লকডাউনে বাড়ি ফিরেছিলেন, ম্যানহোল থেকে ফেরা হল না ৪ জনের

Thu, 25 Feb 2021-10:04 pm,

নিজস্ব প্রতিবেদন : দারিদ্র্যের ছাপ চারধারে স্পষ্ট। সংসারে দুটো পয়সা বেশি রোজগারের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। কিন্তু সেখানেও বাধ সাধে করোনা। লকডাউন ঘোষণা হতেই মালদায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন সবাই। কিন্তু অদৃষ্টের লিখন... নিয়তির পরিহাস! কলকাতায় ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে আর ফেরা হল না কারওরই। 

কলকাতা পুরসভার ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে, কুঁদঘাট এলাকায় আজ ম্যানহোলে পুরনো নিকাশি নালার সঙ্গে নতুন নিকাশি নালার সংযুক্তিকরণের কাজ করতে নেমে প্রাণ হারান ৪ শ্রমিক। ম্যানহোলে নেমেছিলেন ৭ জন। তাঁদের মধ্য়ে ৩ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফিরলেও, ৪ জন আর ফিরলেন না। মৃত ৪ শ্রমিকই মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুর এলাকার বাসিন্দা। এই ৪ পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন ৩ ভাইও। 

 

এদিন দুপুরে গ্রামের বাড়িতে ৩ ভাই আলমগীর হোসেন (২৮), জাহাঙ্গীর আলম (২৬), সাবির আলি (২৪) ও প্রতিবেশী লিয়াকত আলি (২২)-র মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। 

 

মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ জন-ই দীর্ঘদিন ধরে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। কখনও বেঙ্গালুরু, কখনও কেরলে! করোনায় লকডাউন শুরু হতেই তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে, মাস তিনেক আগে কাজের জন্য কলকাতায় যান। আর তারপরই আজ এই মর্মান্তিক পরিণতি।

হরিশ্চন্দ্রপুর রেল লাইনের ওপারে তালসুর এলাকায় বাড়ি মৃত শ্রমিকদের। মাটির বাড়ির উপরে টালির ছাদ। প্রত্যেক ঘরেই অভাবের ছাপ স্পষ্ট। কলকাতায় দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৩ ছেলের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন বাবা তোরাব আলি ও মা রেজিনা বিবি। বড় ছেলে আলমগীর বিবাহিত। তাঁর নাবালক দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। চোখের জল বাঁধ মানছে না কারওরই।

তোরাব আলি বলেন, "সকালেই বড় ছেলেটা ফোন করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে। সবার খোঁজখবর নিচ্ছিল। কিন্তু ৩ ছেলেই যে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। কী নিয়ে বাঁচব!"

ওদিকে প্রতিবেশী লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনূর বিবি আবার অন্তঃস্বত্ত্বা। স্বামীর ছবি হাতে পাথরের মত বসে আছেন কোহিনূর বিবি। লিয়াকতের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকে মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। কথা বলার ক্ষমতা নেই। শুকিয়ে গিয়েছে চোখের জলও। কোনওরকমে বললেন, "রাতেই ফোন করেছিল। কেমন আছি খোঁজখবর নিয়েছিল। সেটাই যে শেষকথা, বুঝতে পারিনি।"

প্রসঙ্গত, লিয়াকতের বাবা মহম্মদ হানিফ ও দাদা সাহাদাতও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁরা এখনও ভিন রাজ্যেই রয়েছেন। উল্লেখ্য, লকডাউনে চাঁচল মহকুমার অন্তত ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় বাড়ি ফেরার পথে অথবা ভিন রাজ্যে যাওয়ার পথে বা দুর্ঘটনায়। আবার ৪ শ্রমিকের মৃত্যু! এলাকায় কাজ না মেলাতেই অভাবের তাড়নায় ঝুঁকি নিয়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 

এদিকে, কুঁদঘাট ম্যানহোল কাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। অন্যদিকে আহতদের ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, আজকের এই ঘটনার পিছনে কার গাফিলতি রয়েছে? কী কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল? তার কারণ অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গড়েছে কলকাতা পুরসভা।

জানা গিয়েছে, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধার করা হয় ম্যানহোলে আটকে পড়া ৭ জনকে। প্রায় ২ ঘন্টা ভিতরে জলের মধ্যে আটকে ছিলেন তাঁরা। উদ্ধারের পর ওই শ্রমিকদের এসএসকেএম ও  বাঘাযতীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ৪ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link