Durga Puja 2021:দেবীর পুজো এখানে আজ জমিদারবাড়ির চৌকাঠে হয়
দেবী এখানে চৌকাঠে পুজো পান। মূর্তি ছাড়াই চলে দুর্গা আরাধনা। প্রতিমা ছাড়াই দুর্গা মন্দির। কয়েক দশক আগেও এখানে মহা সমারোহে দেবী আরাধনা হত। ঢাক-ঢোলের সঙ্গে বেজে উঠত সানাই। রঙিন ঝাড়বাতির আলোর ছটায় মন্দিরের উঠোন রাঙা হয়ে উঠত। গ্রামের মানুষ জমিদারবাড়ির পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিত। এ সবই ইতিহাস।
আইনি জটিলতায় জমিদার পরিবার এখন কপর্দকশূন্য। অভাব গিলেছে গোটা পরিবারকে। জমিদারবাড়ির দেবী দুর্গা এখন চৌকাঠে পুজো পান। দুর্গাপঞ্চমীর দিন মন্দিরের কষ্টিপাথরের চৌকাঠে ধূপ, ধুনো-সহ প্রদীপ জ্বালিয়ে জমিদারবাড়ির বধূরা দেবী পুজো শুরু করেন। চার দিন ধরে চলে আরাধনা।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি প্রসিদ্ধ লবণ ব্যবসায়ী শোভারামচন্দ্র ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভ করে শ্রীবাটি গ্রামে জমিদারি কেনেন। অখণ্ড বর্ধমানের এই গ্রাম থেকেই চন্দ্র পরিবারের উত্থান। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে তৎকালীন বাংলা-সহ ভিন রাজ্যেও নুন সরবরাহের ব্যবসা করত চন্দ্র পরিবার। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ধর্মপরায়ণ চন্দ্র পরিবারের জমিদার কালিদাসচন্দ্র বসতবাড়িতে সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করে দুর্গাপুজোর পত্তন করেছিলেন। চন্দ্র পরিবারের পাঁচ শরিকের অন্যতম এই কালিদাস। অন্য এক শরিক গুরুচরণচন্দ্র বসতবাড়ি লাগোয়া নান্দনিক শিল্পকর্মে ভরপুর তিনটি টেরাকোটা শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মন্দিরের শরীর জুড়ে আজও উৎকীর্ণ নানা শিল্পকর্ম। দুর্গামন্দিরের দেওয়ালে আজও পুরনো গন্ধ। খিলানের সুদৃশ্য ইটে নোনা ধরেছে। কোথাও শ্যাওলায় মুখ ঢেখেছে জমিদারের সাধের মন্দিরের কারুকার্য। শুধু কষ্টিপাথরের চৌকাঠ আজও মন্দিরের আভিজাত্যের জানান দেয়। মন্দির এখানে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। জমিদার পরিবারের সঙ্গে মন্দিরকেও অভাব গিলতে বসেছে। জমিদারের উত্তরাধিকারী দৌহিত্র বংশ আইনি জটিলতায় হারিয়েছে তাদের জমিদারির জমি-জমা সবই। আপাতবিচ্ছিন্ন বোধ ও স্মৃতি দিয়ে নির্মিত এই বিশাল দুর্গা মন্দির বড় একা বড় অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে। ছাদ ভেঙে পড়েছে। নবাবি বরফি ইটের ফাঁক দিয়ে জমিদারি অহঙ্কার উঁকি মারে, জমিদারি নেই, রয়ে গেছে তার শব্দহীন সুর তাল যা ধ্বনিত হয় মানবজীবনের না বলা কথায়।
মন্দিরের শরীর জুড়ে থাকা আগাছা আকাশ ছুঁতে চাইছে। অন্য শরিকের টেরাকোটার মন্দিরের দেব-দেবী অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। টেরাকোটার শিবমন্দিরের শরীর জুড়ে আছে দুর্গা, কালী, গণেশের শিল্পকর্ম। নান্দনিক কারুকার্যে ভরা টেরাকোটা মন্দির চন্দ্রদের পারিবারিক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখলেও দুর্গামন্দির ধ্বংসের প্রহর গোনে। কষ্টিপাথরের চৌকাঠে এসে ঠেকেছে জমিদারের স্মৃতি।