#উৎসব: গভীর রাতে পুনর্ভবা পেরিয়ে ডাকাতদল এখানে পুজো দিতে আসত
ডাকাতদের হাতে পূজিতা দেবী এখন মানিকোড়া কালী নামে পরিচিত। এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় ডাকাতদের হাতে মায়ের পুজোর নানা হাড়হিম করা কাহিনী। লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে একদল ডাকাত জঙ্গলঘেরা মানিকোড়ায় এই দেবীর পুজো দিতে আসত। সূর্য ওঠার আগেই পুজো দিয়ে আবার নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত ডাকাতরা।
শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় এক জমিদার জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদিটি খুঁজে পান। এরপর থেকে বংশপরম্পরায় জমিদারদের উদ্যোগেই এই পুজো হত।
জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পরে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে মালদার হবিবপুর থানা এলাকায় এই কালী পুজো হয়ে আসছে। ডাকাত দলের প্রথা মেনে এখনও এখানে মশাল জ্বালিয়ে পুজো হয়। কথিত আছে, কোনও এক সময় গ্রামে শাঁখা ফেরি করতে এসেছিলেন এক শাঁখারি। গ্রামের পথে একটি মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চায়। শাঁখারি তাঁর হাতে শাঁখা পরিয়ে দেন। দাম চাইতেই মেয়েটি বলে ওঠে, তার কাছে পয়সা নেই, শাঁখার দাম তার বাবা দেবেন। মেয়েটি জানায়, তার বাবা কালী মন্দিরের সেবায়েত। শাঁখারী কালীমন্দিরে গিয়ে সেবায়েতের কাছে শাঁখার দাম চাইতেই অবাক হন সেবায়েত। তিনি বলেন, তাঁর কোনও মেয়ে নেই! কে শাঁখা পরল? কথা বলতে বলতেই হঠাৎ তাঁর নজর যায় পাশের পুকুরের দিকে। তিনি দেখতে পান, জলের উপরে একটি মেয়ে দুই হাত উঁচু করে রয়েছে। দুটি হাতে রয়েছে একজোড়া নতুন শাঁখা। মুহূর্তে সেবায়েত বুঝে যান, ওই মেয়ে আর কেউ নন, স্বয়ং মা কালী। সঙ্গে সঙ্গে শাঁখার দাম মিটিয়ে দেন তিনি।
লোকমুখে শোনা যায়, পুজোর গভীর রাতে এই দেবীমূর্তি কেঁপে ওঠে। পাঁঠা বলির সময় মায়ের মূর্তি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায়। যাতে মূর্তিটি না নড়ে যায় সেজন্য দেবীমূর্তিটিকে আগে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রচলন ছিল। এখন চক্ষুদান ও পাঁঠা বলির সময়ে দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
গ্রামের যে কোনও শুভ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে এখনও দেবীর কাছে পুজো দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ছাড়াও আষাঢ়, কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে মায়ের পুজো হয়।
পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, এই পুজো নিয়ে অনেক গল্পকথা রয়েছে। পুনর্ভবা নদীর ওপার (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে রাতের অন্ধকারে ডাকাতদল এই দেবীর পুজো দিতে আসত। ডাকাত দলের আনাগোনা বন্ধ হলে জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায় জঙ্গল আবৃত এই পুজোর স্থান খুঁজে পেয়ে মায়ের পুজো শুরু করেন। বর্তমানে অবশ্য গ্রামবাসীরাই এই পুজোর দায়িত্বে। পুরনো প্রথা মেনে এখনও সাড়ে সাত হাত উচ্চতার মূর্তি তৈরি হয় এখানে।