Durga Puja 2021: এ বাড়িতে সিঁদুরখেলা দশমীতে নয়, হয় অষ্টমীর দিনে
হাওড়ার সাঁকরাইলের রাজগঞ্জে পালবাড়ির পুজো শুধু হাওড়ার নয়, গোটা রাজ্যেরই অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যশালী পুজো। প্রায় ১৯০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো চলে আসছে। এই বাড়ির প্রাণপুরুষ রাজারাম পাল। তিনি হাওড়ার আন্দুলের রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন। ভাল কাজের জন্য রাজার থেকে ওই এলাকায় জমিদারি পান। সেই সময় রাজগঞ্জে গঙ্গার পাড়ে বাড়ি করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে একদা গঙ্গায় তলিয়ে যায় সেই বাড়ি।
এই ঘটনার পরে, আজ থেকে প্রায় ১৯০ বছর আগে রাজরাম পালের নাতি চূড়ামণি পাল সেই বাড়িরই অনতিদূরে তৈরি করান নতুন এক জমিদার বাড়ি। সঙ্গে তৈরি করান ঠাকুর দালানও। তিনি তাঁর ছেলে ললিতনারায়ণ পালের নামে নতুন বাড়ির নাম রাখেন 'ললিত লজ'। সেই সময় থেকেই পালবাড়িতে শুরু হয় দুর্গা পুজো। যা আজও ঐতিহ্যের সঙ্গে চলে আসছে।
চূড়ামণি পালের দুই ছেলে নফরচন্দ্র পাল ও সারদাপ্রসাদ পাল আর দেওয়ানি করেননি। নফরচন্দ্র ইঞ্জিনিয়ার হয়ে প্রথমে চাকরি ও পরে ব্যবসা শুরু করেন। এলাকার প্রচুর ইটভাটা তৈরি করে রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ইট সরবরাহ শুরু করেন। এছাড়াও বহু রকম ব্যবসা করতে থাকেন। সেই সময় থেকেই পালেদের আর্থিক প্রতিপত্তিরও শুরু। আর দুর্গাপুজোও ক্রমশ জমজমাট হতে থাকে।
পালবাড়িতে দুর্গাপুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়। মহালয়া থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। এই বাড়ির একচালার দুর্গা প্রতিমা বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয়। বাড়ির মহিলারাই পুজোর সমস্ত কাজে হাত লাগান।
অষ্টমীতে তৈরি হয় বিশেষ ভোগ। বলিপ্রথা নেই। এ বাড়িতে সিঁদুর খেলা দশমীতে নয়, হয় অষ্টমীর দিন। দশমীর দিন দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার রীতি।
পুজোর সময় দেশ-বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা আসেন এ বাড়িতে। নিজেদের আনন্দের সঙ্গেই তাঁরা পুজোর ক'দিন সামিল করে নেন এলাকার দুঃস্থ পরিবারগুলিকেও। চলে খাওয়া-দাওয়া, দেওয়া হয় নতুন জামাকাপড়। পুজো আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠে উৎসব।