IPL 2022: ছবিতে দেখুন আইপিএল-এর ১৪ বছরের ইতিহাস
সবাইকে চমকে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালস। প্রতিপক্ষ ছিল এমএস ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। প্রথমে ব্যাট করে চেন্নাই সুপার কিংস। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৩ রান করে সিএসকে। সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন সুরেশ রায়না। ২২ রানে ৩ উইকেট নেন ইউসুফ পাঠান। রান তাড়া করতে নেমে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থেকেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ ওভারে গিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। ৩৯ বলে ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ইউসুফ। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ফাইনালে ম্যাচের সেরা ইউসুফ। ম্যান অব দ্য সিরিজ হন শেন ওয়াটসন।
সেই বছর ফাইনালে ডেকান চার্জার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোরের লড়াই হয়েছিল। লো স্কোরিং রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থেকেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। প্রথমে ব্যাট করে ১৪৩ রান করে ডেকান। সর্বোচ্চ ৫৩ রান করে হার্সাল গিবস। ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন অনিল কুম্বলে। রান তাড়া করতে নেমে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ব্যাঙ্গালোর। ১৩৭ রানে শেষ হয় আরসিবির ইনিংস। ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন প্রজ্ঞান ওঝা। ফলে ৬ রানে জিতে দ্বিতীয় আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয় ডেকান।ফাইনাল হারলেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন অনিল কুম্বলে। ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
তৃতীয় আইপিএল-এর ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালে মুম্বইকে ২২ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির সিএসকে। প্রথমে ব্যাট করে ১৬৮ রান করেছিল সিএসকে। সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেছিল সুরেশ রায়না। রান তাড়া করতে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান করতে পেরেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ফাইনালে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন সুরেশ রায়না ও প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার।
২০১১ আইপিএল-এর ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২০৫ রানের বিশাল স্কোর খাড়া করে ধোনির চেন্নাই। মুরলী বিজয় ৫২ বলে ৯৫ ও মাইকেল হাসি ৪৫ বলে ৬৩ রানের ঝোডো় ইনিংস খেলেন। রান তাড়া করতে নেমে পাহাড় প্রমাণ টার্গেটের সামনে চাপে পড়ে যায় আরসিবি। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করে ব্যাঙ্গালোর। ১৬ রানে ৩ উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৫৮ রানে ফাইনাল ম্যাচ জিতে পরপর দুবার আইপিএল জেতার নজির সৃষ্টি করে ধোনির সিএসকে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন মুরলি বিজয় ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন ক্রিস গেইল।
সেই বছর সিএসকে-র সামনে ট্রফি জয়ের হ্যাটট্রিক করার সুযোগ ছিল। তবে ধোনির সেই সাধ পূরণ হয়নি। প্রথমবার ট্রফি জিতেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রথমে ব্যাট করে ১৯০ রান করে সিএসকে। সুরেশ রায়না সর্বোচ্চ ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিল। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে প্রথমেই অধিনায়ক গম্ভীর আউট হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় কেকেআর। যদিও মনবিন্দর সিং বিসলা ও জ্যাক কালিস অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন। বিসলার ৪৮ বলে ৮৯ ও কালিসের ৪৯ বলে ৬৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে চ্যাম্পিয়ন হয় কেকেআর।
ফের একবার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালে চেন্নাইকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করে ১৪৮ রান তোলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ৩২ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন কায়রন পোলার্ড। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সিএসকে। ধোনির একার কাঁধে দলকে টানলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বার করতে পারেননি। ৪৫ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। চেন্নাইয়ের ইনিংস শেষ হয় ৯ উইকেটে ১২৫ রানে। ফলে ২৩ রানে ফাইনাল জিতে যায় মুম্বই। ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন পোলার্ড। ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন শেন ওয়াটসন।
সে বার প্রথম ফাইনালে উঠেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ৩ উইকেটে জিতে শেষ হাসি হেসেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ঋদ্ধিমান সাহার শতরানের পরেও হেরে যায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে প্রীতি জিন্টার দল। প্রথমে ব্যাট করে ১৯৯ রানের বিশাল ইনিংস খাড়া করে পঞ্জাব। ৫৫ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন পাপালি। রান তাড়া করতে নেমে ১৯.৩ ওভারেই ৭ উইকেটে ২০০ রান তুলে নেয় কেকেআর। ৫০ সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস খেলেন মণীশ পাণ্ডে। ২২ বলে ৩৬ রান করেন ইউসুফ পাঠান। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মণীশ পাণ্ডে ও ম্যান অব দ্য সিরিজ হন পঞ্জাবের গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
