Abdul Ghani Baradar: সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া কে এই বেরাদর?
তিনি যে দেশের নেতৃত্ব দেবেন, তার নাম হবে 'ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান'। তাঁর এই দেশের স্বপ্ন সেই ১৯৯২ সাল থেকেই। আফগানিস্তানকে আমিরশাহি বানানোর লক্ষ্যে সেই সময়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাদ্রাসা। যার উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানের ধর্মীয় শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে তাকে এক আমিরশাহি দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
তিনি বেরাদর। পুরো নাম মোল্লা আবদুল গনি বেরাদর (Mullah Abdul Ghani Baradar)। তবে তালিবানের কাছে তিনি 'মোল্লা বেরাদর'। এহেন বেরাদরের জন্ম ১৯৬৮ সালে কন্দহরে। জন্মসূত্রে তিনি একজন দুররানি পাশতুন। বলা হয়, দুররানিরা আফগানিস্তানের আদি গোষ্ঠী। এঁদেরই পূর্বপুরুষ হলেন আহমেদ শাহ দুররানি যিনি আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বেরাদরই তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান। সম্ভবত বেরাদরই হবেন পরবর্তী আফগান প্রেসিডেন্ট। সেটা সত্যিই ঘটলে এই প্রথম কোনও শীর্ষ পদে বসবেন এই তালিবান কম্যান্ডার। না হলে বরাবর তিনি নেপথ্যেই কাজ করে এসেছেন।
বেরাদর কোনই দিনই তালিবানের সর্বময় কর্তা ছিলেন না। সেই পদে আপাতত রয়েছেন হায়াতুল্লা আখুন্দজাদা। বেরাদরের ভূমিকা বরাবরই ছিল কৌশল তৈরির। আড়ালে থেকে মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখা। তবে প্রধান না হয়েও তালিবানের রাজনৈতিক অবস্থানের অভিমুখ বরাবার তিনিই ঠিক করে এসেছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তাঁর অবস্থানই ছিল তালিবানের তরফে শেষ কথা।
দেশের হয়ে বেরাদর যুদ্ধ করছেন কিশোর বয়স থেকেই। আটের দশকে সোভিয়েতের নিয়ন্ত্রণে চলা আফগান শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আফগান মুজাহিদিনের সদস্যও হয়েছিলেন। বেরাদরের সহযোদ্ধা ছিলেন তালিবানদের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ওমর। ১৯৯২ সালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয় আফগানিস্তান।
শোনা যায়, ধর্মীয় নেতা মহম্মদ ওমর বেরাদরের ভায়রাভাই। ওমর এবং বেরাদরের উদ্যোগেই তৈরি হয় এক মাদ্রাসা। নাম দেওয়া হয় 'তালিবান'। সেই শুরু তালিবানের যাত্রা। সময়টা ১৯৯১ সাল। এর ঠিক পাঁচ বছরের মাথাতেই সাফল্য। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের দখল নেয় তালিবান। রবিবার রাতে যে ভাবে তারা কাবুল দখল করল, ঠিক সে ভাবেই আফগানিস্তানে শুরু হয়েছিল তালিবানি শাসন। সেই রাষ্ট্রে প্রধান ছিলেন ওমর। বেরাদর ছিলেন আফগান সেনার দায়িত্বে। ২০০১ সালে মার্কিন সেনারা যখন আফগানিস্তান থেকে তালিবানকে উৎখাত করে, তখন বেরাদর ছিলেন আফগানিস্তানের উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
পাকিস্তানে গ্রেফতার হন বেরাদর। কিন্তু আমেরিকা বেরাদরকে মুক্তি দিতে বলে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান সংক্রান্ত উপদেষ্টা বেরাদরের সঙ্গে দেখা করেন। মুক্তি পেয়ে তখন দোহায় বেরাদর। সেখানেই আমেরিকার সঙ্গে তাঁর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তিতে তালিবানদের ক্ষমতা সংক্রান্ত সমঝোতায় আসার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আমেরিকা। সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয় আমেরিকার তরফে।
আমেরিকাকে বেরাদর বুঝিয়েছিলেন, তালিবানও আফগানিস্তানে হিংসার বিরোধী। তারাও আসলে শান্তিই চায়। বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকাকে দিব্যি বোকা বানাল বেরাদর। আসলে তখনই অনেকে এই চুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, বেরাদর আসলে ওই চুক্তি সই করেছিলেন সময় পাওয়ার জন্য। আসলে যত দিনে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়েছে, ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিয়েছে তালিবান। সেনা সরলেই আক্রমণ করবে বলে।
দেখা গেল শেষ হাসি হাসলেন বেরাদরই। রবিবার রাতে তালিবান সেনা আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবনের দখল নেওয়ার পর বেরাদর বলেছেন-- সবে শুরু। এ বার তালিবানকে আসল পরীক্ষা দিতে হবে। দেশের মানুষকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে।