Meena Kumari Birth Anniversary: `ট্র্যাজেডি কুইন`র তকমায় হারিয়েই গেলেন কবি মীনা কুমারী
মাত্র চার বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন। তার পর একে একে অভিনয় করেছেন ৯০ টি ছবিতে। হিন্দি ছবির 'ট্র্যাজেডি কুইন' মীনা কুমারীর আজ, ৮৮তম জন্মদিন (১ অগস্ট, রবিবার)।
তবে অভিনেত্রী মীনা কুমারীর কবি সত্ত্বার কথা হয়ত অনেকেরই অজানা। তিনি ছিলেন প্রেমে-অপ্রেমে উর্দু কবিতায় নিমগ্ন থাকা এক কবি। তবে শুধু প্রেম নয়, তাঁর শায়েরিতে উঠে এসেছে মৃত্যু ভাবনাও। আবারও কখনও গায়িকা রূপেও ধরা দিয়েছেন মীনা কুমারী।
চন্দা তনহা হ্যায় আসমান তনহা/ দিল মিলা হ্যায় কাঁহা কাঁহা তনহা/ জিন্দেগি কেয়া ইসি কো কেহতে হ্যায়/ জিসম তনহা হ্যায় অওর জান তনহা/ রাহ দেখা করেগা সাদিয়ো তক/ ছোড় যায়েঙ্গে এয়ে জাঁহা তানহা। এই শায়েরি উঠে এসেছিল মীনা কুমারীর লেখনিতে।
অভিনেত্রী হয়েও তিনি নিজের কবিতায় বলিউডের ছবির দুনিয়ার তীর্যক সমালোচনা করেছেন। জানা যায়, কবিতার হাত ধরেই লোকপরিসর থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন মীনা কুমারী।
গীতিকার, চিত্রপরিচালক গুলজারের সঙ্গে মীনা কুমারীর বন্ধুত্ব ছিল। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর গুলজার তাঁর কবিতা বই আকারে বের করেছিলেন।
মীনা কুমারীর তানহা চান্দা বইটি ভারত-পাকিস্তান দুই দেশেই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর কবিতার বইয়ের পাইরেটেড কপিও বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেই বইয়ের পাতার মতোই কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে গেল মীনা কুমারীর কবি পরিচয়।
একবার মীনা কুমারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সারাদিন পরিশ্রমের পর লেখালেখির কখন সময় পান? উত্তরে মীনা কুমারী বলেছিলেন, ''লেখার জন্য খুব বেশি সময় লাগে না, লেখার ইচ্ছা থাকলে আপনিও লিখতে পারবেন।''
একসময় গজল, কবিতা, নজমও লিখেছেন মীনা কুমারী। যেমন সুন্দর লিখতেন, তেমনই ছিল তাঁর গানের গলা। গজল ও নজম গাইতেন তিনি, আবৃত্তিও করতেন। কমল অরোহির সঙ্গে তালাকের পর লিখেছিলেন, 'তালাক তো দে রহে হো নজরে কেহর কে সাথ/ জওয়ানি ভি মেরা লৌটা দো মেহর কে সাথ'।
মীনা কুমারীর অভিনয় জীবনের দিকে ফিরে তাকালে জানা যায়, ১৯৩৯-এ 'লেদারফেস' ছবির হাত ধরে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় পা রাখেন মীনা কুমারী। পরবর্তীকালে 'বৈজু বাওরা', 'পরিণীতা','আজ়াদ','সাহেব বিবি আউর গোলাম', 'আরতি','সাহারা','দিল এক মন্দির', 'পাকিজ়া' মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন মীনা কুমারী। সেরা অভিনেতা হিসাবে চার বার জিতে নিয়ে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
মীনা কুমারী বলিউডে 'ট্র্যাজেডি কুইন' নামে পরিচিত ছিলেন, আবার ফিমেল গুরু দত্ত নামেও খ্যাতি ছিল তাঁর। একাধারে অভিনেত্রী অন্যধারে কবি ও গায়িকা, মাত্র আটত্রিশে অকালে ঝরে গিয়েছিলেন এই নক্ষত্র।
মীনা কুমারী শুধু তাঁর গুণে নয়স রুপেও মুগ্ধ করতেন বহু পুরুষকে। শোনা যায়, পাকিজ়া ফিল্মের সেটে মীনা কুমারীকে দেখে নাকি বহু বার নিজের সংলাপ ভুলে যেতেন নায়ক রাজকুমার।
শোনা যায়, ছয়ের দশকের উঠতি হিরো ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে নাকি তাঁর সম্পর্ক ছিল তিন বছর। আবার কেউ বলেন, সে সম্পর্ক ছিল মাত্র মাস ছয়েক। ধর্মেন্দ্রর কেরিয়ারের প্রথম দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন মীনা কুমারী।
শোনা যায়, ধর্মেন্দ্র ছাড়াও 'বৈজু বাওরা' ফিল্মের সময় মীনাকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন ভরত ভূষণ। যদিও অভিনেত্রী তা প্রত্যাখান করেন মীনা।
তাঁর নাম জড়িয়েছে লেখক মধুপ শর্মার সঙ্গেও। 'আখরি আড়াই দিন' নামে একটি বইতে মীনা কুমারীর জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন মধুপ। যা পড়লে মনে সময় যেন থমকে গিয়েছে বলেই মনে হয়।
নানা পুরুষের সঙ্গে নাম জড়ালেও পরিচালক কমল আমরোহীকে বিয়ে করেছিলেন মীনা কুমারী। ১৯৫১ সালে 'বৈজু বাওরা'র সেটে কমলের সঙ্গে মীনার দেখা হয়। সে সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তাঁর খুবই খেয়াল রাখতেন কমল। এর ঠিক পরের বছরই বিয়ে হয় তাঁদের।
১৯৫২ সালে গোপনে 'নিকাহ' হয় দু’জনের। জানা যায়, মীনা কুমারীকে মঞ্জু বলে ডাকতেন কমল। আর কমলকে আদর করে চন্দন নাম দিয়েছিলেন মীনা। অথচ খ্যাতনামা অভিনেত্রীকেও একসময় তিন তালাকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
অভিনেত্রীর স্বামী কমল আমরোহী মীনাকে তিনবার তালাক বলে ফেলেছিলেন। আর এর ফলেই ৬-এর দশকে (১৯৬৮ সালে) তাঁর 'নিকাহ' ভেঙে যায়।
শোনা যায়, নেহাতই রাগের বশেই মীনাক এক দিন তিন বার তালাক বলে ফেলেছিলেন আমরোহী। যদিও পরে তিনি আবারও মীনাকে ফিরে পেতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু তিন তালাক প্রথায় সেটি কার্যত অসম্ভব ছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, কমল আমরোহীকে ফিরে পেতে হলে জিনাত আমানের বাবা আমান উল্লাহ খানকে 'নিকাহ' করতে হত মীনাকে। তাঁর সঙ্গে পারস্পরিক সহমতে বিচ্ছেদের পর, ফের আমরোহীকে 'নিকাহ' করতে পারতেন মীনা কুমারী। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়েছিল কিনা জানা যায়না।
শোনা যায়, কমলের সঙ্গে বিচ্ছেদের বহু পরেও তাঁর প্রেমে ডুবে ছিলেন তিনি। শোনা যায়, সেই বেদনাতেই সুরায় ডুবে থাকতেন তিনি। কমলের ছবি 'পাকিজ়া' রিলিজের সপ্তাখানেক পর লিভার সিরোসিসে মারা যান মীনা কুমারী।