Tokyo Olympics: ওজন কমাতে মাঠে পাঠিয়েছিলেন বাবা, সেই `মোটা ছেলে`ই জিতলেন সোনা
নিজস্ব প্রতিবেদন: হরিয়ানার জাঠ। দুধ-ঘি খেয়ে বেড়ে ওঠা। ১২ বছর বয়সে ওজন পৌঁছে গিয়েছিল ৮০ কেজিতে। সেই 'মোটা' ছেলেই মাত্র ২৩ বছর বয়সে অলিম্পিক্সের ইতিহাসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিলেন।
হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দরা গ্রামে জন্ম নীরজ চোপড়ার। ঠাকুমার আদরে বড় হয়ে উঠছিলেন। দুধ, ঘি খেয়ে ক্রমশ ওজন বাড়ছিল ছেলের। ১২ বছরেই ৮০ কেজি। এমন নাদুসনুদুস বপু দেখে 'সরপঞ্চ' বলে বিদ্রুপ করতেন গ্রামের লোকজন।
বাবা সতীশ কুমার ছেলেকে পাঠালেন মাঠে। একটু দৌড়ঝাঁপ করে যাতে ওজন কমে। ২০১১ সালে কাকা ভীম চোপড়াই ভাইপোকে নিয়ে যান পানিপথ স্পোর্টস স্টেডিয়ামের জিমন্যাজিয়ামে। ট্রেনারের কাছে আবেদন করলেন,'ছেলেটার ওজন একটু কমিয়ে দিন।' ছেলে সোনা জেতার পর গর্বিত বাবা বললেন,'জানতাম ও পদক আনবে।'
পানিপথ সাই সেন্টারে রোজ যাতায়াত শুরু হল নীরজের। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে এক কিশোরকে কসরত করতে দেখেন কোচ জয়বীর। ওই দিন আজও বেশ রয়েছে তাঁর। জয়বীর বলেন,'ওকে বলেছিলাম ভালা ফেকেগা।'
কোচের হাত থেকে 'ভালা' নিয়ে ছুড়লেন নীরজ। প্রথম চেষ্টাতেই বাজিমাত। কোচের মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল,'এ তো ন্যাচরাল ট্যালেন্ট।'
প্রতিভা থাকলেই শ্রেষ্ঠ হওয়া যায় না। নিজের শরীরকে সুঠাম করার জন্য শুরু হয় নীরজের হাড়ভাঙা খাটনি। ছেলে রোজ মাঠে দৌড়তে যায়। বর্শা ছোড়াও যে খেলা হতে পারে তা জানতই না নীরজের পরিবার। আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার পর নাম ওঠে স্থানীয় সংবাদপত্রে। স্থূলকায় নীরজ হয়ে উঠলেন পেশিবহুল অ্যাথলিট।
কৃষক পরিবারের ছেলে নীরজ। অর্ধেক একর জমিতে চাষাবাদ করেন তাঁর বাবা। নীরজের দুই বোন। তবে যৌথ পরিবারে নীরজকে নিয়ে ৯ সন্তান। নীরজের কাকার কথায়,'৯ সন্তানকে মানুষ করে তোলা খুব কঠিন। গত কয়েকবছর ধরে ফসলের তেমন দাম পাচ্ছি না। তা সত্ত্বেও নীরজকে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে দিইনি।'
২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে শুরু হয় নীরজের স্বপ্নের দৌড়। ৮২.২৩ মিটার ছুড়ে জেতেন সোনা। ওই বছরেই এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ৭৭.৬০ মিটার ছোড়েন নীরজ চোপড়া।
২০১৬ সালে পোল্যান্ডের বিডগজে অনুষ্ঠিত আইএএএফের বিশ্ব অনুর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় ৮৬.৪৮ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন। গড়েন বিশ্ব রেকর্ড।
পরের বছর এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৫.২৩ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন নীরজ। এরপর ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসেও স্বর্ণপদক লাভ। ৮৬.৪৭ মিটার ছুড়েছিলেন নীরজ। ওই বছরেই এশিয়ান গেমসে ৮৮.০৬ মিটার ছুড়ে সোনা জিতেছিলেন।
চোট-আঘাত খেলাধুলোর অঙ্গ। ২০১৯ সালে কনুইয়ের চোট পান নীরজ। কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি। ২০২০ সালে আবার বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব। সব বাধা কাটিয়ে ২০২১ সালের অলিম্পিক্সে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে সোনা জিতলেন নীরজ।
পরিবার ছাড়াও নীরজের বিদেশি কোচের অবদানও অনস্বীকার্য। গ্যারি কালভার্টের প্রশিক্ষণেই দক্ষ হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে তাঁর হৃদরোগে মৃত্যু হয়। এরপর জার্মান কোচ উয়ে হনের কাছেও প্রশিক্ষণ নেন।