শিস্ দিয়েই নাম ডাকে ভারতের এই জনজাতি

Mon, 24 Sep 2018-8:11 pm,

উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম রাজ্য মেঘালয়ের কোলে অবস্থিত কোংথোং গ্রাম। জানেন এখানকার জনজাতি শিস্ দিয়ে কথা বলেন! নানা সুরে শিস্ দিয়ে পাখিদের ডাক নকল করি, তাই না! কিন্তু একটা গোটা জনজাতি শিস্ দিয়ে একে অপরের নাম ডাকে, জানেন কি?

কথায় বলে, 'নামের আমি,  নামের তুমি, নাম দিয়ে যায় চেনা' , কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই নামের তেমন কোনও গুরুত্ব কিন্তু এখানকার মানুষদের কাছে নেই, কারণ বিভিন্ন সুরই তাদের নাম। কোংথোং এবং আশেপাশের এলাকার মানুষেরা তাঁদের সন্তানের জন্য এক একটি বিশেষ বিশেষ সুর তৈরি করে শিস্ দিয়ে ডাকেন। সারা জীবন ধরে সেই সুররূপী নাম ধরেই তাদের ডাকা হয়।

তবে বহির্জগতে ব্যবহারের জন্য নাম যে তাদের নেই, তা নয়। তবে তার ব্যবহার খুবই কম। শুধু নামের ক্ষেত্রেই নয়, মায়ের সন্তানকে খেতে ডাকা, বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে খেলা বা ঝগড়ার সময়, সব ক্ষেত্রেই তারা একটি বিশেষ সুর ব্যবহার করে।

তিন সন্তানের মা পিনডাপ্লিন স্যাবোংয়ের মতে, "সন্তানদের জন্য তৈরি এই সুরগুলো আমাদের হৃদয়ের গহীন থেকে তৈরি করা'। তবে শুধুই কি অন্ধ ভালোবাসা! না, তা একদম‌ই নয়। অভিভাবকেরা কোন‌ও কারণে রেগে গেলে তখন আর সুরময় নাম নয়, অক্ষর দিয়ে নাম ধরেই ডাকেন।

 ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ এই গ্রামে এখনও তেমন ভাবে পৌঁছায়নি। দিনের অধিকাংশ সময় চলে যায় অরণ্য থেকে রসদ খুঁজে নিতে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন ভাবে স্পর্শ করেনি বলেই হয়তো এরা প্রকৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দূর দূরান্ত থেকে সন্তানদের ডেকে নিতে তাঁরা প্রায় ৩০ সেকেন্ডের সুর ব্যবহার করেন। যা একান্ত ভাবেই প্রকৃতির দ্বারাই অনুপ্রাণিত।

এই সমাজের অন্যতম এক অধিবাসী খংসিত এর কথায়, "আমরা আধুনিকতা থেকে বহু দূরে রয়েছি। অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে বাস করি। এখানে ঈশ্বরের তৈরি প্রত্যেকটি সৃষ্টি অতি যত্নে আমাদের ঘিরে রেখেছে।

খংসিতের দাবি অনুযায়ী এই সমাজের আর একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা হল এই সমাজ এখনও মাতৃনির্ভর। স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা পুরুষদের বদলে নারীদের নামে করা হয় এবং বিয়ের পর পুরুষেরা নারীদের নাম‌ই গ্রহণ করে এবং পরিবারের নারীকে তারা দেবীর মতোই সম্মান করে।

কিন্তু আধুনিকতার ঝাঁ চকচকে জৌলুস এখন এই প্রত্যন্ত গ্রামেও থাবা বসাচ্ছে। এলাকার বর্তমান প্রজন্মের সুর তৈরি করার ধৈর্য্য নেই বরং দূর থেকে ডাকতে হলে সুর তৈরি না করে মোবাইলের ব্যবহার‌ই বেশি করে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link