Durga Puja 2021: সম্রাট আকবরের সনদে একদা শুরু হয়েছিল এই বাড়ির পুজো
হুগলি জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম কোন্নগর ঘোষাল বাড়ির পুজো। ৫৬৭ বছরের এই পুজোর আড়ম্বর এবার একটু কম। কারণ, করোনা অতিমারী। ঘোষালদের পুজোর মূল আকর্ষণই হল এ বাড়ির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর সবাই মিলে হইহই করে পংক্তিভোজ। গতবার করোনার কোপে সেই অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছিল। এবার তা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতি বছর যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাঁরা অনেকেই অনুপস্থিত।
করোনার কারণেই লোকসমাগম থেকে একটু সাবধানী হতে হয়েছে এই বাড়ির লোকজনদের। সব অনুষ্ঠান বাতিল করে শুধু পুজোটুকুই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘোষালবাড়িতে নরসিংহমূর্তি পুজো হয়। তবে এবারই প্রথম এই পুজো হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। ঘোষালদের দালানেই ঠাকুর তৈরি করেন মৃৎশিল্পী। দশমীর দিন সকালে বরণ। ঘোষালবাড়ির এয়োস্ত্রীরা দশমীর দিন দুর্গাবরণ করেন। আলতা সিঁদুর পরে পান্তা-ইলিশ খেয়ে স্বামীর মঙ্গল কামনায় দেবীবরণ করেন তাঁরা। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁর আমিষ খাওয়াটা যেন বন্ধ না হয়, এর নিভৃত অর্থ, তাঁর স্বামী যেন জীবিত থাকেন।
একসময় স্থানীয় বাগখালে ঘন জঙ্গল ছিল। সেখানে বাঘ থাকত। তা থেকেই ওই জায়গার নাম 'বাঘখাল', তা থেকে 'বাগখাল'। আগে এই বাগখালে জোড়া নৌকায় প্রতিমা চাপিয়ে মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হত। একবার রাতে বিসর্জন দেওয়ার সময়ে একজনকে বাঘে টেনে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই দিনের আলোয় বিসর্জন দেওয়া হয়।
এক সময় বড়ে গুলাম আলি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়রা ঘোষাল বাড়িতে গান গেয়ে গেছেন। দু'বছর আগেও বড় আকারে অনুষ্ঠান হয়েছে। এবার সব বন্ধ। ঘোষাল পরিবারের ছেলেমেয়েরা নিজেরা যে অনুষ্ঠান করেন, এবার তা-ও হবে না। তাই মন খারাপ ঘোষালদের।
শোনা যায়, সম্রাট আকবরের কাছ থেকে সনদ পেয়ে আশুতোষ ঘোষাল কোন্নগর অঞ্চলে জমিদারি পত্তন করেন। তাঁর সময়েই দুর্গা পুজো শুরু হয়। সেসময় বারোয়ারি পুজোর প্রচলন ছিল না। তাই বাড়ির পুজোকেই বারোয়ারির রূপ দিতে ব্রিটিশ সরকার ঘোষালদের পুজোর জন্য সাড়ে সাতশো টাকা অনুদান ধার্য করেছিল। দীর্ঘ দিন সেই টাকা পেয়ে এসেছে ঘোষালরা। শোনা যায়, সেই টাকা ঘোড়ার গাড়ি করে ট্রেজারি থেকে নিয়ে আসা হত। পাড়াশুদ্ধ সবাইকে খাইয়ে পুজোর খরচ করেও সেই সময় বেঁচে যেত সেই টাকার কিছুটা। অবশ্য সাড়ে সাতশো টাকার মূল্য এখন অনেক কমেছে। ইদানীং আর সেই টাকা নিয়েও আসেন না ঘোষালরা।
পরিবার বড় হয়েছে,অনেকেই বাইরে থাকেন, তবু ঐতিহ্য আর পরম্পরার টানে, পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হতে সকলেই চেষ্টা করেন পুজোর সময়ে হাজির হতে।