আঘাত করেছি পাকিস্তানে, ব্যথা লেগেছে দিদির, শিলিগুড়িতে ২০টি পয়েন্টে মোদীর বক্তব্য

Wed, 03 Apr 2019-2:44 pm,

শিলিগুড়ির সভায় বাংলায় ভাষণ শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন,''শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গের ভাই-বোনেদের আমার শুভেচ্ছা। বড়দের প্রণাম। আপনারা কেমন আছেন?'' 'মোদী মোদী' সোল্লাসে নমোকে বরণ করে নেন জনতা। 

দিল্লি থেকে অনেক ক্যামেরা এসেছে কলকাতায়। কিন্তু শিলিগুড়িতে এই ভিড় দেখলে বুঝতে পারলেন ঝড় কাকে বলে! 

ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, আজ যা বাংলা করে গোটা দেশ তা অনুসরণ করে। আজও বাংলা যা করছে, গোটা দেশ সেদিকেই চলছে। 

বড় বড় রাজনৈতিক পণ্ডিত, এমনকি আমিও এত বড় জনসমাগম না দেখলে, বুঝতে পারতাম না, দিদির নৌকো ডুবে গিয়েছে। আপনারা দারুণ কাজ করেছেন। 

 

মা কালী, মা ভবানী ও ভগবান শিবের এই ভূমিকে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রণাম করছি। আপনারা এমন একটা সংস্কৃতির বাহক, যাঁরা দেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। অনেক বীর, অনেক গোর্খারা রক্ত দিয়ে দেশকে সিঞ্চিত করেছেন। আজও নতুন ভারতকে দিশা দেবেন আপনারা। 

বিজেপি ও এই চৌকিদারকে প্রতিবার সঙ্গ দিয়েছেন। দার্জিলিং হোক, উত্তরবঙ্গ হোক, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি আপনাদের স্নেহ ও সমর্থন অভূতপূর্ব।  আপনার বিশ্বাসের জন্য এই চৌকিদার বাঘা বাঘাদের সঙ্গে টক্কর নিচ্ছে। 

গত পাঁচবছরে দেশের উন্নয়নে নতুন গতি দিতে পেরেছি। তবে অন্য রাজ্যে যে গতিতে কাজ করতে পেরেছি, সেই গতিতে এখানে কাজ হয়নি। এর কারণ জানেন? পশ্চিমবঙ্গে একটা স্পিড ব্রেকার আছে। এই স্পিড ব্রেকারকে এখানকার মানুষ দিদির নামে জানেন। দিদি আপনাদের উন্নয়নের স্পিড ব্রেকার। দিদি গরিবদের কথা ভাবেন না। গরিবদের নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত। তিনি কীভাবে গরিবদের জন্য কাজ করবেন! দারিদ্র না থাকলে ওনার রাজনীতিই তো শেষ হয়ে যাবে। কংগ্রেস ও বামেদেরও একই হাল। গরিবদের গরিব রাখলেই ওদের রাজনৈতিক হিত। পুরো ষড়যন্ত্র করে গরিবদের উন্নয়ন রোধ করতে চাইছে। যে কোনওভাবে গরিবদের উন্নয়ন আটকাতে চাইছেন। 

পশ্চিমবঙ্গে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি হয়েছে। গরিবদের লুঠেছেন দিদির ভাই, সঙ্গীরা। বিশ্বাস করে চিটফান্ডে টাকা রেখেছিলেন গরিবরা। নিজের সঙ্গীদের নিয়ে সেই সব গরিব আমানতকারীদের গচ্ছিত অর্থ ধ্বংস করেছেন দিদি। 

গরিবদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা চিকিত্সা খরচ। আর এজন্য ভারতীয় জনতা পার্টি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সূচনা করেছে। গরিবদের বলছি, ৫ লক্ষ টাকার চিকিত্সা বিনামূল্যে মিলবে। এক টাকাও খরচ হবে না। স্পিড ব্রেকার দিদি আটকে দিয়েছেন এই প্রকল্প। ওনার কুকর্মের তালিকা আরও লম্বা। পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষকের উন্নয়নে ব্রেক লাগিয়েছেন দিদি। গোটা দেশে পিএম কিষাণ সম্মান যোজনায় কৃষকদের ব্যাঙ্কখাতায় সোজা টাকা পাঠানো হচ্ছে। এই প্রকল্পেও ব্রেক লাগিয়ে দিয়েছেন দিদি। 

 

গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য রেরা আইন এনেছে এনডিএ সরকার। মধ্যবিত্তরা বাড়ি কিনতে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনও বিল্ডার পালিয়ে যাতে যেতে না পারেন তাই RERA আইন এনেছি। কিন্তু সেটি লাগু করতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগে এই কাজই করত বামেরা। এখন ওদের হাতিয়ার কব্জা করে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কব্জাই নয়, আরও ধারালো করে তুলেছেন। 

