তৃণমূল-বিজেপিকে হঠানোর ডাক বাম ব্রিগেডে, এক নজরে দেখে নিন কে কী বললেন?

Sun, 03 Feb 2019-4:13 pm,

মৌমিতা চক্রবর্তী: লোকসভা ভোটের আগে ভাঙা সংগঠন পুনরুজ্জীবনের বার্তা দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। শুরুতেই তাঁর পরামর্শ, ব্রিগেডের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি সভা হয়েছে, সেভাবেই এলাকায় এলাকায় সভা করুন। তাঁর বার্তা,   বিজেপি-তৃণমূল এক বৃন্তে দুটি ফুল। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বুথভিত্তিক সংগঠন তৈরি করে এলাকায় এলাকায় সভা করুন।

 

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ''আমরা অনুদান চাই না। খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার লড়াই। গোটা দেশজুড়ে মানুষের জোট তৈরি হচ্ছে। ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি করছে বিজেপি''।  

 

আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, ''পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পক্ষে নয় বাংলা। বাংলা বামপন্থার পথ দেখিয়েছে। সীমাহীন ঔদ্ধত্য শাসক দলের। শুধু মিথ্যা কথা বলে রাজ্য সরকার। দেশে টাকা লুঠে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকার উপরেও নজর পড়েছে মোদী সরকারের। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওনার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে মমতার। বিজেপি একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি। যুদ্ধাস্ত্র কিনে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা আত্সাতের অভিযোগ উঠেছে মোদীর বিরুদ্ধে''।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ''জনসমুদ্র দেখে ভরসা পাচ্ছি, দিল্লি থেকে মোদীকে হঠাবেন জনতা। বাংলা থেকে হঠাবেন দিদিকে। ভোট দিতে না দিলে জনসমুদ্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশের অন্নদাতারা আত্মহত্যা করেছেন। যুবকরা চাকরি খুঁজছেন। নোটবন্দির কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন মানুষ। দেশের সম্পত্তি বেচে দিচ্ছেন মোদী। মোদীর বন্ধু ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই ভুল শোধরাতে ব্যাঙ্কগুলির বিলয় শুরু হয়ে গিয়েছে। লুঠের জন্য আইনও বদলে দিচ্ছে বিজেপি। ইলেকটোলার বন্ডের টাকা যাচ্ছে বিজেপির তহবিলে''। 

বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে ইয়েচুরির বক্তব্য, ''বাংলায় যে ভ্রাতৃত্ব ছিল, তা ভেঙে দিচ্ছে ওরা। অসমে নাগরিক পঞ্জিকরণ বিলের নামে দেশের নাগরিকের সংকটে ফেলেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মোদীর নীতি দেশে ভ্রাতৃত্ব ও সমাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। নোয়াখালি দাঙ্গার সময়ে সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এবার চৌকিদারকে ছুটি দিতে হবে। মোদীকে জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, গুজরাটে দাঙ্গা করিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ওই দাঙ্গার পর মন্ত্রী হয়ে এনডিএ সরকারে ফিরেছিলেন। ওদের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ চলছে। দুজন মিলে লুঠ চালাচ্ছে। একজনের সঙ্গে গিয়ে অন্যজনকে হঠাতে পারবেন না। দুজনকেই হঠাতে হবে''।     

 

ব্রিগেডের ভিড় দেখে সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ''আমাদের বক্তা মাত্র ৯ জন। অথচ শোনার লোক ওদের দ্বিগুণ। মুখ্যমন্ত্রীর ব্রিগে়ডে ৪ জন বিজেপির লোক ছিলেন। যাঁকে (পড়ুন অটলবিহারী বাজপেয়ী) বাড়িতে ডেকে মালপোয়া খাইয়েছিলেন, তাঁর মন্ত্রিসভায় যিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন সেই যশবন্ত সিনহা ব্রিগেডে ছিলেন। শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুণ শৌরিরাও এসেছিলেন। এরা কেউ বিজেপি ছাড়েননি। এরা মোদীকে হঠাতে চান কারণ মন্ত্রী হননি। নীতি বিসর্জন দেননি। মনে করুন, এই ব্রিগেড থেকে বামপন্থীরা বলেছিলেন, বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও''।

