পাক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের ফাঁদ পেতে ISI এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ ভারতীয়দের!
নিজস্ব প্রতিবেদন : শুধু ধর্মের জিগির দিয়ে নয়, ISI এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকদের। ব্ল্যাকমেল থেকে শুরু করে কোনও কিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো। এইভাবেই ভারতে নিয়োগ করা হচ্ছে ISI এজেন্টেদের। তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গোয়েন্দাদের হাতে। (ছবিতে পাক ISI এজেন্ট আমোদ)
প্রেমের বিনিময়ে ISI এজেন্ট- গুজরাট থেকে গ্রেফতার হওয়া রাজকবি কুম্ভারের নাম প্রথম সামনে আসে ২০২০-র জানুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের লখনউর গোমতী থেকে ISI এজেন্ট মহম্মদ রাশিদ গ্রেফতার হওয়ার পর। রাশিদের গ্রেফতারির পর এপ্রিল মাসে তদন্তভার রাতে নেয় NIA। এই রাশিদকে জেরা করেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জেরায় রাশিদ জানায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ২ বার সে আত্মীয়ের বিয়েতে পাকিস্তান যায়। সেখানে করাচির বাসিন্দা একটি তরুণীর প্রেমে পড়ে সে। কিন্তু পরিবার বেঁকে বসে। সেখান থেকেই তার আলাপ হয় ওই পাক যুবতী মেয়েটির নিকট আত্মীয় আমাদ ওরফে হাবিলদার ফাইয়াজ ও তার বন্ধু আজিমের সঙ্গে। তারা রাশিদকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তাদের বিয়ে দেবে। কিন্তু ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে রাশিদকে তারা ভারতে ISI-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে বলে। একইসঙ্গে নতুন এজেন্ট নিয়োগ করারও দায়িত্ব দেয়। (ছবিতে পাক ISI এজেন্ট আজিম)
ইউনিট ৯৪২-তে প্রশিক্ষণ - রাশিদকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার পরই করাচিতে ISI-এর ৯৪২ নাম্বার ইউনিটে তাকে ট্রেনিং দেওয়া হয়। কীভাবে টাকা আদানপ্রদান করবে? তার কী কাজ হবে ভারতে? নিয়োগ কীভাবে হবে? কীভাবে ভারতীয় সিম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করবে? ইত্যাদি বিষয়ে চলে ট্রেনিং। এরপর ট্রেনিং শেষে সে পাকাপাকিভাবে ISI এজেন্ট হয়ে ওঠে। শুরু হয় তার কর্মকাণ্ড? নাশকতার পরিকল্পনায় শেষ ২ বছরে গুজরাট ও রাজস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকার তথ্য সংগ্রহ করে রাশিদ। একাজে তাকে সাহায্য করে কুম্ভার। (ছবিতে মহম্মদ রাশিদ)
কুম্ভার-রাশিদ জুটি - রাশিদ একটি কাজে গুজরাট এলে কুম্ভারের সঙ্গে আলাপ হয় তার। কুম্ভার কচ্ছের মুন্ডরা বন্দরে সুপারভাইসার হিসেবে কাজ করত। একথা জানার পর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে রাশিদ। গুজরাটের কোথায় কত জমায়েত হয়? গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কী কী? সে সম্পর্কে কুম্ভারের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে রাশিদ। পাশপাশি পেটিএম অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্যও কুম্ভারকে জানাতে বলে রাশিদ। সমস্ত তথ্য জানানোর বিনিময়ে পেটিএম-এই কুম্ভারকে ৫০০০ টাকা পাঠায় রাশিদ। এভাবেই ISI এজেন্ট হিসেবে কুম্ভারকে নিয়োগ করে নেয় রাশিদ। ২০১৯ থেকে রাজকবি কুম্ভার ISI-এর প্রাইম অ্যাসেট হিসেবে কাজ করা শুরু করে। (ছবিতে রাজকবি কুম্ভার)
হামলার ছক - উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট ও রাজস্থানের একাধিক এলাকায় হামলার ছক কষে রাশিদ-কুম্ভার জুটি। গুজরাটের ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন, উত্তরপ্রদেশে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, আগ্রা ফোর্ট, বায়ুসেনা ছাউনি, সিআরপিএফ ক্যাম্প, ব্রিজ, গোরখপুর রেলস্টেশন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সঙ্কটমোচন মন্দির, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, রাজস্থানের আজমের শরীফ, উপকূল এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সহ মোট ৬০টি জায়গার ছবি ও বিস্তারিত তথ্য পাকিস্তানে পাঠায় কুম্ভার। রাশিদ ও কুম্ভারের ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে এরকমই ISI-এর প্রচুর দস্তাবেজ উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার হয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি যেগুলি সম্ভবত সবই হিট লিস্টে ছিল। এছাড়াও প্রচুর পাকিস্তানি ও ভারতীয় সিম, স্লিপার সেল সংক্রান্ত নথি, ISI এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুকদের বায়োডেটা, ক্যামেরা এবং ডঙ্গেল সহ আরও বিবিধ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।