Sumitra Sen: ফোনের ওপারে উত্তমকুমার! মহানায়কের কথা শুনে তখন লজ্জায় লাল তরুণী সুমিত্রা...
জানা গিয়েছে, ২১ ডিসেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সোমবারই তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়। ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন সুমিত্রা। আজ, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটের সময়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
১৯৫১ সালে কুমারী সুমিত্রা দাশগুপ্ত নামে দু’টি নজরুলগীতি রেকর্ড করেছিলেন। শিল্পী হিসেবে সেই তাঁর আত্মপ্রকাশ। পরে নজরুলগীতি ছাড়াও গেয়েছেন নানা গোত্রের পল্লিগীতি, আধুনিকগানও রেকর্ড করেছেন।
ষোলোটি ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্লে-ব্যাক করেছেন। উত্তমকুমারের অনুরোধে ১৯৬০ সালে ‘শুন বরনারী’ ছবিতে গানের মধ্যে দিয়ে যার শুরু।
এই গানের একটি গল্প আছে। এ ছবির গানের জন্য উত্তমকুমার স্বয়ং ফোন করেছিলেন সুমিত্রাকে। উত্তমকুমারের সেই ফোন সুমিত্রার জীবনে খুব বড় ঘটনা। সকালের দিকেই ফোনটা এসেছিল। সুমিত্রার খুব চেনা লাগছিল কণ্ঠস্বরটা। ওপার থেকে ভেসে এল-- 'আমি অরুণ চট্টোপাধ্যায় বলছি।' গলাটা চেনা-চেনা লাগলেও সুমিত্রা চুপ করেই রইলেন। আবার ওপার থেকে ভেসে এল-- 'দিদিভাই, আমি উত্তমকুমার বলছি। রেডিয়োতে আপনার গান শুনলাম। আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে।'
এতক্ষণ, চেনা-চেনা লাগছিল কিন্তু পুরোপুরি বুঝতে পারছিলেন না বলে কথা বলতে পারছিলেন না। এবার চিনেও কথা বলতে পারলেন না। উত্তমকুমার তাঁকে ছবিতে গান গাওয়ার কথা বলেছিলেন সেদিন। সুমিত্রা সেদিনের কথা স্মরণ করে পরে বলেন, ''আমার তো বুক কাঁপছে। এত বড় মানুষ আমাকে দিদিভাই বলছেন! কোনও আলাপও নেই আগে, ভাবুন! বললেন, আমি তোমার বাড়ি যাব একদিন। ‘শুন বরনারী’ ছবিতে তোমায় গান গাইতে হবে। কী বলব আমি, আমার হাত-পা তো ঠান্ডা ততক্ষণে!
'শ্যামা', 'শাপমোচন', 'বাল্মীকি প্রতিভা', 'বর্ষামঙ্গল', 'বসন্ত', 'মায়ার খেলা'-র মতো নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে গান গেয়েছেন সুমিত্রা। কাজ করেছেন উস্তাদ আলি আকবর খান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রবীন চট্টোপাধ্যায়, ভি বালসারা, তিমিরবরণ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রতিভার সঙ্গে। শোনা যায়, ‘কোমল গান্ধার’-এর জন্য ঋত্বিক ঘটক (ওই ছবির সঙ্গীত পরিচালক) জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রকে সুমিত্রার কণ্ঠ ব্যবহার করার কথা বলেছিলেন। এদিকে পঙ্কজকুমার মল্লিকের পরিচালনায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র গানেও থেকে গিয়েছেন সুমিত্রা। তো তো এখন ইতিহাস।