তালিবানের দেশে ‘গোলাপ ফুটিয়ে’ বিপ্লব ঘটালেন আফগানরা
বোমা, গুলি, জঙ্গি ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে তাঁরা এতটাই পরিচিত, যে এক দিন কোনও অঘটন না ঘটলেই, সেটাই বিস্ময়। সে দেশের মাটিতে তালিবান, আইএস জঙ্গি ‘চাষ’ হয়। তবে, দিন বদলাচ্ছে কাবুলিওয়ালার দেশেও, জানেন কি?
পূর্ব আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণে চাষ হচ্ছে গোলাপের। তালিবানের বন্দুকের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সেখানকার বাসিন্দারা ফুল ফোটাচ্ছেন গোলাপের। হঠাত্ গোলাপ চাষ কেন?
গোলাপ জল এবং সুগন্ধি সামগ্রী তৈরিতে বিশ্বের অন্যতম স্থান দখল করেছে আফগানিস্তান।
এই এলাকায় চাষ হয় পোস্তও। পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া আফগানিস্তানের নানগড়হর প্রদেশে পোস্ত চাষ ছেড়ে অনেকেই মন দিয়েছেন গোলাপে।
২০০৭ সালে আফগান-জার্মানির যৌথ উদ্যোগে ‘রোজেস ফর নানগড়হর’ প্রকল্প শুরু হয়। প্রায় ৮০০ গোলাপ চাষিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
সাধারণত, পোস্ত চাষ বেআইনি। সেই পথ থেকে অনেককেই মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। এমনই এক পোস্ত চাষি মহম্মদ দিন সাপাই এখন গোলাপ চাষ করছেন। তিনি বলেন, “গোলাপ চাষ করে আমি ভীষণ খুশি।”
সাপাই আরও বলেন, “আমাদেরকে সংস্থা গাছের চারা, যন্ত্রপাতি এমনকি এক বছরের জন্য যাবতীয় খরচ দিয়েছে। এখন আমার কাছে ৬০০টি গোলাপ গাছ রয়েছে। ১২০০ কিলোগ্রাম পাপড়ি সংগ্রহ করেছি এ বারে।”
আফগানিস্তানে আফিম চাষ জনপ্রিয়। নানগড়হর ষষ্ঠ বৃহত্তম প্রদেশ আফিম চাষে। কিন্তু সাপাই জানাচ্ছেন, গোলাপ চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম। গোলাপ চাষের মরসুম শেষ হলেই সবজি চাষ করা হয়।
নানগড়হর প্রদেশে তালিবানের পাশাপাশি আইএস জঙ্গি সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। আফিম চাষে বাধ্য করে জঙ্গিরা। তবে, স্থানীয়রা তাঁদের জীবিকা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করায় জঙ্গিদের হামলার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
শাহ জামান নামে এক শিক্ষক এবং গোলাপ চাষি সাধারণ মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন, আফিম চাষ ইসলাম বিরোধী। গোলাপ চাষের ফায়দা স্থানীয়দের বোঝাচ্ছেন ওই শিক্ষক।
দারা-ই-নূর জেলার আফগান রোজ লিমিটেডের এক প্রতিনিধি খান আগা জানাচ্ছেন, পোস্ত চাষ প্রতি বছর করা হয়। কিন্তু গোলাপ গাছ এক বার বসালে বাঁচে ৩০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। গোলাপ চাষের খরচ নেই বললেই চলে।
তবে, আফগানিস্তানের এই পদক্ষেপ গোলাপের গন্ধে বারুদের গন্ধ অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা। বোমা, জঙ্গি, গুলির বদলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন কাবুলিওয়ালারা, হয়ত এমনও দিন আসতে বেশি দিন বাকি নেই!