ফের মুখোমুখি হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২০২ রান করে মুম্বই। দলের হয়ে সিমন্স ৬৮ ও রোহিত শর্মা ৫০, পোলার্ড ও রায়ডু ঝোড়ে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। রান তাড়া করতে ২০ ওভারে ১৬১ রানে থামে চেন্নাই দল। সিএসকের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ডেভন স্মিথ। মুম্বইয়ের সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন ম্যাকলানাঘন। ৪১ রানে ধোনির দলকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের চ্য়াম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার মুম্বই। ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন রোহিত। ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন কেকেআরের আন্দ্রে রাসেল।
২০১৬ সালের আইপিএল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। প্রথমে ব্যাট করে ২০৮ রান করে সানরাইজার্স। ৩৮ বলে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন খোদ ওয়ার্নার। শেষের দিকে ১৫ বলে ৩৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন বেন কাটিং। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে দুরন্ত শুরু করে ক্রিস গেইল ও বিরাট। প্রথম উইকেট ১১৪ রানের পার্টনারশিপ করেন তারা। একটা সময় পর্যন্ত আরসিবির প্রথম ট্রফি জয় সময়ের অপেক্ষা বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু গেইল ৩৮ বলে ৭৬ ও কোহলি ৩৫ বলে ৫৪ রানে আউট হতেই আরসিবির পুরো ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতে ভেঙে যায়। ২০০ রানে শেষ হয় বিরাটদের ইনিংস। ৮ রানে ম্যাচ জিতে ট্রফি ঘরে তোলেন ওয়ার্নার। ফাইনালে ব্যাট হাতে ৩৯ রান ও ৩৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন বেন কাটিং ও ম্যান অব দ্য সিরিজ বিরাট।
২০১৭ সালে আইপিএল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। লো স্কোরিং ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১২৯ রান করে রোহিত শর্মার দল। সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। পুণের হয়ে বল হাতে দুটি করে উইকেট পান উনাদকাট, জাম্পা ও ক্রিস্টিয়ান। ছোট রান তাড়া করতে নেমেও বিপাকে পড়ে যায় স্টিভ স্মিথের পুণে। রাহানে ৪৪ ও স্মিথ ৫০ রানের ইনিংস খেললেও পুণের ইনিংস থামে ১২৮ রানে। মাত্র ১ রানে ম্যাচে জিতে তৃতীয় বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার দল। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন বেন স্টোকস।
২০১৮ সালের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ফাইনালে প্রথম ব্যাট করে ১৭৮ রান করে সানরাইজার্স।দলের হয়ে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৪৭ ও ইউসুফ পাঠান ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। রান তাড়া করতে নেমে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন সিএসকের অজি তারকা শেন ওয়াটসন। ৫৭ বলে ১১৭ রানের ইনিংস খেলে একাই দলকে জয় এনে দেন ওয়াটো। ১৮ ওভার তিন বলেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় চেন্নাই সুপাক কিংস। এর সঙ্গে তৃতীয় বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় সিএসকে। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন ওয়াটসন ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন কেকেআর-এর সুনীল নারিন।
২০১৯ সালের শেষ আইপিএল ফাইনালে ফের মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আরও এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থাকে ক্রিকেট বিশ্ব। সিএসকে-কে ১ রানে হারিয়ে চতুর্থবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার দল। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৪৯ রান করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করে কায়রন পোলার্ড। রান তাড়া শুরুটা ভালই করেছিল সিএসকের ডুপ্লেসি ও ওয়াটসন। কিন্তু ব্যাক্তিগত ২৬ রানে ডুপ্লেসি আউট হওয়ার পর থেকেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে সিএসকে-এর ইনিংস। একা লড়াই করে যায় ওয়াটসন। ৮০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু ওয়াটসন রান আউট হতেই জয়ের আশা শেষ হয় সিএসকে-এর। শেষে ১৪৮ রানে থামে ধোনির দলের ইনিংস। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন জসপ্রীত বুমরা ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন আন্দ্রে রাসেল।
২০২০ পঞ্চমবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি চেন্নাই সুপার কিংসের একটি নজিরও স্পর্শ করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এর আগে একমাত্র দল হিসাবে পরপর দু'বার আইপিএল জিতেছিল ধোনির সিএসকে। ২০১৯ সালের পর ২০২০-তেও ট্রফি জিতে সেই তালিকায় নাম লেখায় মুম্বই। ২০২০ সালের ফাইনালে দিল্লি ক্যাপিটালসের মুখোমুখি হয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করে ১৫৬ রান করে দিল্লি। শ্রেয়স আইয়র করেছিলেন ৬৫ ও ঋষভ পন্থের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৬। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে আট বল বাকি থাকতেই জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। অধিনায়কোচিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন রোহিত।
সেই বছর ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের জবাব দেওয়ার মরসুম। ২০২০ সালে আইপিএল-এর ইতিহাসে প্রথমবার শেষ চারে যোগ্যতা অর্জন করার আগেই বিদায় নিয়েছিল সিএসকে। ২০২১ মরসুমে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে পুরো প্রতিযোগিতায় অনবদ্য পারফর্ম করে এমএস ধোনির দল। ২০২১ সালের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৯২ রান করে চেন্নাই। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন ফাফ ডুপ্লেসি। রান তাড়া করতে শুরুটা ভাল করেছিল দুই কেকেআর ওপেনার শুভমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। অর্ধশতরান করেন তারা। কিন্তু তারপর আর কেউ রান পাননি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৬৫ রান করে কেকেআর। ২৭ রানে ম্য়াচ জিতে চতুর্থবার আইপিএল জিতে যায় সিএসকে।