EXPLAINED | Rohit Sharma Retirement: `মেলবোর্নই ছিল জীবনের শেষ টেস্ট`! আজ অস্তাচলে অধিনায়ক রোহিত...ভারত ১৮৫ অল আউট
মেলবোর্ন টেস্টে হারতেই ভারত কার্যত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে লর্ডসে খেলা হবে না রোহিত শর্মাদের। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ৩ জানুয়ারি থেকে সিডনিতে শুরু সিরিজের শেষ ও পঞ্চম টেস্ট। এই টেস্টের আগে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে একটিই খবর ভাসছিল। সম্ভবত মেলবোর্নেই জীবনের শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন রোহিত! তাঁকে হয়তো আর সিডনিতে দেখা যাবে না। আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হল! রোহিতকে ছাড়াই সিডনিতে প্রথম একাদশ বেছে নিলেন গৌতম গম্ভীর। রোহিতের জায়গা এলেন শুভমন গিল! তাহলে কি সত্যিই অস্তাচলে অধিনায়ক! মেলবোর্নেই রোহিত জীবনের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন বলে মত সুনীল গাভাসকর ও রবি শাস্ত্রীদের।
'ইন্ডিয়ান ড্রেসিং রুম লিকস'- একটি বাক্যেই আপাতত নড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। জাতীয় মিডিয়ার শিরোনামে ঘুরে-ফিরে আসছে ভারতীয় সাজঘরের ভিতরের কথোপকথন বাইরে চলে আসা! চলতি ভারত-অস্ট্রেলিয়া বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি এখন অন্তিম স্টেশনে। আগামিকাল অর্থাত্ ৩ জানুয়ারি থেকে সিডনিতে শুরু সিরিজের শেষ ও পঞ্চম টেস্ট। তার আগে অশান্তির দাবানলে জ্বলছে সাজঘর, মনে করা হচ্ছে ভারতীয় সংসারে এখন বিরাট ফাটল ধরেছে! মেলবোর্ন টেস্ট হারের পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন গম্ভীর। বক্সিং ডে-টেস্টের পরেই ভারতীয় দলের সাজঘরে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে পড়ে বলেই খবর। রোহিত-বিরাটের সঙ্গেও নাকি গম্ভীরের বিবাদ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে... মেলবোর্নে ভরাডুবির পর মেজাজ হারান গম্ভীর, তিনি আর চুপ থাকতে পারেননি! দলের হেডমাস্টার বিরাট-রোহিতদের সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর ধৈর্যের বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এও লেখা হয়েছে যে, গম্ভীর নাকি ড্রেসিংরুমে বিস্ফোরক কথা বলেছেন। তিনি দলের সকলকে কড়া ভাষায় বলেছেন, 'আমি অনেক সহ্য় করেছি, তবে আর নয়! তোমরা কি এবার জেগে উঠবে? আমি এতদিন কিছু বলিনি বলে বিষয়টা হাল্কা ভাবে একদমই নিও না।' সাজঘরে গম্ভীরের কথা বাইরে আসতেই ঝড় উঠেছে...উত্তাল ভারতীয় ক্রিকেট!
রোহিত শর্মার বদলে খেলার আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন গম্ভীর। সেখানেও তিনি রীতিমতো ফুটন্ত মেজাজে ছিলেন। তিনি সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে বলেছেন, 'ড্রেসিংরুমে কোচ এবং খেলোয়াড়ের মধ্যে বিতর্ক থাকবেই, তবে যা বেরিয়েছে তা শুধুই রিপোর্ট, সত্য নয়।' গম্ভীরের আরও সংযোজন, 'সৎ লোকজন যতদিন ড্রেসিংরুমে থাকবে ততদিন ভারতীয় ক্রিকেট নিরাপদ হাতে থাকবে। পারফরম্যান্সই একমাত্র জিনিস যা আপনাকে ড্রেসিংরুমে রাখে,সাজঘরের কথোপকথনে সততাই ছিল। দলের একটিই প্রবণতা এবং সেখানে একটিই আলোচনা। এটিই দলের প্রথম আদর্শ যা গুরুত্বপূর্ণ। দলের দরকারেই খেলতে হবে। টিম স্পোর্টসেও স্বাভাবিক খেলা সম্ভব,দলের প্রয়োজনে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ভাবেই খেলতে হবে।' রোহিতের সাংবাদিক বৈঠকে অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে গম্ভীর বলেছিলেন, 'দলের প্রধান কোচ এখানে রয়েছেন। আমার মনে হয় সেটাই যথেষ্ট। রোহিতের সঙ্গে সবকিছু ঠিক আছে এবং আমি মনে করি না অধিনায়কের আসা কোনও ঐতিহ্যের বিষয়।' গম্ভীরকে যখন রোহিতের সিডনি টেস্টে খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন গম্ভীর বলেন, 'আমরা উইকেট দেখেই আগামিকালের প্রথম একাদশ চূড়ান্ত করব।' গম্ভীরের এই কথাই রোহিতের অনিশ্চয়তাকে নিশ্চিত করে দিয়েছিল।
