সমুদ্রের পার। গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যেতে পারবেন সমুদ্রের পারে। তবে ভাটার কালে জল সরে যাওয়ায় ভেটো পড়ে জুনপুটে। দিনে দিনে সামুদ্রিক মাছের উপনিবেশ গড়ে উঠছে জুনপুটে। ঝাউ গাছের সবুজ ছাওয়ায় ঘেরা সমুদ্রের নীল জল আর মাথার উপর নীল আকাশ। সমুদ্রপ্রেমী মানুষদের কাছে সত্যিই এ এক অসাধারন জায়গা। সমুদ্রের বিশাল বেলাভূমিটি বৈচিত্রের স্বাদ আনে। ভাটায় জল নেমে যাওয়ার পর সমুদ্রের ব্যাপ্তি মাইলখানেক বেড়ে যায়।

জুনপুট থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র আর ঝাউয়ের জঙ্গলে ঘেরা বাঁকিপুট। পশ্চিমবঙ্গের নতুন পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বাঁকিপুট। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর সমুদ্রের নির্জনতা সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে অনেকটা স্বর্গের মতো। 

শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে শালের জঙ্গলে ছাওয়া একটি টিলার উপর ঝিলিমিলি ট্রি হাউস রিসোর্ট। ট্রি হাউসের বারান্দায় বসে সারাদিন গাছে গাছে নানা পাখির ডাক শোনা, গাছের গায়ে কাঠবিড়ালিদের দাপাদাপি, বা নিচের জমিতে মুরগীদের খেলে বেড়ানো, টিলার নিচের জঙ্গল, মাঠঘাটের পানে চেয়ে সবুজের আস্বাদন, কখনও বা নিচে গ্রামের রাস্তায় দু একটি গাড়ির শব্দ। যেদিকে চোখ যায় শুধুই সবুজ আর সবুজ। উইকএন্ডে ঘুরে আসতে পারেন ঝিলিমিলি । এখানকার মতো বিশাল বিশাল শাল–সেগুনের জঙ্গল দক্ষিণবঙ্গে আর কোথাও নেই। কাছাকাছি রয়েছে প্রকৃতিসুন্দরী সুতান এবং মনোরম জলাধার তালবেড়িয়া, কাঁকড়াঝোড়, বেলপাহাড়ী। সবুজের মাঝে নিরিবিলিতে দু একটি দিন অবকাশ যাপনের আদর্শ জায়গা।

লেপচাজগত দার্জিলিং এবং সুখিয়াপোখারির মধ্যে অবস্থিত।লেপচাজগত পাইন ফরেস্ট হোমস্টে মেন রাস্তার ঠিক সামনে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং দার্জিলিং শহরের দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায় বলে লেপচাজগত গন্তব্য হিসাবে খুব জনপ্রিয়। রাতের দার্জিলিংয়ের দৃশ্য বিশেষ করে যখন পুরো শহর আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে, এখান থেকে দেখতে অপুর্ব লাগে। লেপচাজগত প্রকৃতির মাঝে নিজস্বতা এমন বজায় রাখে যা ভ্রমণকারীদের জন্য আরও মনে জায়গা করে নেয়। এই লজটি নিরিবিলিতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। আপনি যদি প্রকৃতিকে আরও নিবিড় ভাবে পেতে চান তাহলে এই হোমস্টের পেছনের পাহাড়ে হাঁটা এবং কয়েক মিনিটের পথ আপনাকে পাহাড়ের শীর্ষে নিয়ে যাবে। এখানে আপনি আশেপাশের দুর্দান্ত প্যানোরামিক ভিউ পাবেন।

 

