#উৎসব: এই অষ্টধাতুর প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্রাট আকবর
নেই কোনও আবাহন, নেই কোনও বিসর্জন। শোনা যায়, চার হাতের এই দেবী দুর্গা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং সম্রাট আকবর। অষ্টধাতুর চার হাতের দুর্গা মূর্তির সঙ্গে নেই লক্ষ্মী-সরস্বতী কার্তিক-গণেশ।
ষোলো পুরুষ ধরে এই অষ্টধাতুর দেবী পূজিতা হচ্ছেন হুগলি জেলার বৈঁচি গ্রামে। সারা বছর এই মূর্তি পূজিতা হলেও দুর্গাপূজার সময়ে মাটির মূর্তি তৈরি করে তাঁর সামনে রাখা হয়। মাটির প্রতিমা বিসর্জন হয় তবে অষ্টধাতুর প্রতিমা ফিরে আসে বেদিতে।
আকবরের সময়ে তৈরি হওয়া সেই মন্দির আর অবশিষ্ট নেই। রয়েছে শুধু পাথরের চৌকাঠটি। পরবর্তীকালে পুনরায় মন্দির তৈরি করে ভট্টাচার্য পরিবার। বামদেব এসে প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুন্ডির আসন। বামদেব রেখে যান তাঁর ত্রিশূলটি। সেই হিন্দু ও মুসলমানের ঐতিহাসিক মিলনের দৃষ্টান্তমূলক পুজো হয়ে চলেছে এই গ্রামে। এ পুজোর ইতিহাস রক্ষিত রয়েছে বেনারস ইউনিভার্সিটির মিউজিয়ামে।
বৈঁচিগ্রাম দক্ষিণপাড়া ভট্টাচার্য বাড়ির চণ্ডীরূপে দুর্গা মা পূজিত হয়ে আসছেন আকবরের আমল থেকে। সম্রাট আকবরের প্রতিষ্ঠা করা এই চৌকাঠের পাথর থেকে সাধক বামাক্ষ্যাপা প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুন্ডি আসন। সেখানে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ওই ত্রিশূলটি। তান্ত্রিক মতে ১৬ পুরুষ ধরে পূজিত হয়ে আসছেন জয় দুর্গা।
ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান কর্তা আশিস ভট্টাচার্য বলেন, সাধক বামাক্ষ্যাপা তাঁদের এই মণ্ডপে এসে সাধনা করতেন, সেই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুন্ডির। সেই বেদিতে অষ্ট ধাতু দিয়ে তৈরি চারহাতের চণ্ডীমূর্তি জয় দুর্গা।
মায়ের না আছে বোধন, না আছে বিসর্জন। সারা বছরই পঞ্চমুন্ডির বেদীতে বিরাজ করেন তিনি। যদিও কালের পরিবর্তনে বর্তমানে আলাদা ঠাকুর মণ্ডপ হয়েছে এবং পুজো উপলক্ষে মূর্তি তৈরি হয়েছে। সেই মূর্তি বিসর্জন করা হয়। রীতি অনুযায়ী বংশপরম্পরায় স্থানীয় কামারবাড়ির পটুয়া দিয়ে ঠাকুর তৈরি করা হয় ঠাকুর দালানে। বাড়ির গৃহিণী মুক্তি ভট্টাচার্য জানান, তান্ত্রিক মতে হওয়ার কারণে কারণে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রত্যহ মাছ থাকবে। আকবরের আমল থেকে হয়ে আসা সমস্ত রীতিনীতি এক থাকলেও করোনার কারণে ভোগ রান্নায় গঙ্গা জলের ব্যবহার এখন বন্ধ।