দেশের প্রথম মহিলা ক্যাপ্টেন, পুরুষ-শাসিত সমুদ্রে তাঁর নামে ষড়যন্ত্র!
নিজস্ব প্রতিবেদন: রূপসীর নাম মারওয়া এলএলসলেহদার। ইনি মিশরের প্রথম মহিলা জাহাজ ক্যাপ্টেন।
এমন এক পেশা যেখানে ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের রাজ। মহিলারা পারবেন না। তাই কোনও জায়গাই ছিল না তাঁদের। কারণ, এটি নাকি খুব কঠিন কাজ। মেয়েদের পক্ষে সম্ভব নয়। যখন গর্জে উঠবে সমুদ্র, কয়েকশো ফুট উঁচু ঢেউ যখন চোখ রাঙাবে, তখন নাকি ভয় পেতে পারেন মহিলারা। তার উপর পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হবে।
আর এই সব মিথের উপর ভর করে এতদিন যাবৎ সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনায় ছিলেন শুধুমাত্রই পুরুষরা। কিন্তু এখন সেই দেশে জাহাজের হাল ধরেছেন ২৯ বছরের মেয়েটি।
২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় তার কেরিয়ার। কিন্তু এখন কেন তাঁর নাম উঠেছে শিরোনামে? কারণ সুয়েজ খালে যখন দীর্ঘদিন ধরে আটকে পড়েছিল জাহাজ। তখন তিনি সেইখানে ওই জাহাজেই কর্মরত ছিলেন।
সেখানে তিনি দায়িত্ব সহকারে জাহাজের সমস্যা সমাধান করছিলেন। সেই যাত্রায় তিনিই ছিলেন ক্যাপ্টেন।
মিশরের প্রথম মহিলা জাহাজের ক্যাপ্টেন মারওয়া ইলেসেলহদার একটি ভুয়ো সংবাদ প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে বলা হয় তিনি শিপিং রুট সুয়েজ খালকে থমকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি।
তিনি বলেন,' আমি খুবই দুঃখিত। আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। কারণ যেহুতু আমি সফল একজন মহিলা। তাও পুরুষদের ঘেরাটোপে'।
'তাই এই খবর প্রচার করে আমার নামে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে অবশ্যই আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই'।
তাঁর কথায়, " লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবার থেকে দূরে সমুদ্রের মধ্যে কাজ করা মেয়েদের মানতে পারে না আমাদের সমাজ'।
'তবে আমি যখন এই কাজটি পছন্দ করি, তাই আমি করছি। আপনাদের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন হবে না,"
তিনি আরও বলেন, "এই ভুয়ো সংবাদ দেশ সহ বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমি এই প্রতিবেদনে বিপক্ষে সরব হয়েছি, কারণ এটি আমার খ্যাতিকে প্রভাবিত করছে"।
প্রসঙ্গত, ঝোড়ো হাওয়ার ধাক্কায় সুয়েজ খালে এক বিশাল কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক রুটে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে জাহাজটি।
ব্যহত হয়েছে জাহাজ চলাচল। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল বিশাল এক পণ্যবাহী জাহাজ আটকে পড়ে সুয়েজে। কয়েকশো জাহাজের জ্যামও হয় ওই রুটে।
জাহাজটি ভূমধ্যসাগরের দিকে যাচ্ছিল। সুয়েজের বালিতে গেঁথে গিয়েছিল জাহাজের তলদেশ। কোনও ভাবেই সেটিকে নড়ানো যাচ্ছিল না।
পানামার The Ever Given নামের জাহাজটি আটকে যাওয়ায় সেদিন থেকেই যানজট সৃষ্টি হয় ব্যস্ত ক্যানালে। দ্রুত জাহাজটিকে সরানোর কাজে নেমে পড়ছিল মিশর (Egypt) সরকার।
নামানো হয়েছিল বেশ কয়েকটি টাগ-বোট। সাতদিনের চেষ্টায় অবশেষে মুক্ত হয় দৈত্যাকার জাহাজ।
উল্লেখ্য, মারওয়া এলএলসলেহদারের ছোট থেকেই সমুদ্র ভাল লাগত, সাঁতার কাটা ছিল তাঁর মন ভালো রাখার রসদ।
স্কুল পাস করে ২০১৩ সালে আরব অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
তিনিই ছিলেন এই বিভাগের প্রথম মহিলা। এর পর কারডিফ মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছেলেদের মাঝে একমাত্র মহিলা ছিলেন তিনি। পুরুষদের ছাপিয়ে উঠতে না না সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাঁকে। হার মানেন নি। ২০১৫ সালে তিনি মিশরের প্রথম মহিলা জাহাজ ক্যাপ্টেন হন। সে সময় সংবাদের শিরোনামে আসেন তিনি।