Tarasankar Bandyopadhyay: তারাশঙ্কর সেদিন তাঁর লেখার খাতাটা উনুনে পুড়িয়ে দিলেন! কেন জানেন?
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই। বিশ শতকের এক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক তিনি। ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটোগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, ১টি কাব্যগ্রন্থ এবং ১টি প্রহসন রচনা করেছেন। 'আরোগ্য নিকেতন' উপন্যাসের জন্য ১৯৫৫ সালে 'রবীন্দ্র পুরস্কার' ও ১৯৫৬ সালে 'সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার' পান। ১৯৬৭ সালে 'গণদেবতা' উপন্যাসের জন্য 'জ্ঞানপীঠ পুরস্কার' পান। ১৯৬২ সালে 'পদ্মশ্রী', ১৯৬৮ সালে 'পদ্মভূষণ' সম্মান অর্জন করেছিলেন তিনি।
তারাশঙ্করের প্রথম উপন্যাস 'চৈতালী ঘূর্ণি', এরপর ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয় 'ধাত্রীদেবতা' উপন্যাসটি। একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'কালিন্দী' (১৯৪০), 'গণদেবতা' (১৯৪৩), 'মন্বন্তর' (১৯৪৩), 'পঞ্চগ্রাম' (১৯৪৪), 'কবি' (১৯৪৪), 'সন্দীপন পাঠশালা' (১৯৪৬) 'অভিযান' (১৯৪৬) ইত্যাদি।
তারাশঙ্করের বেশ কিছু উপন্যাস ও ছোটোগল্প অবলম্বনে বাংলায় একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের 'জলসাঘর' ও 'অভিযান', অজয় কর পরিচালিত 'সপ্তপদী', তরুণ মজুমদার পরিচালিত 'গণদেবতা', তপন সিংহ পরিচালিত 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' খুবই বিশিষ্ট।
অনন্য গদ্যকার তারাশঙ্কর শুরু করেছিলেন নাটক দিয়েই। মাঝেমাঝে কবিতাও লেখেন। কবিতা ছাপাও হয়। সম্পাদকরা কবিতা লিখতে উৎসাহও দেন, কিন্তু কবিতা লিখে তাঁর যেন মন ভরে না। শেষে নাটক লেখার শখ জাগল। লিখে ফেললেন। এক আত্মীয়-বন্ধু তখন নাট্যকার হিসেবে নাম করেছেন। তারাশঙ্করের নাটক পড়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। বললেন, তোমার এই নাটক মঞ্চস্থ হলে চারদিকে হইহই পড়ে যাবে! কিন্তু সে নাটক কলকাতার এক নামকরা গ্রুপের ম্যানেজারকে জমা দিতে গিয়ে প্রবল অপমানিত হতে হল তারাশঙ্করের সেই আত্মীয়-বন্ধুকে। অধ্যক্ষ নাটকটি তো পড়লেনই না। উলটে বললেন, নিজে নাটক লিখে নাম করেছেন ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে নিজের আত্মীয়স্বজনকে এনে ঢোকাবেন না যেন। সব শুনে এত অপমানিত বোধ করলেন তারাশঙ্কর যে বাড়ি ফিরে নাটকের পুরো খাতাটাই উনুনে গুঁজে দিলেন। পুড়ে ছারখার হয়ে গেল নাট্যকার হওয়ার স্বপ্ন।
বড় সংসার। এদিকে মাসে তখন বাঁধা রোজগার চল্লিশ টাকারও কম। ফলে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে। এর মধ্যেই কবি সমর সেনের ঠাকুরদাদা দীনেশ সেনের মাধ্যমে এক প্রস্তাব এল মুম্বই গিয়ে কেরিয়ার শুরু করার (তৎকালীন বোম্বাই)। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই অফার। বোম্বাইবাসী হিমাংশু রায় ডাক পাঠিয়েছেন। তাঁর একজন বাঙালি গল্পকার প্রয়োজন। শুরুতেই মাইনে ৩৫০টাকা। প্রতিবছর ১০০ টাকা করে বাড়বে। অভাবের সংসারে এত টাকা! রাজি হয়ে যাওয়ারই তো কথা। কিন্তু গেলেন না সাহিত্যসাধক তারাশঙ্কর। বললেন-- আমি যাব না ঠিক করেছি। আমার মন চাইছে না। মনে হচ্ছে সব হারিয়ে যাবে।
তারাশঙ্করের কাছারিবাড়ি 'ধাত্রীদেবতা' এখন তারাশঙ্কর বিষয়ক সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালায় আছে তারাশঙ্করের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, ঘড়ি, পাণ্ডুলিপি, পদক, তারাশঙ্করের হাতে আঁকা ছবি, কাটুম-কুটুম। এটা এখন একটা ঘুরে আসার জায়গা। কিংবা বলা ভালো তারাশঙ্করকে একবার ছুঁয়ে আসার জায়গা। বাংলা সাহিত্যপ্রেমী মাত্রেরই সেখানে যাওয়া যেন অবশ্যকর্তব্য।