মধুচন্দ্রিমা সেরে তৃতীয় লিঙ্গের বিশ্বসুন্দরী খেতাব জয়ের দৌড়ে জলপাইগুড়ির বৌমা অ্যানি

Sat, 01 Jun 2019-6:04 pm,

মধুচন্দ্রিমা পর্বের ইতি। তৃতীয় লিঙ্গের বিশ্বসুন্দরীর মুকুট মাথায় পড়ার লক্ষ্যে আবার র‍্যাম্পে কাম ব্যাক করল অ্যানি। অনীক থেকে অ্যানি। জলপাইগুড়ির নয়াবস্তির বৌমার লক্ষ্য এখন একটাই  তৃতীয় লিঙ্গের বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয়। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম বারোতে পৌঁছে গিয়েছেন ঘরের বৌমা অ্যানি। বৌমার বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয়ের স্বপ্নে বুঁদ শাশুড়ি। স্বপ্ন দেখছে গোটা জেলার মানুষ। খুশির হাওয়া বইছে জলপাইগুড়িতে। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

জন্মগ্রহণ করেছিলেন ছেলে পরিচয়ে অনীক নাম নিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে চিনতে শেখা। আর তার সঙ্গেই শুরু নিজের আসল সত্ত্বাকে মেলে ধরার চেষ্টা। শুরু অনীক থেকে অ্যানি হয়ে ওঠার গল্পের। ডাক্তারদের চেষ্টায় লিঙ্গ পরিবর্তন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা ছিলেন অ্যানি। কিন্তু মনের মানুষকে খুঁজে পান বর্ষবরণের নাইট পার্টিতে, 'সিটি অফ জয়' কলকাতাতেই। সালটা ২০১৬। কলকাতার এক নাইট ক্লাবে ৩১ ডিসেম্বরের রাতে আলাপ হল জলপাইগুড়ি নয়াবস্তির বাসিন্দা  স্বাগ্নিক চক্রবর্তীর সঙ্গে। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

ততদিনে অনীক অতীত। বর্তমান অ্যানি। ডাক্তারদের চেষ্টায় লিঙ্গ পরিবর্তন করে অনীক হয়ে উঠেছেন অ্যানি। ধীরে ধীরে পছন্দের মানুষটির সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে অ্যানির। প্রিয়তম সাগ্নিক চক্রবর্তীকে সবকথা খুলে বলেন অ্যানি। বলেন তাঁর অনীক থেকে অ্যানি হয়ে ওঠার গল্প। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

না, অ্যানির পূর্ব পরিচয় জেনে পাশ থেকে সরে যাননি সাগ্নিক। বরং ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিজের বাড়িতে সবকথা খুলে বলেন সাগ্নিক। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের ভালোবাসায় বাধ সাধেনি পরিবারও। ২০১৮-র নভেম্বরে সাগ্নিক-অ্যানির চার হাত এক হয়। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

তারপর থেকে সংসার, স্কুল নিয়েই সময় কেটে গিয়েছে পেশায় শিক্ষিকা অ্যানির। মডেলিং-এর নেশা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বিয়ের পর ৬ মাস ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আর সময় হয়ে ওঠেনি। শেষমে ডাক এল দিল্লি থেকে। দিল্লি থেকে এলিনা প্রেজেন্টস মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯ প্রতিযোগিতার  ডাক পেয়ে আর ফেরাতে পারেননি অ্যানি।

দীর্ঘদিন পর ফের র‍্যাম্পে ক্যাটওয়াক। কিন্তু ফিরেই বাজিমাত করলেন বালুরঘাটের শিক্ষিকা, জলপাইগুড়ি নয়াবস্তির বৌমা। জাতীয় স্তরে কুড়োলেন সাফল্য। একে একে সকলকে পিছনে ফেলে তৃতীয় লিঙ্গর সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা বারোতে নাম তুলে ফেলেছেন অ্যানি।

এখন লক্ষ্য ভারত সেরা হওয়া। তৃতীয় লিঙ্গের ভারত সুন্দরীর খেতাব জয়। তারপর নিজেকে বিশ্বের দরবারে মেলে ধরা। অ্যানি জানান, "বিয়ের আগে থেকেই আমি মডেলিং করতাম। পরে স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি মডেলিংও চালিয়ে যাই।" (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

বলেন, "ভারতের প্রথম বারোতে পৌঁছেছি। এবার আমার স্বপ্ন ন্যাশানাল চাম্পিয়ন হয়ে  ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া।" সোমবার থেকে শুরু চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। নিজের সাফল্যের জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন অ্যানি। (ছবি সৌজন্য- ফেসবুক)

 

বৌমার সাফল্যে খুশি শাশুড়ি মৌসুমি চক্রবর্তীও। উচ্ছ্বসিত শাশুড়ি প্রশংসা ভরিয়ে দেন বৌমাকে। বলেন, " অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্না আমার বৌমা। একসঙ্গে সবদিক সামলে, মডেলিং করে এতদুর এগিয়ে গিয়েছে।" বৌমা অ্যানি যাতে সুস্থ শরীরে তাঁর লক্ষ্যে আরও দূরে এগিয়ে যায়, সেই শুভেচ্ছা জানান তিনি।

বৌদির সাফল্যে খুশি ক্লাস নাইনের ছাত্র অ্যানির দেওর সায়নও। তার স্পষ্ট কথা, 'বৌদির এতদূর সাফল্যে আমি খুব খুশি। এবারে আমি চাই বৌদি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুইডেনে যাক, এবং বিশ্বসেরা হোক।" বিশ্বসুন্দরী হোক তাঁদের ঘরের বৌমা অ্যানি। আশায় বুক বাঁধছে জলপাইগুড়িবাসী।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link