Happy Birthday Gulzar: `আমি ছিলাম পঞ্চমের সুরের ডাস্টবিন`, হাসতে হাসতে বলেন কিংবদন্তি
নিজস্ব প্রতিবেদন: বুধবার সম্পুরণ সিং কালরার (Sampooran Singh Kalra) ৮৭তম জন্মদিন। ভারতীয় সাহিত্যে ও সিনেমার জগতে যিনি গুলজার(gulzar) নামে খ্যাত। তাঁর লেখা বই 'পান্তাভাতে'র শুরুতেই তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন,'আমি আসলে একজন বাঙালি যে কিনা বাই চান্স জন্মে গেছি একটা পঞ্জাবি পরিবারে। রবীন্দ্রনাথ আমায়, বা আমি রবি ঠাকুরকে পাকড়েছিলাম সেই ক্লাস এইটে। আর তারপর থেকে বাংলা আমার ওপর, না কি আমি বাংলার ওপর ভর করলাম তা ঠিক বলতে পারব না।'
ক্লাস টেন পাস করার আগেই রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র পড়ে ফেলেছিলেন গুলজার (Gulzar)। স্কুলে বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলতেন তিনি আর সেখান থেকেই বাংলা শেখার প্রতি লোভ জন্মায় তাঁর। ছোটবেলাতেই ঠিক করে ফেলেছিলেন তিনি সাহিত্যিক হবেন।
কলেজে পড়তে পড়তেই বম্বে চলে এসেছিলেন গুলজার (Gulzar)। বম্বে এসেই যোগ দিয়েছিলেন প্রগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানকার লোকজন, চর্চা, তর্কের উন্মাদনা তাঁর কাছে ছিল নেশার মতো। তবে পেট চালানোর জন্য মোটর গ্যারেজে কাজ করতেন তিনি। এই সময়ই বাংলা কবিতার প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হন তিনি। সময় পেলেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা অনুবাদ করতেন তিনি। এরই মাঝে পরিচালক বিমল রায়ের সহকারী হিসাবে শুরু করেন তাঁর সিনেম্যাটিক জার্নি।
'দীপ জ্বেলে যাই' ও 'সাত পাকে বাঁধা' ছবিতে সুচিত্রা সেনকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন গুলজার। এরপর প্রযোজক সোহনলাল সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি ছবি তৈরি করার কথা ভাবেন। সেই ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে সুচিত্রা সেনের বালিগঞ্জের বাড়িতে যান তাঁরা। চিত্রনাট্যে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন আনতে বলায় মেজাজ হারান গুলজার, ছবির করার পরিকল্পনাও বাতিল করে দেন।
সুচিত্রা সেনকে(Suchitra Sen) নিয়ে ছবি করার ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করে রেখেছিলেন গুলজার। এরপর একটা সুযোগ আসায় আঁধির গল্প শোনান পরিচালক। গল্প শুনে রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এবার ছবিতে শুধুমাত্র একটাই মহিলা চরিত্র রেখেছিলেন গুলজার। শ্যুটিংয়ের প্রথমদিনই গুলজারকে স্যর বলে ডাকেন মিসেস সেন। গুলজার বলেছিলেন আপনি আমার থেকে বড় আমাকে স্যরকেন বলছেন। তার উত্তরে সুচিত্রা বলেছিলেন আপনি আমার পরিচালক, তাই স্যর। তখন গুলজার বলেন, আপনি আমায় স্যর বললে আমিও আপনাকে স্যর বলেই ডাকব। এরপর 'আঁধি' ছবির গোটা ইউনিটই সুচিত্রা সেনকে স্যর বলে ডাকত।
বাঙালির প্রতি বরাবরই একটা টান অনুভব করেন গুলজার। সেখান থেকেই বাঙালি অভিনেত্রী রাখীর (Rakhee Gulzar) প্রেমে পড়েন তিনি। গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শোনা যায়, 'আঁধি'র শ্যুট করতে কাশ্মীরে গিয়েই তাঁদের ঝগড়ার সূত্রপাত আর সেখান থেকেই ডিভোর্স।