সূর্যকান্তের কথায়,''আজ ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ। এটা নেতাদের ব্রিগেড নয়। এটা জনগণের ব্রিগেড। চপ ও পকোড়া ভাজার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর দরকার নেই। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী থাকলে কোনও নতুন কলকারখানা হবে না। কেবল কৃষিতেই মানুষের কর্মসংস্থান হয় না। চৌকিদার বা দফাদার- কাউকেই চাই না। রাফাল বিমান কেনে চৌকিদারি। আপনার তো যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষমতা নেই। আপনি পারছেন না সেটাই রাগ। ২৩ জনকে ডেকে ভেবেছিলেন, কেউ বলবে, দিদি আপনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সেটা হয়নি। যে যার রাজ্যে গিয়ে উল্টো কথা বলেছেন। দিদি-মোদী দুজনেরই একই অবস্থা। আমাদের দুর্গ বানাতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে লড়াই করতে হবে। মানুষের জয় কেউ আটকাতে পারবে না। জ্যোতিবাবু বলতেন, মানুষই ইতিহাস তৈরি করবে''।

 

মহম্মদ সেলিম বলেন, ''কেউ পার পাবে না। আমরা শপথ নিতে এসেছি। এটা লাল ঝান্ডার দম্ভ নয়। বাংলার বুকে নতুন করে শুরু করব। তার শপথ নিতে এসেছি। এটা কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য নয়। এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই। দিদি টিকে আছেন, কারণ দাদার সঙ্গে সেটিং করেছেন। পাঁচবছর ধরে দেশের মানুষকে ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। যেতে যেতে বাজেটের নামে আবার জুমলা উপহার দিয়েছে মোদী সরকার। ৫ বছর সুযোগ পেয়েছিলেন। এখন কৃষকের কথা মনে পড়ল। নাসিক, দিল্লি ও তামিলনাড়ুতে কৃষকরা মিছিল করেছিলেন, তখন দেখেননি। ধান চাষিরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কৃষকরা ভিক্ষা চায় না, অধিকার চায়''। 

 

সেলিম আরও বলেন,'' তৃণমূলকে তৈরি করেছিল বিজেপি। মোদী বলছেন, কংগ্রেসমুক্ত ভারত। মমতা কী করলেন, কংগ্রেসমুক্ত বাংলা। হিটলার পারেননি লাল ঝান্ডাকে শেষ করতে। মমতাও পারবেন না। লড়াই হবে কৃষকের দাবিতে। ন্যূনতম ১৮,০০০ বেতন চাই শ্রমিকের। ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা মারা যাচ্ছেন। মোদী বলেছিলেন, ২ কোটি বেকারের কাজ দেবেন। প্রশ্ন করায় উত্তর দিলেন, দিদিই বলছেন, ৮০ লক্ষ চাকরি দিয়েছেন। সুরির সাক্ষী মাতাল। মোদীর সাক্ষী দিদি। এখানে দুটো লাড্ডুর কথা বলে গিয়েছিলেন মোদী। সেই ফাঁদে পা দিলেন মানুষ। কাঁটা থেকে কাঁটা বের হবে ভেবেছিলেন। আজ একটার বদলে দুটো কাঁটা হয়ে গিয়েছে। ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট একটাও দাঙ্গা হতে দেয়নি। এখান থেকে দাঁড়িয়ে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দাঙ্গাকারীদের মাথা গুঁড়িয়ে দেব। ধুলাগড় থেকে কালিয়াচক, রায়গঞ্জ থেকে মাথাভাঙা দিনের পর দিন দাঙ্গা হয়েছে। একটাও মানুষকে ধরেননি। কারণ, দিদির চুরি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে না দিল্লির সরকার। এখানেও দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার কিছু করবে না''।

বিজেপি ও তৃণমূলকে একযোগে হঠানোর ডাক দেন সেলিম। তাঁর কথায়,''এখানে দুটো লাড্ডুর কথা বলে গিয়েছিলেন মোদী। সেই ফাঁদে পা দিলেন মানুষ। কাঁটা থেকে কাঁটা বের হবে ভেবেছিলেন। আজ একটার বদলে দুটো কাঁটা হয়ে গিয়েছে। ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট একটাও দাঙ্গা হতে দেয়নি। এখান থেকে দাঁড়িয়ে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দাঙ্গাকারীদের মাথা গুঁড়িয়ে দেব। ধুলাগড় থেকে কালিয়াচক, রায়গঞ্জ থেকে মাথাভাঙা দিনের পর দিন দাঙ্গা হয়েছে। একটাও মানুষকে ধরেননি। কারণ, দিদির চুরি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে না দিল্লির সরকার। এখানেও দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার কিছু করবে না''।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link