Vinesh Phogat: আন্দোলন হয়ে অলিম্পিক্স, কুস্তিগীর থেকে বিধায়ক! টাইমলাইনে চ্যাম্পিয়নের বিগত এক বছর
হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস যে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিল। তা ভোটের ময়দানে দারুণ ভাবে খেটে গেল। দেশের তারকা কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট কুস্তি ছেড়ে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। ভোটে দাঁড়িয়েই জিতে গেলেন ভিনেশ। জুলানা কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তিনি। পিছিয়ে পড়েও দুরন্ত কামব্যাক করে বিজেপি-র যোগেশ কুমারকে ৬ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন।
ভিনেশ বলেন, 'এই জয় লড়াইয়ের, সত্য়ের। প্রতিটি মহিলা প্রতিটি মহিলা অন্য়ায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। এ দেশ আমাকে যে ভালোবাসা ও বিশ্বাস দিয়েছে, আমি তা ধরে রাখব। আমি হরিয়ানার মানুষের জন্য কাজ করব। জুলানাবাসী আমাকে তাদের আশীর্বাদ দিয়েছেন।
গতবছর মে মাসের ঘটনা। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গ্রেফতারের দাবিতে কুস্তিগীররা পথে নেমেছিলেন। ভিনেশ ও সাক্ষী মালিকদের মতো অলিম্পিক্স পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগীররা, গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন ছিল। যন্তরমন্তর থেকে নতুন সংসদ ভবনের দিকে মিছিল করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু দিল্লি পুলিস তাঁদের আটক করে। সফল ক্রীড়াবিদদের রাস্তায় ফেলে মারধর করছিল দিল্লি পুলিস, এই লজ্জার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ভিনেশ, সাক্ষী, বজরং পুনিয়া-সহ সমস্ত কুস্তিগীরকে আটক করা হয়েছিল সেদিন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লি পুলিস জানিয়েছিল যে, মোট সাতটি ধারায় এফআইআর করা হয়েছে কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে রয়েছে দাঙ্গা বাঁধানো, বেআইনি জমায়েত ও সরকারি আধিকারিকদের কাজে বাধা দেওয়া মতো গুরুতর অভিযোগ।
ক্যালেন্ডার বলছে তারিখ ছিল গত ৬ অগাস্ট। রাত ১১টার কিছু পরের ঐতিহাসিক সেই ঘটনা। যা আজীবন ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের হৃদয়ে থেকে যাবে। সেদিন প্য়ারিসে অলিম্পিক্সে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে কুস্তির ফাইনালে উঠে ইতিহাস লিখেছিলেন প্রাক্তন কুস্তিগীর ভিনেশ। কুস্তির ৫০ কেজি বিভাগের সেমিফাইনালে ভিনেশ সেদিন কিউবার গুজমান লোপেজকে হারিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপরই ভিনেশের পদকের (সোনা/রুপো) আশায় বুক বাঁধছিলেন ১৪০ কোটি ভারতীয়। তবে ফাইনালের সকালেই আসে বুক ভাঙা খরব। যখন মহাযুদ্ধের আগে ভিনেশের ওজন মাপা হয়েছিল, তখন দেখা গিয়েছিল যে, তাঁর ১০০ গ্রাম বেশি ওজন রয়েছে। সেই কারণে তারকা কুস্তিগীরকে ফাইনালে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল! এই খবর মেনে নিতে পারেননি কেউই। এমনকী এরপর বিচার চেয়ে ভিনেশ কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট ওরফে সিএএসের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভিনেশের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
মোদী সরকারের নির্মমতায় বীতশ্রদ্ধ ভিনেশ যে, কংগ্রেসের হাত শক্ত করতে পারেন, তা আগেই অনুমান করা হয়েছিল। আর তিনি ঠিক সেটাই করেছিলেন গত ৬ সেপ্টেম্বর। নয়াদিল্লির ২৪ আকবর রোডে এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন।
'আমার কুস্তির কেরিয়ারে আমাকে সমর্থন করার জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি আশা করি আমি তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করব। আমি কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ কঠিন সময়ে বোঝা যায় কে পাশে আছে। যখন আমাদের রাস্তায় টেনে-হিঁচড়ে নামানো হয়েছিল, তখন বিজেপি ছাড়া অন্য সব দল আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাঁরা আমাদের কষ্ট এবং কান্না বুঝতে পেরেছিল। আমি এমন এক দলের সাথে যুক্ত হতে পেরে খুব গর্বিত, যারা মহিলাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আমি দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা কুস্তিতে যেভাবে কাজ করেছি, আমরা তাদের জন্য একই তীব্রতার সঙ্গে কাজ করব। আমরা প্রত্যেক মহিলার পাশে দাঁড়াব, যাঁরা নিজেদের অসহায় মনে করবেন। আমি যন্তর মন্তরে বিক্ষোভের সময়ে কুস্তি ছেড়ে যেতে পারতাম। তবে আমি অলিম্পিকের ফাইনালে গিয়েছি। কারণ ঈশ্বরের অন্য পরিকল্পনা ছিল। তিনি এখন আমাকে একটি সুযোগ দিয়েছেন আমার দেশের মানুষের সেবা করার।'