Haldia Remarriage: ভালবেসে বিয়ের ৩ বছরেই বৈধব্য, নিজে হাতে বৌমার আবার বিয়ে দিলেন সন্তানহারা শ্বশুর
নিজস্ব প্রতিবেদন : অকাল মৃত্যু কেড়েছে সন্তানকে। কিন্তু সেই শোক কাটিয়ে উঠে কন্যাসম বিধবা বৌমার আবার বিয়ে দিলেন শ্বশুরমশাই। হলদিয়ার সুতাহাটার প্রত্যন্ত গ্রামের এই ঘটনা নজর কেড়েছে সবার।
হলদিয়ার সুতাহাটার বাসিন্দা অর্ণব ঘাঁটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল চৈতন্যপুরের বরদার শুভ্রা মালাকারের। ২০১৭ সালে যুগলের চারহাত এক হয়। ভালবেসেই অর্ণবকে বিয়ে করেছিলেন শুভ্রা।
নতুন জীবনের পথে পা বাড়িয়েছিলেন অর্ণবের হাত ধরে। সুখেই দিন কাটছিল নব দম্পতির। বিয়ের বছরখানেকের পরই ছেলের মুখও দেখেন দম্পতি। বাবা-মা হন অর্ণব ও শুভ্রা। কিন্তু হঠাৎই সুখের সংসারে ছন্দপতন ঘটে।
২০২০-র অক্টোবরে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অর্ণবের। অকাল বৈধব্য নেমে আসে শুভ্রার জীবনে। বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই বাবাকে হারায় শুভ্রা-অর্ণবের একরত্তি ছেলে। একমাত্র সন্তান অর্ণবকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন নকুল ঘাঁটি ও নন্দিতা ঘাঁটিও।
সেইসময় নিজের নিদারুণ কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করেও সন্তানহারা বাবা-মাকে সবদিক থেকে আগলে রাখেন বৌমা শুভ্রা। বৌমার মুখ চেয়েই আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পান শুভ্রার শ্বশুর-শাশুড়ি। বৌমার মধ্যে নিজের ছেলেকেই যেন খুঁজে পান ঘাঁটি দম্পতি।
কিন্তু বৌমার অকাল বৈধব্য চিন্তায় ফেলে বিজ্ঞান কর্মী নকুল ঘাঁটিকে। তখনই মনস্থির করে ফেলেন যে, বৌমার আবার বিয়ে দেবেন। বিধবা পুত্রবধূর আবার বিয়ে দেবেন শ্বশুর! শুনে অনেকেই ভুরু কুঁচকেছিল...
কিন্তু সেসবকে আমল দেননি নকুল ঘাঁটি। সমাজের 'চোখ'কে পাত্তা না দিয়েই সন্তানশোক সামলে বৌমার আবার বিয়ের আয়োজন করতে শুরু করেন তিনি। আবার বিয়ের জন্য অনেক কষ্টে রাজি করান বৌমা শুভ্রাকেও।
অবশেষে ২০২২-এর ৩১ জানুয়ারি নিজের বাড়িতেই হলদিয়ার রামগোপালচকের বাসিন্দা বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত মধুসূদন সাঁতরার সঙ্গে বাঙালি নিয়ম মেনে বিয়ে দেন বৌমা শুভ্রার।
ছিমছাম করে নয়, বেশ ধুমধাম করেই বৌমার বিয়ে দেন শ্বশুর নকুল ঘাঁটি। প্যান্ডেল সাজানো হয়। বাড়িতে আলো লাগানো হয়। প্রায় ১৫০-২০০ জন অতিথিকে আপ্যায়নের বন্দোবস্তও করা হয়।
শোক কাটিয়ে স্বামীহারা মেয়েকে ফের নতুন জীবনে পা দিতে দেখে খুশি শুভ্রার বাবাও। শ্বশুর বিজ্ঞানকর্মী নকুল ঘাঁটির এই মানবিক উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন, প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সবাই। খুশি নব দম্পতিও।