Sombhu Mitra: নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে নির্মাণ করলেন এক বিরল নাট্যপ্রতিমা
হঠাৎ করেই যোগাযোগ সব বন্ধ করে দিলেন। সরে গেলেন নিভৃতেই। নাটক থেকে দূরে। অথচ শম্ভু মিত্র, বাংলার নবনাট্যের জনক, নাট্যসংস্কৃতির প্রবাদপুরুষ, নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন বাংলা নাটকের যাত্রায়।
এহেন বিশিষ্ট মানুষটির জন্ম ১৯১৫ সালের আজকের দিনে, এই ২২ অগস্ট কলকাতার ডোভার রোডে। বাবা শরৎকুমার মিত্র, মা শতদলবাসিনী।
ছোট থেকেই তিনি আলাদা ভাবে ভাবতেন, আলাদা ভাবে স্বপ্ন দেখতেন। পড়াশোনা আর শিল্পসংস্কৃতিচর্চায় ডুবে থাকতেন। একদিন কারুবাসনার তাগিদেই যেন শম্ভু মিত্র যুক্ত হলেন রঙমহল থিয়েটারে। সময়টা সম্ভবত ১৯৩৯ সাল। রঙমহল থিয়েটারেই তাঁর প্রথম দেখা হল 'গুরু' মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। যাঁকে তিনি ডাকতেন 'মহর্ষি' বলে।
পরে শিশির ভাদুড়ীর নাটক আর তাঁর বিশিষ্ট অভিনয় ধারার সঙ্গেও পরিচয় ঘটল। উইংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে শিশির ভাদুড়ীর অভিনয় দেখতেন আর ভাবতেন, 'এত প্রচণ্ড জীবনীশক্তি একটা মানুষের থাকে কী করে?'
তবে ৪৬ ধর্মতলা স্ট্রিটের বাড়িতে তাঁর যেন নবজল্ম ঘটল। যেমন কাজের ও ভাবনার সৃষ্টি ও নির্মাণের পরিবেশ চাইতেন 'গণনাট্য সংঘ' শম্ভু মিত্রকে প্রথম সেই পরিবেশ দিল। এর পর এল নবান্ন-পর্ব। 'নবান্ন'র সাফল্য মিথ। এর পরিচালক বিজন ভট্টাচার্য ও শম্ভু মিত্র। এই নাটকই বাংলা নাটকের ইতিহাসে 'নবনাট্য আন্দোলনে'র জন্ম দিয়েছিল। শম্ভু তাঁর নাট্যচিন্তার প্রথম সার্থক প্রয়োগ ঘটাতে পেরেছিলেন এই 'নবান্ন' নাটকেই। তবে ১৯৪৮ সালে শম্ভু মিত্র গণনাট্য ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।
গড়লেন 'বহুরূপী'। ১৯৪৯-৫০ সাল নাগাদ। মহর্ষিই তাঁর ভাবনার গতি মেনে জন্ম নেওয়া নাট্যদলটির নামকরণ করলেন। এর প্রথম প্রযোজনা ছিল 'নবান্ন'ই।
নবনাট্য আন্দোলন শম্ভু মিত্র ও বহুরূপীর হাত ধরে অনেকটাই এগিয়েছিল। আমাদের নাট্যতাত্ত্বিকদের এক অংশ আজ মনে কেন, শম্ভু মিত্রের সেই আন্দোলনই আজকের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন।
কিন্তু ১৯৫৪ সাল বহুরূপী ও শম্ভু মিত্রের জীবনে সব চেয়ে স্মরণীয়। প্রযোজিত হল 'রক্তকরবী'। এই নাটকে শম্ভু মিত্র ও তাঁর পূর্ণ প্রতিভায় নিয়ে মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন। 'রক্তকরবী' বাংলা তথা ভারতীয় নাটকে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। ১৯৮০ সালের ১৮ নভেম্বর 'গ্যালিলি গ্যালিলিও' নাটকে নামভূমিকায় শেষবারের মতো তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন।
রাজ কাপুর তাঁর 'জাগতে রহো' ছবিতে শম্ভু মিত্রকে ডেকে নিয়েছিলেন।
১৯৭৮ সালের ১৫ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে শম্ভু মিত্র পাঠ করলেন 'চাঁদ বণিকের পালা'। নাটকটিকে অনেকেই তাঁর আত্মজীবনী বলে মনে করেন।