Durga Puja 2021: মন টানে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, উত্তমকুমারের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ির পুজো

Soumitra Sen Wed, 15 Sep 2021-8:45 pm,

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের জাড়া গ্রামের জমিদার বাড়ির রায়বাবুদের পরিবার আজও বর্ধিষ্ণু পরিবার হিসাবেই পরিচিত। এ বাড়ির দুর্গাপুজোও খুব ঐতিহ্যশালী। এ বছর জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো আনুমানিক ২২২ তম বর্ষে পদার্পণ করবে। পুজোয় আগের মতো জৌলুস না থাকলেও জনপ্রিয়তা অটুট। 

রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু ছিলেন জাড়া জমিদার রাজীবলোচন রায়। তাই জাড়া গ্রামে যাতায়াত ছিল রামমোহনের। জাড়া জমিদার বাড়ির সঙ্গে সখ্য ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরও। জমিদার পরিবারের আমন্ত্রণে জাড়া স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিদ্যাসাগর। সেই সময়ে জমিদার বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেওছিলেন বিদ্যাসাগর, এমনই দাবি বর্তমান জাড়া জমিদার বাড়ির পরিবারের সদস্যদের।

আবার এই জাড়া জমিদার বাড়িতেই মহানায়ক উত্তমকুমার তাঁর 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবির শুটিং করেছিলেন। 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি'তে একটি গান ছিল-- 'কী করে বললি জগা জাড়ার গোলক বৃন্দাবন, যেখানে বামুন রাজা চাষি প্রজা, চারিদিকে তার বাঁশের বন।' জাড়ার জমিদার বাড়িতেও কবিগানের আসর বসত। বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা নাকি এই গান বেঁধেছিলেন। এই গানই পরে 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবিতেও তুলে ধরা হল।

নবজাগরণের ব্যক্তিত্ব থেকে মহানায়কের ছবির এ হেন বিচিত্র স্মৃতির অনুষঙ্গ জড়িত এই জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোও বরাবর মহাসমারোহেই হত। এ বাড়িতে দুর্গাপুজোর পাশাপাশি কালী, বিষ্ণু, শিব-সহ একাধিক দেবদেবীর আরাধনা হয়। মন্দির আছে। তিন বেলা ভোগ চড়িয়ে নিত্যসেবাও হয়। 

 

১১৫৫ বঙ্গাব্দে (১৭৪৮ সালে) জাড়া জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামগোপাল রায়। পরবর্তী সময়ে তাঁর ছেলে রাজা রাজীবলোচন রায় বর্ধমান রাজার থেকে 'রাজা' উপাধি পান। এর পর থেকেই এই জমিদারি আরও বিস্তার লাভ করে। তিনিই এই বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। 

সেই সময়ে পুজোয় বহু মনীষী আমন্ত্রিত হয়ে আসতেন বলে জানান জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা। পুজোর সময় কবিগানের আসর তো বসতই। আসর বসত যাত্রাপালারও। পাশাপাশি লঙ্গরখানা চলত পুজোর ৬-৭ দিন ধরে। ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ ভিড় জমাতেন এই পুজোয়। চলত নরনারায়ণ সেবা। 

বর্তমানে জমিদারিত্ব নেই, তবে রয়ে গিয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাসাদ, যদিও তা এখন ভগ্নপ্রায়, আগাছায় ঢাকা। জমিদার বাড়ির ২১টি পরিবার এখনও বসবাস করেন সেখানে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই কর্মসূত্রে ভিন রাজ্য বা ভিন দেশে। যদিও পুজোর সময় অনেকেই হাজির হন। 

বাইরে থেকে প্রতিমা আনা হয় না। জমিদার বাড়ির দালানবাড়িতেই বংশপরম্পরার মৃৎশিল্পীদের দিয়ে একই ধরনে প্রতিমা তৈরি করানো হয়। বৈষ্ণব মতে জমিদার বাড়িতে দুর্গা পুজো হওয়ায় কোনও বলি হয় না। আগে রুপোর পালকিতে করে গ্রামের একটি পুকুরে শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নান করোনা হত। এখন নবপত্রিকা শোভাযাত্রা করেই নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সকল সদস্য মিলে বিষাদের সুরে গান গেয়ে মাকে বিসর্জনের দেন গ্রামের পুকুরেই। পুজোর দিনগুলিতে মায়ের জন্য ভোগ রান্না হয়, নাড়ু তৈরি হয়। এ কাজে অগ্রাধিকার পরিবারের মহিলাদেরই। 

আজও দূরদূরান্তের গ্রামের বহু মানুষ ভিড় জমান পুজোর ক'দিন। তাঁদের জন্য খিচুড়ি প্রসাদের আয়োজন থাকে। এ ছাড়াও নরনারায়ণ সেবারও ব্যবস্থা হয়। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link