Cough Cold Flu: ওমিক্রন, শীত ও অকালবৃষ্টির ত্র্যহস্পর্শে কী ভাবে সুস্থ থাকবেন? জেনে নিন, কী বলছেন চিকিৎসকেরা
চিকিৎকেরা বলছেন, এই আবহাওয়ায় জ্বর-ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে আগে লক্ষণ দেখুন। যেমন, অনবরত নাক দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ থাকা, হাঁচি, গলাব্যথা ও কাশি। সঙ্গে স্বল্পমাত্রার জ্বরও থাকতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসার আশঙ্কা বেশি। জ্বরের সঙ্গে সামান্য সর্দি। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা উভয়ই ভাইরাসজনিত রোগ। তাই উপসর্গগুলোও মোটামুটি একই রকম হয়।
সাধারণ অসুস্থতার মধ্যেই কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
ডাক্তারেরা বলছেন, সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ থেকেই সেরে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে জটিলতা প্রকাশ পায়। যেমন বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার জ্বর থাকে, সঙ্গে কাঁপুনি, টনসিল ফুলে যাওয়া, সাইনাসজনিত ব্যথা ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার জ্বর, সঙ্গে শরীরে জলস্বল্পতা, বমি, পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, শ্বাসকষ্ট, এমনকী কানে ব্যথাও হয়ে থাকে।
তবে ডাক্তারেরা বলছেন, এসবে একেবারেই ভয়ের কিছু নেই। এই সর্দি-জ্বর খুব বেশি হলে ৭-১০ দিনের মধ্যে নিজ থেকেই সেরে যায়। সাধারণত সর্দি, কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। উপসর্গজনিত কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে কষ্ট কিছুটা কমানো সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। সর্দি-কাশির সঙ্গে যেহেতু অল্প জ্বর এবং শরীরে, মাথায় বা গলায় ব্যথা থাকে তাই ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই কার্যকর। নাক বন্ধভাব এবং নাক থেকে জল ঝরার কারণে ন্যাজাল ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। কাফ সিরাপ সাধারণ সর্দি-কাশিতে তেমন কোনো উপকারে আসে না। তা ছাড়া দুই বছরের নিচের শিশুদের কাফ সিরাপ ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। তরল ও গরম খাদ্য গ্রহণ, নুন ও গরমজলে গার্গলিং, গরম বাষ্প নেওয়া ইত্যাদি ঘরোয়া টোটকাগুলিই অনেকাংশে আরাম এনে দিতে পারে। তাঁরা আরও বলছেন, সাধারণ সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত একধরনের বায়ুবাহিত রোগ। তাই এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যাতে আক্রান্তের হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে না আসতে হয়। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মুখে মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করেন, বারবার হাত ধুয়ে নেন তাহলেও রোগের সংক্রমণ কম হয়।
গলার যত্ন
ঠান্ডার একটি সাধারণ উপসর্গ গলা ব্যথা। নুন গরমজলে গার্গল করা অথবা লেবু-মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যথা দ্রুত উপশম হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণ তরল পানীয় গ্রহণ
এই সময়ে প্রচুর পরিমাণ তরল পানীয় গ্রহণ করলে বা ফলের রস পান করলে শরীরের জলশূন্যতা কমে। এতে ঠান্ডা লাগা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।
একসময় ধারণা করা হত একটি বিশেষ গোত্রের ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে ৮০'র দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, মোট সাতটি গোত্রের ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মরসুমে বা শীতে এই ভাইরাসগুলি দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং মানুষের সর্দি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সর্দিজ্বরে সংক্রমিত থাকা অবস্থায় নাসারন্ধ্রের ভেতরে মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে প্রবেশ করে সংক্রমণকারী জীবাণু। এর ফলে নাসারন্ধ্রের ভেতর অতিরিক্ত সর্দি জমা হয়, ডাক্তারিশাস্ত্র যেটিকে 'রাইনোরেয়া' বলে।
এ সময়ে কী করবেন? ডাক্তারেরা বেশ কিছু প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন।
উত্তর কলকাতার এক প্রথিতযশা জেনারেল ফিজিশিয়ান গিরিশ পার্কস্থিত ড. শ্যামল ঘোষ পরামর্শ দিচ্ছেন, এই ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে সবার আগে একটু গরম জলে স্নান করলে ভালো। সাধারণ ওষুধপত্রই শ্রেয়। তবে সে সব ব্যবহারের বদলে ভিটামিন উচিত হবে। এর মধ্যে ভিটামিন সি বা ক্যালসিয়ামই বেশি জরুরি। এই সময়ে বাচ্চাদের একটু সাবধানে রাখতে হবে। প্রসূতিদের যেমন ওষুধপত্র বা ভ্যাকসিন চলছে, তেমনই চলবে। আর কোভিডের ক্ষেত্রে বলতে পারি, এঁদের সকলের ক্ষেত্রেই সবার আগে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই কমপ্লিট করতে হবে, নিতে হবে বুস্টার ডোজও।