Dilip Kumar Death: পছন্দ ছিল না `ট্র্যাজেডি কিং` নাম, ফিরে দেখা দিলীপ কুমারের বর্ণময় অভিনয় জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদন: ট্র্যাজিক হিরো শেষপর্যন্ত বলিউডে ট্র্যাজেডি ঘটিয়ে চিরবিদায় নিলেন। দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয় জীবনে ভারতীয় সিনেমায় আলাদা যুগের সৃষ্টি করেছিলেন দিলীপ কুমার। ব্যবসায়ী আর হয়ে ওঠা হল না। মুম্বইতে এসে হলেন নায়ক। ছবিতে দেখা দিলীপ কুমারের জীবনের উত্থানপতন।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের পেশোয়ারে (বর্তমানে পাকিস্তান) ১৯২২ সালের ১১ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। মহম্মদ ইউসুফ খান নাম পাল্টে দিলীপ কুমার করতে হয়েছিল। যদিও ভারতীয় সিনেমার প্রথম খান প্রকৃতপক্ষে তিনিই ছিলেন।
পেশোয়ারে ফলবিক্রেতা বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে গৃহত্যাগ করে মুম্বই পাড়ি দেন দিলীপ। পুণেতে নিজের ক্যান্টিন খুলে স্যান্ডউইচ বেচতেন। তখনকার দিনে ৫ হাজার টাকা সেভিংস করতে পেরেছিলেন দিলীপ।
জানা যায়, ১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেতেন দিলীপ কুমার। দক্ষ অভিনয়ের জন্য পাকিস্তানের থেকে পুরস্কার পাওয়ায় হুমকি পেয়েছিলেন দিলীপ কুমার। অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায় তাই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
৪৪ বছর বয়সে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। যদিও অভিনয় জীবনে বহু নায়িকাদের প্রেমেও পড়েছেন তিনি। কামিনী কৌশল, মধুবালার সঙ্গে প্রেম গড়িয়েছিল।
আটের দশকের গোড়ায় দাম্পত্যে দুঃসময় এসেছিল। সায়রা বানুকে ছেড়ে দিয়ে পাক অভিনেত্রী আসমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দিলীপ কুমার। জীবনের এই অধ্যায় অবশ্য ভুলে যেতে চান সাইরাও। ভুলের আক্ষেপ করেন দিলীপও।
দিলীপের শেষদিন পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে আগলে রেখেছিলেন সাইরা। অভিনয় ছেড়ে নিজের 'কোহিনূর'এর দেখভালের দায়িত্ব নেন তিনি।
প্রায় ছয় দশক ধরে বিস্তৃত কেরিয়ারে দিলীপকুমার অভিনয় করেছেন ৬৫টির বেশি ছবিতে। ‘দেবদাস’, ‘কোহিনুর’, ‘মধুমতী’, ‘মুঘলে আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘শক্তি’ , ‘মসান’, ‘ক্রান্তি’, ‘সওদাগর’-সহ অসংখ্য ছবির নায়ক হয়ে গেলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’।
যদিও ১৯৬০তে কালজয়ী সিনেমা 'মুঘলে আজম' এ প্রিন্স সালিমের চরিত্রই তাঁর সেরা ও সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে মনে করেন সকলে।
কুস্তি খেলার বড় ভক্ত ছিলেন দিলীপ কুমার। সুযোগ পেয়েছিলেন হলিউডেও। 'লরেন্স অফ আরবিয়া' ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযেগ পেলেও তা প্রত্যাখান করেন তিনি। বলেছিলেন, হলিউডে কোনোদিনই আগ্রহ ছিল না তাঁর।
সুঠাম দেহ, কেতাদুরস্ত চেহারা সঙ্গে অভিনয়ের দক্ষতা। তৎকালীন ভারতে প্রথম কোন অভিনেতা সবদিক থেকে সুযোগ্য ছিলেন।
ছবিতে তাঁর চরিত্রের জন্য তাঁকে ট্র্যাজেডি কিং তকমা দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই তকমা পছন্দ করতেন না দিলীপ কুমার।
দিলীপ কুমার বলেছিলেন, ট্র্যাজেডি কিং নাম তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের শান্তিভাব নষ্ট করে। এর জন্য অবশ্য প্রেমিকের বদলে কিছু সাদামাটা চরিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দিলীপ কুমার।
জানা যায়, ১৯৬০ এ যখন মুঘলে আজমের রিলিজ হওয়ার কথা তখন ছবির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন সাইরা বানু।প্রিয় হিরোর ছবির কিছু ঝলকের যদি দেখা মেলে তাই। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রিমিয়ারে যাওয়ার সুযোগ হয় না। সাইরার জীবনে এতদিন বড় আক্ষেপ ছিল এটি।
যদিও পরের বছরেই শাম্মি কাপুরের বিপরীতে জাংলি ছবিতে ডেবিউ হয় সাইরা বানুর। অভিনেত্রীর মানাজিম বানুই সাইরা-দিলীপকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিলেন।
বিয়ের পর বহু বিতর্ক, ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও শেষ বসন্ত পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলেন সাইরা-দিলীপ।
ভারতীয় চলচ্চিত্রকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। আলাদা দর্শকও, আলাদা রুচির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনের ছবিও প্রত্যাখান করেছিলেন শুধুমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অবশেষে যুগের অবসান। বুধবার সকালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মুম্বইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন দিলীপ কুমার।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ মুম্বইয়ের জুহুর কবরস্থানে তেরঙ্গায় জড়িয়ে তাঁকে চিরবিদায় জানানো হয়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেসহ বলিউডের একাধিক তারকা উপস্থিত ছিলেন।