রোহিতকে বসানো হল নাকি তিনি নিজে বিশ্রাম নিলেন? এই বিতর্ক আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলছে। এদিন টসের সময়ে বুমরা বলেন, 'অধিনায়ক নিজেই বসতে চেয়েছে, সে বলেছে শুভমন গিলকে খেলালে দল আরও বেশি শক্তিশালী হবে।' তবে অনেকের মতে রোহিতকে বসানোই হয়েছে।
সিডনি টেস্টের প্রথম দিনের ফাঁকে গাভাসকর সম্প্রচারকারী চ্য়ানেলে বলেন, 'রোহিতকে না দেখে মনে হচ্ছে ঠিকই আছে। ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। আমার মনে হয় মেলবোর্নই ছিল জীবনের শেষ ম্যাচ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে শুরু হবে, আমার মনে হবে ভারত এমন কাউকে খুঁজে নেবে যে ২০২৭ ফাইনালের জন্য় তৈরি থাকবে। ভারত ফাইনালে উঠবে কি, উঠবে না সেটা অন্য বিষয়, কিন্তু আমি মনে করি নির্বাচক কমিটি সেটাই করবে। তাই আমরা টেস্ট ক্রিকেটে রোহিত শর্মাকে শেষবারের মতো দেখে ফেললাম।'
ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড ও এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে আপাতত সিরিজে ১-২ পিছিয়ে পড়া, এর সঙ্গেই জুড়েছে রোহিতের রানের চরম খরা! ২০২৪ সালে ১৪ টেস্টে ও ২৬ ইনিংস মিলিয়ে রোহিতের ঝুলিতে মাত্র ৬১৯ রান এসেছে। গড় ২৪.৭৬, জোড়া সেঞ্চুরি ও একটি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। বিগত ৯ টেস্টে তাঁর গড় ১০.৯৩ ও চলতি বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে যা এসে দাঁড়িয়েছে ৬.২! ২৪টি টেস্টে ভারতকে এখনও পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। ভারত ১২টি টেস্ট জিতেছে, ৯টি হেরেছে এবং ৩টি ড্র করেছে। তার জয়ের হার ৫০ শতাংশ। ১০ বা তার বেশি টেস্টের বিচারে ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সেরা। রোহিতের টেস্ট অধিনায়কত্বের উজ্জ্বলতম দিক হিসেবে থাকবে গতবছেরর প্রথম দিকে হোম সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৪-১ ব্যবধানে হারানো। এই জয় ভারতের মাটিতে তার নেতৃত্বকে শক্তিশালী করেছিল। অ্যাওয়ে টেস্টে রোহিতের রেকর্ড একদমই উল্লেখযোগ্য নয়। ৮ ম্যাচের মধ্যে, ভারত মাত্র ২টি টেস্ট জিতেছে, ২টি ড্র করেছে এবং ৪টিতে হেরেছে। যা ঘরের বাইরে রীতিমতো চাপের।
সিডনিতে টস জিতে ভারত প্রথমে ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই একই চেনা ভরাডুবি এবারও। ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৮৫ রানে। যশস্বী জয়সওয়াল ও কেএল রাহুলের ওপেনিং জুটির স্কোরবোর্ডে অবদান মাত্র ১১ রান! তিনে নেমে শুভমন করেছেন মাত্র ২০ রান। ২৫ ওভারের ভিতর ৫৭ রান তুলতে গিয়ে ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। মিডিল অর্ডারও তথৈবচ- বিরাট কোহলি (১৭), ঋষভ পন্থ (৪০) ও রবীন্দ্র জাদেজা (২৬)! এরপর নীতীশ কুমার রেড্ডি (০), ওয়াশিংটন সুন্দর (১৪) ও জসপ্রীত বুমরা (২২) কিছুক্ষণ ক্রিজে ছিলেন। অজি পেসার স্কট বোলান্ড তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট, মিচেল স্টার্ক পেয়েছেন ৩ উইকেট, কামিন্সের পকেটে এসেছে ২ উইকেট ও ন্য়াথান লিঁয় পেয়েছেন ১ উইকেট।
ভারতের প্রথম ইনিংসের জবাবে অজিরা প্রথম ইনিংসে তুলেছে ১ উইকেট হারিয়ে ৯ রান। স্য়াম কনস্টাস ও উসমান খোয়াজা ওপেন করতে নেমেছিলেন। বুমরা শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছেন খোয়াজাকে ২ রানে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে। প্রথম দিনের শেষে ক্রিজে আছেন কনস্টাস (৭), এরপর একে একে আসবেন মার্নাস লাবুশানে, স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডরা