Durga Puja 2021: নরোত্তম জেলের জিভে মা লিখে দিলেন চণ্ডীমঙ্গল
৩৫০ বছরের প্রাচীন কাঁথির রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। মন্দিরে অধিষ্ঠিত মা চণ্ডী। রাজবাড়ির এই পুজো 'গড়ের দুর্গা পুজো' নামেও পরিচিত। কাঁথির রাজবাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি।
এ বাড়িতে পুজোর সময় মা দুর্গার সামনে তাঁর নাম সংকীর্তন করেন জেলে সম্প্রদায়ের মানুষজন। লোকশ্রুতি-- তৎকালীন কাঁথির অনতিদূরে মশাগাঁ খাল পেরিয়ে রাতে মা আসছিলেন গড়ের পুজোয়। খাল পেরোনোর পরে এক জেলেকে নৌকাতেই ষোড়শী রূপে মা দেখা দেন। গল্পটা এরকম: মাঝি ছিলেন ধীবর নরোত্তম। ষোড়শী এক নারীকে খাল পার করানোর পরে নরোত্তম পয়সা চাইলেন। সম্ভবত সেই ষোড়শী পয়সা দিতে পারবেন না বলেছিলেন। কিন্তু গরিব জেলে দুটো পয়সার জন্য নাছোড়বান্দা। আর তখনই মা তাঁকে স্বরূপে দেখা দেন। নরোত্তমকে মা বললেন, কিশোরনগর গড়বাড়িতে দুর্গোৎসব হচ্ছে, সেখানে তুই আমার নাম সংকীর্তন করবি, অনেক টাকা পাবি। ধীবর মায়ের নির্দেশ শুনে বললে, আমি তো মূর্খ মানুষ, কী করে আমি তোমার নাম সংকীর্তন করব, মা! উত্তরে মা বলেন, তোর জিভে আমি চণ্ডীমঙ্গল কীর্তন লিখে দেব, তোর কোনও অসুবিধে হবে না। তারপর মা নরোত্তমের জিভে লিখে দেন চণ্ডীমঙ্গল।
প্রথম বাধা কাটল। যথাসময়ে নরোত্তম গেলেন মায়ের নাম সংকীর্তন করতে। কিন্তু সেখানে আবার বাধা। জেলেদের গান গাওয়ায় প্রবল আপত্তি রাজবাড়ির সদস্যদের। এর পরেই ঘটেছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। মন্দিরের পেছনে পশ্চিম দিক থেকে গান শুরু করে ধীবররা। লোকশ্রুতি-- মন্দিরের ঘট ঘুরে যায় পশ্চিম দিকে, আর সেই থেকেই কাঁথির গড়ের পুজোতে ঘট বসানো হয়ে আসছে পশ্চিমমুখেই। অন্য কোথাও পশ্চিমমুখী ঘটে মা পূজিতা হন না। আর তার পর থেকেই পুজোর সময় ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষেরাই এখানে বংশপরম্পরায় বরাবর মায়ের নাম সংকীর্তন করে আসছেন।
রাজবাড়ির পুজোর হোম-যজ্ঞ ঘিরেও রয়েছে নানা রিচুয়ালস। হোমের আগুন ধরানো হয় সূর্যের আলো থেকে আতস কাচের মাধ্যমে। তাতে যদি কোনও সমস্যা হয়, তবে চকমকি পাথর ঘষে আগুন ধরানো রীতি। এটিও এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
মায়ের ভোগ ভক্তদের কাছে মহাপ্রসাদ। চিনি কাজুবাদাম ছানা দিয়ে তৈরি হয় প্রসাদ। তৎকালীন রাজা যাদবরাম রায়ের আমল থেকেই প্রচলন এই প্রসাদের। শুধু তাই নয়, এখানে অষ্টসখীর ঘট পুজো-সহ প্রতিপদ থেকে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
আগে ঘটা করে মোষ বলি হত এবাড়ির পুজোয়। কিন্তু কোনও একবার পুজোয় কোন এক দুর্যোগের রাতে বলিতে বাধা পড়েছিল। সেই থেকে বন্ধ মোষ বলি। পাঁচ দিন ধরে এই পুজোকে ঘিরে বসে গড়ের মেলা।