Durga Puja 2021: জল থেকে উঠে শ্রীমন্তের হাতটি ধরলেন `ছেলে-ধরা দুর্গা`!
দলিল ঘেঁটে যা জানা গেছে, এ পুজোর বয়স প্রায় ২০০বছর। যদিও বর্গীর আমল থেকেই এটি চলে আসছে বলেই জানেন এলাকার মানুষ। দুই হাতের অভয়ারূপী দেবী দুর্গা হলেও, লোকের মুখে অবশ্য তা 'ছেলে-ধরা দুর্গা' বলেই পরিচিতি।
মা দুর্গা এখানে দুই হাতের-- এক হাতে ধরে আছেন এক বালককে। এই রকম পুজো এই রাজ্যে আরও একটি আছে, বনগাঁ অঞ্চলে। বৈঁচির এই পুজো শুরু করেন ব্যবসায়ী বিনোদ দাঁ। শোনা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষ চাঁদ সওদাগরের আমল থেকেই ব্যবসা করে আসছেন।
বিনোদ দাঁ তাঁর পরিবারের ব্যবসার হাল ধরেন এবং পুজোর সূচনা তিনিই করেন। পুজোর পিছনে দারুণ এক গল্প আছে। জানা যায়, বাণিজ্যে যাওয়ার পথে চাঁদ সওদাগর নদীতে মায়ের এক বিশেষ রূপ দেখেছিলেন। সেটি বাণিজ্যস্থলে পৌঁছে সেই দেশের রাজাকে বলেন তিনি। রাজা তা দেখতে চান। কিন্তু চাঁদ সওদাগর সেই রূপ রাজাকে দেখানতে পারেন না। তখন রেগে গিয়ে ওই রাজা চাঁদ সওদাগরকে বন্দি করেন তাঁর বন্দিশালায়। এরপর তাঁর পুত্র শ্রীমন্ত সওদাগর বাবাকে ওই রাজার বন্দিশালা থেকে উদ্ধার করতে রওনা হন। তিনিও যাত্রাপথে এই রূপেরই দেবীমূর্তি দর্শন করেন। তিনিও রাজাকে জানান, বাবা যে দেবীরূপের কথা বলেছিলেন, সেটি যথার্থ, কারণ তিনিও একই রূপের দেবীকে সমুদ্রে দেখেছেন। এবার রাজা শ্রীমন্তকে সঙ্গে নিয়ে সেই দেবীকে দেখতে আসেন। কিন্তু সেখানে শ্রীমন্ত রাজাকে সেই দেবী মূর্তি দেখতে পারেন না। রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে শ্রীমন্তকে জলে নিক্ষেপ করেন। আর তখনই দেবী স্বয়ং জল হতে উঠে শ্রীমন্তের হাত ধরে তাঁকে রক্ষা করেন। তা দেখে চাঁদকে মুক্তি দেন রাজা। বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে পরবর্তীকালে এই দেবীরূপই মূর্তি-আকারে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমন্ত সওদাগর। বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন বলে এই মূর্তির নাম হয় 'অভয়ারূপী দেবী'। ঘটনাচক্রে সেই মূর্তিই আজও পূজিত হচ্ছে বৈচির দাঁ পরিবারে।
দাঁ পরিবারের সেই জৌলুস আজ আর নেই। ট্রাস্টির দ্বারা পরিচালিত হয় পুজো। বিনোদ দাঁর সময়েই দুর্ভিক্ষকালে এই পুজো একবার বন্ধ হতে বসেছিল। সেই সময় দেবী স্বপ্ন দিয়ে জানান, তাকে থোড় ও কাশীর চিনি দিয়ে পুজো করলেই হবে। সেই ধারা আজও বলবৎ আছে। অষ্টমীর পুজোর নৈবেদ্যে আজও থোড় ও কাশীর চিনিই দেওয়া হয়।
এই পরিবারের প্রায় সকলেই এখন বাইরে থাকেন। তবে পুজোর সময়ে সকলেই হাজির হন বাড়িতে। এলাকার মানুষের কাছে, অভয়ারূপী এই দুর্গা মূর্তি জাগ্রত হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত। বংশপরম্পরায় দেবীমূর্তি তৈরি করে চলেছেন পোটোর বংশধরেরা। করোনা আবহেও নিয়ম মেনেই পুজো হয় দাঁ পরিবারে।