বাওয়ালি ফার্ম ট্রি হাউস,  দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়। কলকাতা থেকে মেরেকেটে দু ঘন্টা দূরে সবুজ প্রকৃতির মাঝে চমত্কার সময় কাটানোর সুযোগ। গাছ বাড়ি একদম অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। ফার্মের একদম শেষ প্রান্তে আলাদা এর অবস্থান। বছরের যে কোনও সময় যাওয়া যায়। সব বয়সীদের কথা ভেবে বানানো হয়েছে গসিপ কর্নার, নার্সারি, প্লে সেন্টার, পুকুর, বাগান, স্কুল, গাছবাড়ি, কটেজ, ডাইনিং হল, চাষের জমি কিংবা খেলার মাঠ। যেমন চাওয়া তেমন করেই সময় কাটানোর সুযোগ। ইনডোর গেমস তো আছেই, চাইলে মাছ ধরুন। দেশি পাখি-সহ পরিযায়ী পাখিদের দু’চোখ ভরে দেখুন। ধানখেত অথবা পুকুরপাড়ে বসে চা-কফির কাপে চুমুক দিয়ে প্রিয় কবিতার বইয়ের পাতা ওল্টান। গ্রামের মেঠোপথে হেঁটে বা সাইকেলে, একলা বা সঙ্গে-গাইড বেড়ান। ইতিহাস ভাল লাগলে আছে ৩০০ বছরের পুরনো বাওয়ালি রাজবাড়ি এবং সংলগ্ন প্রাচীন গোপিনাথ জিউ টেরাকোটা মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। এ ছাড়াও ৬ কিমি দূরে বড় কাছারি মন্দির, নদীর পাশে ব্রিটিশ আমলের বারুদ ঘর, কোমাগাতা মারু মেমোরিয়াল ও টং অছি মেমোরিয়াল। 

বুদ্ধদেব গুহের ‘বাংরিপোশির দু’রাত্তির’ যদি পড়ে থাকেন, এখানে যেতে মন চাইবেই। বুদ্ধদেব গুহ নাকি এখানে বসেই লিখেছিলেন বাংরিপোশিকে নিয়ে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস।  আর যদি জঙ্গল ভালবাসেন, তাহলে তো কথাই নেই। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের ঠাকুরানি পাহাড়ের কোলে ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বাংরিপোশি। শহরের ধুলো ঝেড়ে দু’দিনের জন্য হারিয়ে যাওয়ার আদর্শ ঠিকানা। পাহাড়ঘেরা গ্রাম। পাশেই তিরতির করে বয়ে চলেছে বুড়িবালাম। ঠিক ধরেছেন, বাঘাযতীন যে নদীকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা দিয়েছিলেন। লোধা, সাঁওতাল, ভিল, মুণ্ডাদের এই গ্রামে গেলে প্রাণে ঠান্ডা বাতাস লাগতে বাধ্য। শাল-মহুয়ায় মোড়া বাংরিপোশির সৌন্দর্য সবচেয়ে ভাল উপভোগ করা যায় বর্ষায় গেলে। পাহাড়ের মাথায় কনকদুর্গা বা বনবিবির মন্দির নাকি খুব জাগ্রত। পায়ে হেঁটে কিংবা ট্রেকারে ঘুরতে পারেন আশপাশের জায়গা। খরকাই নদীর উপর সুলাইপাত বাঁধ কিংবা অদূরে কুলিয়ানা গ্রামের ডোকরা শিল্পের কাজ দেখে আসুন। ওড়িশার বাংরিপোশি কলকাতা থেকে মাত্র ২৩০ কিলোমিটার দূরে।

 

ঝাড়খণ্ডের ত্রিকুট পাহাড়। সেখানে জন্মেই পূবমুখো হয়ে দৌড় ময়ূরাক্ষীর। সেখানেই ম্যাসানজোর ড্যাম, চিরসবুজে ঢাকা চতুর্দিক। দূরে ছোট বড় পাহাড় টিলা। মাথায় জঙ্গলের সবুজ ছাউনি দেওয়া। যত পাহাড়ের কাছাকাছি হওয়া যায়, শরীর মন তরতাজা হয়ে ওঠে ততই। পথ গিয়েছে পাহাড়ের পাকদন্ডী বেয়ে। ম্যাসানজোর ব্যারেজ পেরিয়ে দুমকার দিকে গতি সেই পথের।  এ রাজ্যে তিলপাড়া আর ও পারে ম্যাসানজোর ড্যাম। ম্যাসানজোরের টানেই এখানে আসা।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link