IS থেকে আল-কায়েদা কীভাবে জঙ্গিদের পছন্দের অস্ত্র হয়ে উঠল Drone?
নিজস্ব প্রতিবেদন: সপ্তাহখানেক আগেই জম্মু বিমানবন্দরের এয়ারফোর্স স্টেশনে বিস্ফোরক হামলা চালিয়েছে ড্রোন। ভারতের সুরক্ষা ব্যবস্থায় এই হামলা বড়সড় আঘাত বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। নাশকতার চালাতে সিরিয়াতে যে কৌশল ব্যবহার করত ইসলামিক স্টেট (ISIS), এই ড্রোন হামলাকে অনেকে সেই ধরনের নাশকতার সঙ্গেও তুলনা করছেন। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে জঙ্গিদের নাশকতার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠল এই ড্রোন? এর আগেও কি ভারতে ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান?
তার আগে জেনে নেওয়া যাক ড্রোন কী?
আগে ড্রোন বলতে বোঝানো হত, হুলহীন পুরুষ মৌমাছিকে। যার একমাত্র কাজ ছিল রানি মৌমাছির সঙ্গে সঙ্গম করা। তবে বিজ্ঞানের অবদানে এখন ড্রোন হয়ে গিয়েছে চালকবিহীন আকাশ যান (unmanned aerial vehicle) বা উড়ন্ত রোবট।
১৯৯১-এর গাল্ফ যুদ্ধে (Gulf War) ড্রোনকে প্রথমবার সামরিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকা। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশের সেনায় বেড়েছে ড্রোনের ব্যবহার। নজরদারির পাশাপাশি, অস্ত্র হিসেবেও ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। কারণ এতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এছাড়া পণ্য পরিবহণ-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে।
কীভাবে সন্ত্রাসবাদদের অস্ত্র হয়ে উঠল ড্রোন?
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'The Role of Drones in Future Terrorist Attacks' শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দি অ্যাসোসিয়েশন অফ দি ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি (AUSA)। সেই রিপোর্টে অনুযায়ী, ২০১৩ সালে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালায় আল-কায়েদা। যদিও তা ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় ড্রোন হামলা চালায় ইসলামিক স্টেটস (IS)। এরপর ২০১৬ থেকে ড্রোন হামলা কার্যত IS-এর রুটিন নাশকতায় পরিণত হয়। এছাড়া প্যালেস্টাইন ও লেবাননে সক্রিয় হেজবোল্লা (Hezbollah) জঙ্গিগোষ্ঠী, তালিবান এবং পাকিস্তানে সক্রিয় একাধিক জঙ্গি সংগঠন বর্তমানে ড্রোনকে তাদের অস্ত্র হসেবে ব্যবহার করছে।
জানা গিয়েছে, বিগত কয়েক বছরে পাক সীমান্তে একাধিক সন্দেহভাজন ড্রোনের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। কখনও সীমান্ত পেরিয়ে ড্রাগ পাচারের সময় ধরা পড়েছে ড্রোন। কখনও বা অস্ত্র পাচারের সময়। এমনকি বহু সময় সীমানা অতিক্রম করে ভারতে ড্রোন হামলার চালনোরও ছক কষেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো। যা প্রতিহত করেছে সেনা।
তথ্য বলছে ২০১৯-এ সীমান্ত দিয়ে ১৬৭ বার ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে পাক ড্রোন। ২০২০-তে সেই সংখ্যাটা ছিল ৭৭। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র পাচারের সময় একটি ড্রোনকে গুলি করে নিচে নমায় পাঞ্জাব পুলিস। উদ্ধার হয় একে-৪৭ রাইফেল এবং চিনা পিস্তল। একই ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের জুন মাসে। সেবার পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর থেকে অস্ত্র পাচারের সময় একটি ড্রোনকে পাকড়াও করে পুলিস। একই মাসে জম্মুর হীরা নগর সেক্টরেও গুলি করে সন্দেহভাজন একটি ড্রোন নামায় বিএসএফ।
পাকিস্তান কি ড্রোন তৈরি করতে পারে?
না, পাকিস্তানের কাছে ড্রোন তৈরির প্রযুক্তি নেই। তবে পাকিস্তান এবং ইসলামাবাদের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো খুব সহজেই তাদের সব ঋতুর বন্ধু চিনের থেকে ড্রোন আমদানি করতে পারে। ড্রোন নির্মাণে চিন বিশ্বে সেরা।
ড্রোন হামলা কী প্রতিরোধ করা সম্ভব?
সন্দেহজনক উড়ন্ত যানের অনুপ্রবেশ চিহ্নিত করতে সীমান্তে প্রতিরোধী ব়্যাডার রয়েছে ভারতীয় সেনার। তবে সেই সমস্ত ব়্যাডার যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং মিশাইল চিহ্নিত করতে সক্ষম। কিন্তু ২ ফুট থেকে ৬০ সেন্টিমিটারের ড্রোন চিহ্নিত করতে, তা সক্ষম নয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই unmanned aerial vehicle প্রতিরোধে ড্রোন জ্যামিং সিস্টেম ( jamming of drone systems) প্রয়োজন। এছাড়া লেজার জাতীয় Directed Energy Weapons (DEWs) অস্ত্র দ্বারাও ড্রোন নিষ্ক্রিয় করা যায়। ভারতের ইতিমধ্যে দুটি ড্রোন প্রতিরোধী DEW সিস্টেম তৈরি করেছে Defence Research and Development Organisation (DRDO)। ১০ কিলোওয়াটের লেজার ব্যবহার করে ২ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে যা ড্রোন নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম।