হঠাৎ আলোচনায় পরিণীতি চোপড়া, এমন কী করলেন প্রিয়াঙ্কার বোন?
নিজস্ব প্রতিবেদন- ইদানিং প্রচুর প্রশংসা কুড়োচ্ছেন পরিণীতি চোপড়া। OTT প্ল্যাটফর্মে পরপর তিনটি ছবিতে তাঁর সাফল্য নিয়ে বেশ হইচই পড়েছে। পরিচালক ঋভু দাশগুপ্তের ছবি 'দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন' , পরিচালক অমল গুপ্তের ছবি 'সাইনা' এবং দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি 'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার'। এত প্রশংসা পাওয়ার পর ততটাও খুশি দেখা যাচ্ছেনা পরিণীতিকে, কিন্তু কেন? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরিণীতি জানিয়েছেন, 'আমার ছবি যখন ফ্লপ করছিল, তখন সবাই আমাকেই দোষ দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, আমি চরিত্র অনুযায়ী নিজের ১০০ শতাংশ দিতে পারি নি। কিন্তু কেউ বলেন নি যে ছবিগুলোই ভাল ছিল না। একজনও বলেন নি, অমুক পরিচালক পরিণীতির প্রতিভাকে ব্যবহার করতে পারেন নি। আমাদের দেশের সমালোচনার ধরণটাই এরকম। তাই আমি ঠিক করেছি, আমি আমার ১০০ শতাংশই দেব। বাকিটার দিকে তাকিয়েও দেখব না'।
পরিণীতির ক্ষোভের দিকে একবার নজর ফেরানো যাক। সদ্য প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি 'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার'। মুখ্য ভূমিকায় পরিণীতি চোপড়া ও অর্জুন কাপুর। বলিউডে দুজনের যাত্রাই যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গেই শুরু হয়েছিল। তারপর একের পর এক ছবি ফ্লপ এবং দুজনের গায়েই ফ্লপ স্টারের তকমা সেঁটে বসছিল। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে 'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার' ছবির প্রকাশ এবং এই ছবিতে নিজেকেই যেন রি-ইনভেন্ট করেছেন পরিচালক দিবাকর। 'ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে'র দিবাকরকে ফিরে পেলেন ফ্যানেরা। আর ছবি ভাল হলেই অভিনেতারা চোখে পড়েন, পরিণীতির সেই বক্তব্যকেই সমর্থন করে।
'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার' ছবিতেও অর্জুন কাপুর ও পরিণীতি চোপড়ার জুটি দর্শকদের পছন্দ হওয়ারই কথা। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ অনেকদিন পর তাঁর মোমেন্টামও খুঁজে পেয়েছেন। অন্তত সমালোচকদের মত তেমনই। আর নেটমাধ্যমে এই ছবি নিয়ে দর্শকদের যা উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস, তাতে বলে দিতে হয় না যে অর্জুন-পরিণীতিকে তাঁদের কতটা পছন্দ হয়েছে।
'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার' ছবিতে পরিণীতির চরিত্র একজন 'বস-লেডি'র। এই চরিত্রের জন্য স্ট্রাইপড শার্টস, ব্লেজার, ফর্ম্যাল স্কার্ট পরেছেন পরিণীতি। আর এই পোশাকে তিনি চরিত্রটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেরেছেন। এমনও হতে পারে, পরিণীতি নিজে তাঁর জীবনের একটা বড় অংশে চাকরি করেছেন, মার্কেটিং বিভাগে। MNC মার্কেটিংয়ের সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে এই চরিত্রের অভিনয়ে সাহায্য করেছে, বলাই বাহুল্য।
'সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফরার' ছবিতে অঙ্কে গোল্ড-মেডালিস্ট, অর্থনীতিতে সাবলীল, স্টক মার্কেটের জ্ঞান অগাধ পরিণীতির। এমন এক চরিত্র যখন প্রতিশোধ স্পৃহায় মত্ত হয়ে ওঠে, তখন তা ধ্বংসাত্মক এবং একইসঙ্গে চরম দুর্বল। এই দুইয়ের মিশেলে পরিণীতির অভিনয় সেরা। তবে পরিণীতির এই সাম্প্রতিক সাফল্য কেবলমাত্র OTT তে, বড়পর্দায় তাঁর এই সাফল্যে ফেরা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে বেশ খানিকটা সময়।
নেটফ্লিক্সের এই ছবি The Girl on the Train। চমকে উঠলেন দর্শক। গোটা রিভিউ বলে উঠল পরিণীতি চোপড়ার অভিনয় ক্ষমতা অসাধারণ। পরিচালক ঋভু দাশগুপ্ত এই অ্যাডাপ্টেশনে সবথেকে যত্ন করে কাস্টিং করেছেন। একের পর এক বক্স অফিসের ফ্লপের পরও পরিণীতিকে বেছে নেওয়ার পিছনে সাহসটা ছবিতে কাজে লেগেছে। গহীন কালো কাজল চোখে পরিণীতি চোপড়া গোটা থ্রিলারে মীরা কাপুরের যে চরিত্র এঁকেছেন, তা অনবদ্য। ভারতীয় ছবিতে মহিলা অভিনেতারা এমন সুযোগ বারবার পান না, পরিণীতি এমন চরিত্র হাতে পাওয়া মাত্রই তাতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
The Girl on the Train, নেটফ্লিক্সে এই ছবি দেখে চমকেই উঠলেন দর্শক। ছবির কোনও অংশে তাঁকে দেখে মনে হয় ছবির নেগেটিভ চরিত্রই তিনি, কখনও মনে হবে তিনিই নায়িকা। একজন স্ট্রং-ওম্যান চরিত্রে পরিণীতি তাঁর অভিনয় দক্ষতার চূড়ায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই এই চরিত্র তাঁকে OTT প্ল্যাটফর্মের দর্শকদের প্রিয় করে তুলেছে।
অমল গুপ্তের ছবি 'সাইনা'। ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালের বায়োপিক। পোস্টার লঞ্চের সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল দেশজুড়ে। সার্ভিসের ধরণটা ব্যাডমিন্টনের নয়, বরং লন টেনিসের- ফুঁসে উঠল গোটা দেশ। সবার রাগ গিয়ে পড়ল পরিণীতি চোপড়ার উপর। যেন, ছবিটা তিনিই বানিয়েছেন। পরিণীতি একথাই বলেছেন স্পষ্ট করে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমার কাজটা আমি করেই চলেছি। কিন্তু ছবি কেমন, তার দায়িত্ব আমি নেব কী করে?'
খেলোয়াড়ের বডিটাইপে নিজেকে প্রবেশ করানো অভিনেতার কাছে সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং। একজন অ-খেলোয়াড়ের পক্ষে ব্যক্তিগত ইভেন্টে পৃথিীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের স্টাইল অনুকরণ খুবই কঠিন। পরিণীতি 'সাইনা' ছবিতে সেটাই করে দেখিয়েছেন। সাইনা নেহওয়ালের সার্ভিস, স্ম্যাশ, নেটের সামনে ক্ষিপ্রতা এমনভাবে অভিনয় করে দেখিয়েছেন পরিণীতি, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এক্ষেত্রে তাঁকে তাঁর দিদি প্রিয়াঙ্কার 'মেরি কম' অবতার থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে হবে।
সাইনা নেহওয়ালের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি পরিণীতির অভিনয়ে কতটা খুশি। সাইনার উচ্ছ্বাসে তৃপ্ত পরিণীতি, একজন অভিনেতা তাঁর জীবনে এর থেকে আর বেশি কী চান?