Umesh Gopinath Yadav: দেশজুড়ে ১ লাখ ১৮ কিমি রোড ট্রিপ! শহিদদের পুণ্য় মাটি সংগ্রহই নেশা উমেশের
পিয়ালি মিত্র: উমেশ গোপীনাথ যাদব। বেঙ্গালুরু বাসিন্দা বছর চল্লিশের উমেশ পেশায় মিউজিশিয়ান। আর নেশা? পাঁচজনের থেকে এক্কেবারে আলাদা। তাঁর নেশা বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেশের সীমান্ত রক্ষায় বা জঙ্গিদের হাতে শহিদ হওয়া জওয়ানদের সমাধিস্থলের পুণ্য মাটি সংগ্রহ করা।
তাঁর এই নেশা-ই সম্প্রতি তাঁকে টেনে আনে কলকাতায়। ২০০২ সালে কলকাতার মার্কিন দূতাবাসে জঙ্গি হামলায় নিহত কলকাতা পুলিসের পাঁচ কর্মীর সমাধিস্থলের মাটি সংগ্রহ করেন তিনি। কলকাতা পুলিস কমিশনারেটের তরফে সেই কলস তাঁর হাতে তুলে দেন ডিসি ওয়ারলেস নভেন্দ্র সিং পাল। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এমনই অনন্য উপায় খুঁজে নিয়েছেন তিনি।
তাঁর এই অভিনব দেশপ্রেমের রোড ট্রিপ, যার মাধ্যমে তিনি দেশের সব কোনায় পৌঁছে যাচ্ছেন, তার শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনা দিয়ে। তখন একটি কাজে জয়পুরে ছিলেন তিনি। সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁকে। তারপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দেশের জন্য যাঁরা এভাবে নিজেকে বলিদান করেছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে, শহিদের মাটি সংগ্রহ করে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন তিনি।
আর তাই নিজের কাজ, স্ত্রী, দুই ছেলেকে পিছনে ফেলে ২০১৯ এপ্রিলে যাত্রা শুরু করেন উমেশ গোপীনাথ যাদব। সঙ্গী একটা গাড়ি। এপর্যন্ত ২৮ রাজ্য, ৮ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ১ লক্ষ ১৮ হাজার কিলোমিটার ঘুরে বিভিন্ন ফোর্সে শহিদ হওয়া ১৫০ জনের মাটি সংগ্রহ করেছেন তিনি। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে, দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি পুলওয়ামায় শহিদ ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের পরিবারের সাথে সাথে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কার্গিল যুদ্ধ, উরি হামলা, পাঠানকোট হামলা, অপারেশন রক্ষক, গালওয়ান সংঘর্ষে শহিদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন। দেখা করেন সাম্প্রতিক কুন্নুর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও। প্রসঙ্গত, কুন্নুরে কপ্টার দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারান চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত।
সম্প্রতি আন্দামান হয়ে উমেশ এবার কলকাতায় এসেছেন। কলকাতায় এসে উমেশ সংগ্রহ করেছেন আমেরিকান সেন্টারে নিহত কলকাতা পুলিসের পাঁচ শহিদের পুণ্য মাটি। দেখা করেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও।
হাতে মাত্র ২০০০ টাকা নিয়ে এই যাত্রা শুরু করেছিলেন উমেশ। এখনও কোনওরকম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া, স্পনসর ছাড়া যেভাবে একাজ তিনি করে চলেছেন, তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা।
উমেশ জানান, শহিদের পরিবারে ঘুরে ঘুরে তাঁদের কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করছেন, তা থেকে ভবিষ্যতে ডকুমেন্টারি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।