বিমল রায়ের সঙ্গে ছবির ব্যাপারে কথা বলতে আসতেন শচীন দেববর্মন, সেখানেই ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রাহুল দেব বর্মন অর্থাৎ পঞ্চম এবং গুলজারের মধ্য়ে। নিজের প্রথম ছবিতে পঞ্চমকে দিয়েই গানের সুর করাবেন মনস্থির করে রেখেছিলেন গুলজার। একদিন রাতে হঠাৎই গুলজারের বাড়ির নিচে গাড়ি নিয়ে এসে হর্ণ বাজাচ্ছেন পঞ্চম। তাঁকে গাড়িতে তুলে বললেন একটা সুর মাথায় এসেছে তাড়াতাড়ি দু লাইন বল, না হলে ভুলে যাব। এভাবে কি গান হয়, বলতেই পঞ্চমের উত্তর ছিল, এটাই তোর প্রথম ছবির গান।এরপর ভোর চারটে অবধি বম্বের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তৈরি হল গুলজারের প্রথম পরিচালিত ছবি পরিচয়ের গান মুসাফির হুঁ ইয়ারো।
গুলজার তাঁর একটি বইতে লিখেছেন,'আমি ছিলাম পঞ্চমের সুরের ডাস্টবিন।ওর যত আশ্চর্য এক্সপেরিমেন্ট ও আমায় দিত।' গুলজার লিখছেন, একদিন দুটো 'ঘ্যানঘ্যেনে' সুর এনে সেই দুটো জুড়ে একটা দারুন সুর বানালেন পঞ্চম। তাঁকে সেই সুরে কথা বসাতে বললেন। তৈরি হল গান। এরপর পঞ্চম (Pancham) তাঁর প্রাণের বন্ধু গুল্লুকে সেই গান তাঁর সিনেমায় যোগ করতে বললেন। কিন্তু ছবিতে জায়গা নেই বলতেই পঞ্চমের করুণ আর্তি,'তুই না নিলে এই গানটা কেউ নেবে না, কেউ বুঝবে না'। তাঁকে ফেরাতে পারেননি গুলজার,সেই গান 'ছোটিসি কাহানি সে' যোগ করলেন 'ইজাজত' ছবির টাইটেলকার্ডে।
পঞ্চমের পাশাপাশি আশা ভোঁসলের (Asha Bhonsle) সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল গুলজারের। 'ইজাজত' ছবির একটি গান লিখে তা সুর করার জন্য পঞ্চমের কাছে নিয়ে যান তিনি। গানটি পড়ে আর.ডি বলেছিলেন,'গুল্লু, তুই তো কাল আমায় খবরের কাগজের হেডলাইনস নিয়ে এসে বলবি, এটার সুর করে দে।' এই কথা শুনে চুপ করে বসেছিলেন গুলজার, তাঁকে দেখে পঞ্চম বুঝতেই পারেন গুলজার কিছু বদলাবেন না। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন আশা। গানটি তুলে সুর করে পড়তে শুরু করেন তিনি। সেটা শুনে খানিক রাগে গজগজ করতে করতেই নাকি তৈরি করে ফেললেন 'মেরা কুছ সামান' গানটি। বাকিটা ইতিহাস।
শিবেন্দ্রর ছবির জন্য একটি গানে সুর করেছিলেন এ আর রহমান (A.R.Rahman), সেই গানের কথা লেখেন গুলজার। প্রথম সাক্ষাতেই রহমানকে দেখে গুলজার বলেছিলেন, এ যেন কৃষ্ণের আরেক রূপ। গুলজার ভুলে গেলেও এ আর .রহমান তাঁকে মনে করান এটা তাঁদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। এর আগে 'সদমা' ছবির গান তৈরির সময় ইল্লাইয়ারাজার স্টুডিওতে দেখা হয়েছিল তাঁদের।
গীতিকার হিসাবে বারবারই গুলজারের সঙ্গে তুলনা উঠে আসে জাভেদ আখতারের। গুলজার প্রসঙ্গে জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) একবার বলেছিলেন, গুলজারের প্রতি তাঁর অসীম শ্রদ্ধা। কোনও গানের কথা শুনেই বোঝা যায়, এটা তাঁর লেখা। কারণ তাঁর মতো কবি বলিউডে প্রায় নেই।
মেয়ে মেঘনা গুলজারকে(Meghna Gulzar) প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন গুলজার। মেঘনাও একজন পরিচালক, মেঘনার সব ছবিতেই গানের কথা লেখেন তাঁর বাবা গুলজার। এক সাক্ষাৎকারে মেঘনা জানান, তাঁর প্রথম ছবির গান 'ফিলহাল'এর টাইটেল ট্র্যাক লিখেছিলেন তাঁর বাবা, সেটাই তাঁর সবচেয়ে পছন্দের গান।