বাম, কংগ্রেস বা মমতা দিদি হোক, এরা একই থালার বন্ধু। এদের রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গকে গরিব রাখতে হবে। কিন্তু এবার ওদের মোকাবিলা করছে চৌকিদার। অনেক পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কাজ করছি। বাধা সত্ত্বেও গ্রামে গ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ, বৈদ্যুতিকরণ, পাকা বাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। 

এখানে চা বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। তবে স্পিড ব্রেকার দিদি না থাকলে আরও কাজ করতে পারতাম। স্পিড ব্রেকারকে সরানো পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। দ্রুত গতিতে উন্নয়নে বাধা পাচ্ছি। ইস্টার্ন-ওয়াস্টার্ন হাইওয়ে ও রেলের কাজ চলছে। 

 

একদিকে সত্ চৌকিদার, অন্যদিকে দুর্নীতিগ্রস্তরা। একদিকে সন্ত্রাসকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া, আর অন্যদিকে পাকিস্তানের সমর্থকরা। বালাকোটে আমাদের ছেলেরা ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের মেরেছে, আপনারা খুশি হয়েছেন। আপনাদের মাথা উঁচু হয়নি! কিন্তু আমাদের জওয়ানরা যখন ফিরে এলেন, তখন কাদের কাঁদা দরকার ছিল? চোট পাকিস্তানে লেগেছে, আর ব্যখা পাচ্ছেন এখানে। রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের চেয়েও ব্যথিত হয়েছেন কলকাতার দিদি। মোদী প্রমাণ দিন। জঙ্গিদের সঙ্গে এমনটা করা উচিত নয়। আপনার খুশি নন? ভারতের ছেলেদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। আপনারা গর্বিত, কিন্তু দিদির পছ্ন্দ হয়নি। এমনকি ওনার মহাজোটের সঙ্গীদের পছ্ন্দ হয়নি। এত বেশি কেঁদেছেন, পাকিস্তানে নায়ক হয়ে গিয়েছেন। 

এই ভারত কি চান! এদের মনোবাঞ্চা স্পষ্ট হচ্ছে। দিল্লিতে ইউপিএ সরকারের আমলে সন্ত্রাসবাদী হামলা হতো, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন ওরা সেনাদের বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা বলে চলেছেন। 

দেশের সেনাদের মনোবল ভাঙার কাজ করেছে কংগ্রেসের ইস্তাহার। জম্মু-কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেবে ওরা। পাথরবাজ ও সন্ত্রাসবাদীদের সামনে সেনাদের দুর্বল করতে চাইছে। আস্ফপা সেনার সুরক্ষাকবচ। সেনার নিয়ম ও দেশের আইনের উপরে বিশ্বাস নেই এদের। আমাদের বীর জওয়ানদের বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্রকে ভেস্তে দিতে হবে আপনাদের। আপনাদের ভোট শুধু বিজেপি সাংসদদের  নির্বাচন নয়, বা মোদী প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়, বরং দেশের সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ভোট। 

 

এদের নীতির জন্য দেশকে সন্ত্রাসবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু চৌকিদার দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ত্রাসবাদী ও নকশালদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, অনুরূপভাবেই ব্যবস্থা নেব অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে। শরণার্থীরা কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভুলে শিকার, তাঁদেরও সুরক্ষা দেবে চৌকিদার।  

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। গোর্খা ভাই-বোনেদের আশ্বস্ত করছি, আপনাদের কোনও লোকসান হবে না। টিএমসি-র বেতনভুকদের সতর্ক করছি, আপনাদের দিন চলে গিয়েছে। বিজেপির সরকার আসলে নির্দোষ নাগরিকদের নির্যাতনকারীদের শাস্তি দেওয়া হবে। 

জগাই-মাধাইয়ের সমঝোতার ইতি হতে চলেছে। ভয় না পেয়ে ভোট দিন। বিজেপি কর্মীদের বলছি, পুরো শক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়ান, পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যবদলের জন্য দরকার আপনাদের আত্মবিশ্বাস। পশ্চিমবঙ্গের গৌরব, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার জন্য বিজেপিকে ভোট দিন।

আপনাদের প্রতিটি ভোট ঢুকবে মোদীর খাতায়। আপনাদের ভোটেই জিতবে মোদী। আপনাদের ভিড় ও উত্সাহ দেখে আমি ধন্য। 

ভাষণের শেষে জনতার উদ্দেশে মোদী বলেন, ''ম্যাঁ ভি''। সমস্বরে জবাব আসে, ''চৌকিদার হুঁ''। 'গলি গলি'- জবাব আসে, 'চৌকিদার'। 'ধানখেতে'- জবাব আসে 'চৌকিদার'।'সীমান্তে'- জবাব আসে 'চৌকিদার'। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link