`তুমি কেমন করে...` ইতিহাসের ধুলো ঝেড়ে রবি ঠাকুরের আপন পিয়ানোয় চলছে প্রাণ প্রতিষ্ঠা
অর্কময় দত্ত মজুমদার : কলকাতা-শান্তিনিকেতন-পুরুলিয়া-কলকাতা। না কোনও ট্রেন বা বাসের রুটের কথা হচ্ছে না। হচ্ছে একটা ইতিহাসের কথা। প্রায় শ'তিনেক বছরের পুরনো ইতিহাস। সুরের ইতিহাস, মূর্ছনার ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস। একটা পিয়ানোর ইতিহাস।
এই পিয়ানোতে এক সময় সুর তুলেছেন বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ। শুধু কবিগুরু নন, ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন মানুষের হাতের ছোঁয়া পেয়েছে এই পিয়ানো। হয়তো রবি ঠাকুরের কোনও কালজয়ী গানে সুর আরোপিত হয়েছিল এই পিয়ানোতেই।
একসময় এই পিয়ানোটি স্থানান্তরিত হয়। জোড়াসাঁকো থেকে বেরিয়ে এই পিয়ানো পৌঁছে যায় রবি ঠাকুরের সাধের বিশ্বভারতীতে। পরবর্তীকালে কবির কাছ থেকে এই পিয়ানোটি পান প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও বিশ্বভারতীর ছাত্র সন্তোষ সেনগুপ্ত। তবে পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় তিনি মৃত্যুর আগে পিয়ানোটি দান করে দেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠকে।
এই স্কুলেরই ১৯৭০ সালের প্রাক্তনী ছিলেন সন্তোষ সেনগুপ্তের ছেলে। তারপর থেকে দীর্ঘদিন স্কুলেই ছিল পিয়ানোটি। কিন্তু ২০০৪-০৫ সাল নাগাদ একদিন আচমকাই অঘটন ঘটে। কয়েকজন ছাত্র খেলতে খেলতে ভেঙে ফেলে পিয়ানোটিকে। পায়া ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়ে ইতিহাসের গন্ধ বিজড়িত বাদ্যযন্ত্রটি।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অবশেষে সারানো হচ্ছে পিয়ানোটিকে। কবি ঠাকুরের হাতের ছোঁয়া পাওয়া সেই পিয়ানো আবার ফিরে এসেছে কলকাতায়। মারকুইস স্ট্রিটে টনি ব্রেগেঞ্জার ওয়ার্কশপে পিয়ানোটিকে সারানোর কাজ চলছে। কঠিন কাজ, তবে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন টনি। তাঁর লোক গিয়ে দেখেশুনে গোটা পিয়ানোটিকে পুরুলিয়া থেকে নিয়ে এসেছে। ইতিহাসে প্রাণ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে, তবে ধৈর্য ধরে আরও অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ কয়েক মাস।