টিকা ও বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের ঠেলায় বিপন্ন ৪৪ কোটি বছরের প্রাচীন প্রজাতি!
এই প্রাণীটিকে দেখতে অনেকটা ঘোরার খুরের মতো, জাতে নাকি কাঁকড়া। তাই এটিকে বলা হয় নাল কাঁকড়া (Horseshoe crab)। যদিও জীববিজ্ঞানীদের মতে, এটিকে দেখতে কাঁকড়ার মতো দেখতে হলেও এটি আসলে একটি সামুদ্রিক কাঁকড়াবিছে। এই নাল কাঁকড়ার রক্তের রং হালকা নীল।
নাল কাঁকড়া (Horseshoe crab) কপার-যুক্ত এক রকম হিমোসায়ানিনের সাহায্যে অক্সিজেন পরিবহন করে। এই কপার-যুক্ত হিমোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে নাল কাঁকড়ার রক্তের রং নীল দেখায়। শ্বেত রক্তকণিকার পরিবর্তে এদের রক্তে রয়েছে ‘অ্যামিবোসাইট’ নামের বিশেষ কোষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই রক্তে উপস্থিত যে কোনও জীবাণুর মোকাবেলা করতে সক্ষম।
এই নীল রক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। এই নীল রক্তের বিশেষ জীবাণুনাশক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই পরীক্ষাগারে বিভিন্ন ওষুধ, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরখ করে দেখার ক্ষেত্রে নাল কাঁকড়ার (Horseshoe crab) নীল রক্ত অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। আর সে জন্যই প্রতি বছর হাজার হাজার নাল কাঁকড়া ধরে তাদের থেকে নীল রক্ত রক্ত সংগ্রহ করে বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা।
জীববিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৪৪ কোটি বছর ধরে এই নাল কাঁকড়া (Horseshoe crab) পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। সে জন্য অনেক বিজ্ঞানী এটিকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলে থাকেন। নাল কাঁকড়া (Horseshoe crab) শুধুমাত্র প্রজননকালে (জন্মের অন্তত ১০ বছর পর) সমুদ্রের পাড়ে চলে আসে। এই সময়ই এদের থেকে নীল রক্ত সংগ্রহ করে আবার এগুলিকে ছেড়ে দেন বিজ্ঞানীরা।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই নীল রক্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশেরও বেশি নাল কাঁকড়ার (Horseshoe crab) মৃত্যু হয়। বিভিন্ন ওষুধ, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরখ করতে গিয়ে আজ বিপন্ন ৪৪ কোটি বছরের প্রাচীন এই প্রজাতি! তাই ইতিমধ্যেই এই নীল রক্ত কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করে এই প্রাণীগুলিকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। নাল কাঁকড়ার থেকে এ ভাবে নীল রক্ত সংগ্রহ করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে একাধিক দেশে।