হঠাত্ই শুভেন্দু স্মরণ করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদাকে!
'রবীন্দ্রনাথের দাদা' বলে যাঁকে বোঝানো হচ্ছে তিনি কিন্তু যথেষ্ট পরিচিত ও বিশিষ্ট একজন মানুষ। শুধু ঠাকুরবাড়ির বংশধর বা মহর্ষির পুত্র বলেই নয়, উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিপুল পরিচিতি-প্রতিপত্তি ছিল।
সে কথায় না-হয়, পরে আসছি। কিন্তু এ হেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার ১ জুন কেন পড়লেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী? কেন তিনি মঙ্গলবার ১১টা ৩২ মিনিটে সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি টুইট করলেন?
১ জুন দিনটি আসলে সত্যেন্দ্রনাথের জন্মদিন। তাতেই-বা কী এল-গেল? অতীতে ক'জন কতবার সত্যেন্দ্রনাথকে স্মরণ করেছেন? এবারে আলাদা করে এ রাজ্যে বিজেপির মুখ শুভেন্দুর সহসা সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়ে টুইট করার কিছু রাজনৈতিক কারণ আছে বলেই অবশ্য মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ। রাজ্যে এখন সদ্য বিদায়ী মুখ্য সচিবকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেই বিতর্কের আবহেই ব্রিটিশ আমলের একজন হেভিওয়েট আমলাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে শুভেন্দু এই ডিসকোর্সে তাঁর বা তাঁর অধুনাতন রাজনৈতিক মতাদর্শের একটা অ্যাকসেস রাখলেন। শুভেন্দুর টুইটটি এরকম: 'My humble tributes to the famous bengali writer , song composer and linguist Shri Satyendranath Tagore on his Birth Anniversary.'
'প্রখ্যাত বাঙালি লেখক, সংগীতস্রষ্টা ও ভাষাবিদ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি'
এই লেখার সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দু'টি ছবি দিয়ে টুইটটি করেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
কিন্তু মজার বিষয় হল, সত্যেন্দ্রনাথ যে ভারতের প্রথম আইপিএস (বা, বলা ভাল আইসিএস, ইনডিয়ান সিভিল সার্ভিস) তার কোনও উল্লেখ শুভেন্দু টুইটে করেননি।
কেন উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিপুল পরিচিতি-প্রতিপত্তি ছিল, সে কথায় পরে আসার কথা বলা হয়েছিল। এখন উত্তরটি মোটামুটি মিলেই গেল যে, তিনি ভারতের প্রথম আইপিএস অফিসার ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। একটা গোটা দেশের কাছে তিনি উদাহরণস্থল হয়ে উঠেছিলেন। ভারতের বা বাংলার শহরে-গ্রামে মেধাবী ছেলেরা কিন্তু তাঁর কথা ভেবেই নিজেদের কেরিয়ার গড়ার কথা ভাবতেন সেসময়ে। সাধারণের কথা কী? স্বয়ং অরবিন্দ ঘোষ বা সুভাষচন্দ্রের ক্ষেত্রেও সে কথা খাটে।
১৮৪২ সালের ১ জুন জন্ম সত্যেন্দ্রনাথের। হিন্দু স্কুল ও প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা। ১৮৫৯ সালেই জ্ঞানদানন্দিনীদেবীর সঙ্গে বিয়ে।
এই জ্ঞানদানন্দিনীদেবীও সত্যেন্দ্রনাথের যোগ্য সহধর্মিনী। সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা জ্ঞানদানন্দিনী সেই সময় রুচি-মেজাজ-চলন-বলন-কথন সব কিছুতেই ঠাকুরবাড়ির বাঁধা ছাঁদের মধ্যে এক মূর্তিমান বিপ্লব এনে হাজির করেছিলেন।
যাই হোক। বিবাহিত জীবনেই আবদ্ধ থাকেন না সত্যেন্দ্র। তিনি ১৮৬২ সালে ইল্যান্ডে যান। সেখানেই সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। ১৮৬৩ সালে পাশ করেন। ১৮৬৪ সালের মধ্যে তাঁর প্রবেশনারি পিরিয়ডও কেটে যায়। সত্যেন্দ্রনাথকে বম্বে প্রেসিডেন্সিতে পোস্টিং দেওয়া হয়। পরে মহর্ষির ইচ্ছায় কিশোর রবীন্দ্রনাথকে তাঁর মেজদা সত্যেন্দ্রনাথের কাছেই বোম্বাই (মুম্বই) প্রদেশে পাঠানো হয়েছিল।
সত্যেন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রশাসক হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি একজন দেশপ্রেমিকও ছিলেন। তিনি বেশ কিছু দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন। এর মধ্যে 'মিলে সবে ভারত সন্তান' বহুল পরিচিত। ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনি সাহিত্যপ্রেমিক ও মজিলিসি মেজাজের ছিলেন।