EXPLAINED | Cyclone Dana Update: ডানার ঝাপটায় হবে সব তছনছ...! জানেন কেন বারবার এই ঘূর্ণিঝড় হয়?
উত্তর-পশ্চিমে ঘনীভূত হয়েছে সাইক্লোন ডানা। পারাদ্বীপের দিক থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দূরে আছে। ধামরা থেকে ৫২০ কিমি দূরে আছে। সাগর দ্বীপ থেকে ৫৭০ কিমি দূরে আছে। আজ মধ্যরাত থেকে কাল সকালের মধ্যে এর এগিয়ে আসার গতিবেগ আরও বাড়বে। ভিতরকণিকা ও ধামরায় ল্যান্ডফল। ভারতীয় মৌসম ভবনের তরফে মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র এই তথ্য দিয়েছেন। তবে এই প্রতিবেদনে জেনে নিন কেন কেন এই ঘূর্ণিঝড় হয়?
ঘূর্ণিঝড়ে লঘুচাপ একটা বিরাট ফ্য়াক্টর। কী এই লঘুচাপ?আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় কোনও জায়গায় বায়ুর চাপ কম থাকাই হল লঘুচাপ। দিনের বেলা সূর্যের তাপে জলের চেয়ে মাটি অনেক বেশি উত্তপ্ত থাকে। জলে যে পরিমাণ সূর্যের তাপ পড়ে, তার বেশির ভাগ প্রতিফলিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। মাটি এত তাপ প্রতিফলিত করতে পারে না। ফলে উষ্ণ হয়ে ওঠে। উষ্ণ মাটিই আবার উপরে থাকা বায়ুর তাপ বাড়িয়ে দেয়। তাপ বাড়লে বায়ুর অণুগুলো একে অন্যের চেয়ে তুলনামূলক দূরে সরে যায়। অর্থাৎ বাতাসের ঘণত্ব কমে। ফলে বাতাস হয়ে যায় হালকা। এই গরম ও হালকা বায়ু উপরের দিকে উঠে গেলে নীচের অংশ ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে ওই জায়গায় তৈরি হয় লঘুচাপ।
সমুদ্রের উপরের অংশে আবার উল্টো ঘটনা ঘটে। কারণ সমুদ্রের উপরের বাতাস যেহেতু তুলনামূলক ঠান্ডা, ফলে এর অণুগুলো কাছাকাছিই অবস্থান করে। বায়ুর ঘনত্ব যায় বেড়ে। এই ভারী বায়ু তখন নেমে আসে নীচের দিকে। ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। লঘুচাপ অঞ্চলের হালকা বাতাস উপরের দিকে উঠে গেল। অন্যদিকে আশপাশের উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু ছুটে আসতে শুরু করল এই লঘুচাপ অঞ্চলের দিকে। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়। রাতে উল্টো ঘটনা ঘটে। জলের তাপধারণের ক্ষমতা বেশি। ফলে রাতে মাটি দ্রুত সব তাপ বিকীরণ করে দেওয়ার পরও আশপাশের জল সেই তাপ ধরে রাখে। ফলে রাতে মাটি হয়ে যায় তুলনামূলক ঠান্ডা। আর সমুদ্রের জল হয়ে যায় তুলনামূলক গরম। এর ফলে রাতে সমুদ্রের উপর লঘুচাপ তৈরি হয়। আর মাটির উপরেও উচ্চচাপের বায়ু সেদিকে ছুটতে থাকে। এর ফলেও তৈরি হয় ঘূর্ণি।
সাধারণত সামুদ্রিক কেন্দ্রের চারপাশের বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ১৭ থেকে ৩০ কিলোমিটার হয়, তাহলে তাকে বলা যেতে পারে লঘুচাপ। আর এই লঘুচাপের শক্তি বেড়ে গিয়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার হয়ে যায়, তখন সেটা পরিণত হয় যায় নিম্নচাপে। লঘুচাপের আরও ভয়ংকর রূপকেই বলা হয় নিম্নচাপ। নিম্নচাপ কিন্তু এক জায়গায় স্থির থাকে না। পার্শ্ববর্তী কোনও অঞ্চলের উচ্চচাপের তুলনায় তার শক্তি যদি বেশি হয়, তখন ওই অঞ্চলের দিকে যেতে থাকে। নিম্নচাপ আসলে ঘূর্ণিবায়ুর প্রবাহ। তাই এটি যেদিকে স্থির হবে বা যেখানে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করবে, সেখানে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। যেখানে শুধুই সমুদ্র বা শুধু স্থল, সেসব অঞ্চলে এরকম সমস্যা হয় না।
মেঘেরও বড় ভূমিকা রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ট্রপোস্ফিয়ার বা বায়ুমণ্ডলের নীচের দিকের স্তরের মেঘই মূলত বৃষ্টির জন্য দায়ী। কিছুটা উপরের দিকের মেঘ বৃষ্টিতে সেভাবে ভূমিকা পালন করে না। নদী-সমুদ্র ও জলাধারের জল বাষ্পীভূত হয়ে মেঘের তৈরি। এখান থেকেই বৃষ্টি নামে। মেঘ কখন কোথায় থাকবে, তা মূলত নির্ভর করে মেঘের ঘনত্ব এবং বাতাসের গতিবেগের উপর। ঘনত্ব বেশি হলেই সাধারণত ভারী বৃষ্টি হয়। বাতাসের গতিবেগ হালকা মেঘকে সহজে ভাসাতে পারলেও, ভারী মেঘকে খুব একটা দূরে বাতাস বয়ে নিয়ে যেতে পারে না। ফলে ভারী আরও বৃষ্টি হয়। আবার আর্দ্রতা বেশি হলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মেঘ এবং বায়ুচাপের উপরই মূলত নির্ভর করে কোনও অঞ্চলের তাপমাত্রা কেমন হবে! আর্দ্রতা কেমন হবে ইত্যাদি। এছাড়াও আরও নানা বিষয় আছে। কোনও অঞ্চলে সবুজের পরিমাণ, সে অঞ্চলের পাহাড় আছে কি না, এ রকম নানা কিছু।