যা অনুমান করা হয়, পৃথিবীর স্থলভাগ তার চেয়েও পুরনো; বিস্মিত বিজ্ঞানীরা
জলের বুক ঠেলে পৃথিবীর স্থলের উপরিভাগ ঠিক কবে জেগে উঠেছিল? প্রকৃতিগঠনের খুব বুনিয়াদি প্রশ্ন এটি। এর মোটামুটি একটা সময়সীমা বিজ্ঞানীরা এতদিন নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই ধারণা ঠিক নয়।
ঠিক নয় মানে? সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী এই নিয়ে নতুন করে গবেষণা করে দেখেছেন, যা অনুমান করা হত, পৃথিবীর স্থলের উপরিভাগের বয়স তার চেয়েও অন্তত ৫০০ মিলিয়ন বছর বেশি! অর্থাত্ সঠিক ভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর স্থলভাগ তৈরি হয়েছিল আজ থেকে ৩.৭ বিলিয়ন বছর মানে ৩৭০ কোটি বছর আগে!
সম্প্রতি এই মর্মে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। বিষয়টির গবেষক নরওয়ের জিওকেমিস্ট Desiree Roerdink। তিনি এবং তাঁর গবেষকদল নতুন এই সমীক্ষার বিস্তারিত রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতে চলেছেন। সে না হয় হল। কিন্তু আচমকা পৃথিবীর স্থলের উপরিভাগের বয়স নিয়ে নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন কেন হল?
ডিজায়ার রোয়ারডিঙ্ক এই প্রসঙ্গে বলেছেন গবেষণার পদ্ধতির কথা। তিনি জানান, এতদিন পৃথিবীর স্থলের উপরিভাগের বয়স নির্ধারণ করার কাজ চলত 'মেরিন কার্বোনেট' নামের এক ধরনের যৌগ দিয়ে। যা সাধারণত সুপ্রাচীন পাথরগুলিতে দেখা যায়। 'মেরিন কার্বোনেটে'র মধ্যে আছে স্ট্রোনটিয়াম আইসোটোপ। সেই আইসোটোপ পরীক্ষা করে পাথরের বয়স জানা যেত।
রোয়ারডিঙ্ক জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করতে গিয়ে এবার তাঁরা আরও প্রাচীন এক উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। এটি 'ব্যারাইট' নামে এক ধরনের যৌগ। এটিও সুপ্রাচীন পাথরের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে এর উপস্থিতি আরও অনেক বছর আগে থেকেই। 'ব্যারাইটে'র বয়স মোটামুটি ৩.৫ বিলিয়ন থেকে ৩.৭ বিলিয়নের মধ্যে।
এবার এই ব্যারাইটের বয়সের কথা মাথায় রেখেই রোয়ারডিঙ্ক জানান, এটি যদি এত পুরনো হয়, তা হলে পৃথিবীর স্থলের উপরিভাগও সেই অনুপাতে পুরনো হতে বাধ্য। তবে এখনই নির্দিষ্ট করে কোনও কিছু বলতে চাইছেন না তিনি বা তাঁর দল। শুধু বলছেন, আগামী দিনে এই নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।
সত্যি, পৃথিবীর নির্মাণ, এর গড়ে-ওঠা, এর বিস্তার বা বিবর্তন নিয়ে বিস্তর নিরীক্ষা, সমীক্ষা, গবেষণা, কৌতূহলের অন্ত নেই। আর এসব করতে গিয়ে এই গ্রহটির সম্বন্ধে কত অজানা জিনিসই যে জানা যাচ্ছে!