Durga Puja 2021: বিসর্জনের সময়ে আজও শোনা যায় বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার শব্দ
জমিদারি গিয়েছে কবেই, তবু বদলায়নি জমিদার বাড়ির পুজোর রীতিনীতি। জমিদার বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষ মেতে উঠত, চলত খাওয়া-দাওয়া। সেই রেওয়াজ আজও আছে।
হুগলির দাদপুরের তালচিনান গ্রামের পাঠকদের জমিদার বাড়ির কিছু অংশ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। এই বাড়ির ঠাকুরদালানে হয় দুর্গা পুজো। ২২৭ বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন জমিদার কৃষ্ণকান্ত পাঠক। চাঁদপুর, মহেশপুর, হিরণ্যবাটিতে জমিদারি ছিল পাঠকদের। শুধু দশ হাজার বিঘা খাসজমি ছিল তাঁদের। প্রজাদের দেওয়া খাজনাতেই চলত জমিদারি।
এ বাড়ির জনার্দন মন্দিরে জনার্দনের পুজো হয়, দোলমন্দিরে হয় দোল উৎসব। মন্দিরের সামনে বিশাল মেলা বসত এক সময়। কয়েক লক্ষ টাকার বাজি পোড়ানো হত, যা দেখতে আশপাশের গ্রামের মানুষজন ভিড় করতেন। দিন বদলেছে, কালের নিয়মে জমিদারি গেছে, তবে পরিবারের ঐতিহ্য মেনে দুর্গা পুজো যথারীতি চলেছে।
আগে পুজো হত জমিদারদের পুরনো বাড়িতে। শরিকি বিবাদে মাঝে কয়েক বছর পুজো বন্ধ থাকে। পরে তিনকড়ি পাঠক নতুন বাড়িতে পুজো নিয়ে আসেন।
পাঠকদের পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। আখ চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। সন্ধি পুজো আর বিসর্জনের সময় বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার রেওয়াজ আজও শোনা যায়। ষষ্ঠী থেকেই পুজোবাড়িতে খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়।
মূলত কলকাতায় থাকেন পাঠক পরিবারের লোকজন। কয়েকজন বিদেশেও থাকেন। পুজোর সময়ে অবশ্য গ্রামের বাড়িতে আসেন তাঁরা। পরিবারের সদস্য ও গ্রামসম্পর্কে জ্ঞাতিরা সপ্তমীতে ভূরিভোজ করেন এক সঙ্গে। নবমীতে গ্রামের সব শ্রেণির মানুষের জন্য পাত পড়ে পাঠকবাড়িতে। প্রায় দুহাজার মানুষ এক সঙ্গে পংক্তিভোজ করেন। দশমীতে থাকে লুচি বোঁদে আর সিদ্ধি।
ঠাকুর বরনের পর সিঁদুর খেলা হয়। তাতে গ্রামের সাধারণ মহিলারাও যোগ দেন। গ্রামের বাগদি সম্প্রদায় কাঁধে করে প্রতিমা গোটা গ্রাম ঘুরিয়ে পুকুরে বিসর্জন দেয়। বিসর্জন হয়ে গেলে ছোটরা কলাপাতায় সিঁদুর দিয়ে দুর্গা সহায় লেখে। এভাবেই শেষ হয় পাঠকবাড়ির পুজো।