Syed Mujtaba Ali: এক বিরল মাপের `আড্ডাপক্ব` রম্যরচয়িতা

Soumitra Sen Mon, 13 Sep 2021-4:13 pm,

বাঙালি ছোটবেলায় আফগানিস্তান নামক দেশটির সঙ্গে সম্ভবত প্রথম পরিচিত হয় সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনার মাধ্যমে। তাঁর ভ্রমণ-কাম-রম্যরচনার হাত ধরেই তো সেই দেশে পা রাখা। আর এখন সারা বিশ্ব আফগানিস্তান নিয়ে চিন্তিত। তালিবান-অধিকৃত নতুন আফগানিস্তান গড়ে ওঠার এই আবহে এসে গেল মুজতবার জন্মদিন। ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্ম। বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তাঁর পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, সিলেট।

সারা জীবন বিপুল পড়াশোনা করেছেন। ১৯২১ সালে মুজতবা শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালি-সহ পনেরোটি ভাষা শেখেন। ১৯২৬ সালে এখান থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন। এরপর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন। 

দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য এরপর বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ সালে। ১৯৩৪-১৯৩৫ সালে মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

 

সারা জীবন পড়েছেন অনেক, ঘুরেছেন তার চেয়েও ঢের। পায়ের নিচে তাঁর সরষে ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু যেখানে যান আর যা-ই করুন না কেন, তাঁর সংস্কৃতির সুরটি ভিতর থেকে বাঁধা ছিল রবীন্দ্রসান্নিধ্যজাত রুচি ও শীলনে।  

সারা জীবন লিখেছেনও বিপুল। উপন্য়াস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, ভ্রমণ কাহিনি। তবে বাঙালি মূলত তাঁকে মনে রেখেছে তাঁর রসবোধের জন্য তাঁর রসরচনার জন্য। তবে মুজতবা আলীর লেখালেখিতে রম্য ও রসের যে উপস্থিতি, তা কখনো মাত্রাতিরিক্ত নয়। কোন কথায়, কতটা কথায়, কোন প্যাঁচে কে কতটা হাসবে এবং হাসতে হাসতে ভাববে, সেই আশ্চর্য রসায়ন তিনি অব্যর্থ জানতেন। তাঁর পরিমিতিবোধ ছিল অসামান্য। তিনি নিজেও বলতেন, মোনালিসা যে এত অবিস্মরণীয় চিত্রকর্ম, তার পেছনে দা ভিঞ্চির আঁকিয়ে-হাতের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তাঁর পরিমিতিবোধ।

আর তাই বাংলা সাহিত্যে মুজতবা আলীর পাকাপোক্ত স্থান রম্যলেখক হিসেবেই। তিনি হাসাতেন মাথা দিয়ে, সূক্ষ্ম কৌতুকরসের সঞ্চার করে, নানা ঘটনার অন্তর্গত অসংগতিকে বেঢপ আকৃতিতে সাজিয়ে, শব্দের প্রাণিত-শাণিত খেলায় মেতে। কথার পিঠে কথা সাজানো ছিল তাঁর সহজাত প্রতিভা। ইংরেজিতে যাকে pun বলে, সেটি তো ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক! 

 

অসাধারণ সব লেখা বেরিয়েছে তার কলম থেকে। যেমন 'দেশে বিদেশে'। 

 

আর 'চাচাকাহিনী'? সে তো প্রায় ক্লাসিকের পর্যায়ে উন্নীত।  

মুজতবা আলীর লেখায় যে বহুমুখী জিজ্ঞাসা, যে জ্ঞানস্পৃহা ও জ্ঞানচর্চার আভাস, তা তাঁর লেখাকে নানাদিকে খুলে দিয়েছিল। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক নিত্যানন্দ বিনোদ গোস্বামী রসিকতা করে অধ্যাপক শব্দটি উচ্চারণ করতেন 'আড্ডাপক্ব' বলে। তাঁর ব্যাখ্যায়, আড্ডায় পক্ব না-হলে অধ্যাপনায় যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। মুজতবা আলী নিঃসন্দেহে সেই বিরল 'আড্ডাপক্ব'।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link