পশ্চিমবঙ্গ `বাংলা` হলে, কী প্রভাব পড়বে আপনার জীবনে?
২৬ জুলাই, ২০১৮, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব। 'পশ্চিমবঙ্গ' পাল্টে রাজ্যের নাম 'বাংলা' রাখতে সহমত হয়েছে দলমত নির্বিশেষে সব পক্ষই।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের নাম ইংরেজিতে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এর বদলে 'পশ্চিম বঙ্গ' রাখার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় কেন্দ্র।
এরপর রাজ্যের নাম বাংলায় 'বাংলা', ইংরেজিতে 'বেঙ্গল' ও হিন্দিতে 'বঙ্গাল' রাখতে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু নবান্নের সেই প্রস্তাবও খারিজ করে দেয় দিল্লি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সব ভাষার জন্য রাজ্যের একটি-ই নাম নির্বাচন করার কথা বলা হয়। এরপরই, ২৬ জুলাই বিধানসভায় রাজ্যের নাম 'বাংলা' রাখার প্রস্তাব করেন মুখ্যমন্ত্রী। সর্বসম্মতিতে সেই প্রস্তাব পাস হয়।
এখন প্রশ্ন, এই নাম বদলের প্রভাব জনজীবনে কীভাবে পড়বে?
১) রাজ্যের নাম বদলালে যে কোনও দরকারি সরকারি নথির ক্ষেত্রে নাম বদল অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
২) রাজ্যের নাম বদল করতে হবে যে কোনও সরকারি লেটার হেডের ক্ষেত্রেও।
৩) বিভিন্ন সরকারি টেন্ডার বা অর্ডার পুরনো নামে আর কার্যকরী হবে না।
৪) নাম বদল করতে হবে বিশ্ব বাংলা লোগোতেও। বিশ্ব বাংলা লোগোর নীচে লেখা থাকে, 'পশ্চিমবঙ্গ সরকার'। তাই সেখানেও বদল একান্ত জরুরি।
৫) রাজ্যের নাম বদলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে গাড়ির নাম্বার প্লেটের ক্ষেত্রে। এখন গাড়ির নাম্বার প্লেটের ক্ষেত্রে লেখা হয় WB। যা বোঝায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে সংশ্লিষ্ট গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এখন রাজ্যের নাম বদলালে গাড়ির নাম্বার প্লেটে আর WB লেখা যাবে না। BA, BG বা BL-এর মধ্যে যেকোনও একটি বিকল্প বেছে নিতে হবে। তবে গাড়ির নাম্বার প্লেটে নাম বদল শুধুই কি নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, না কি পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রেও তা সময় বলবে।
ক) এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চল রাজ্যটি যখন নাম বদলে উত্তরাখণ্ড হয়, তখন সে রাজ্যের রেজিস্ট্রেশন হওয়া সব গাড়িকে নাম্বার প্লেটে UA সিরিজ থেকে বদলে UK করতে হয়।
খ) দ্বিতীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যায় অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ভেঙে তেলাঙ্গানা রাজ্য গঠনের সময়কালকে। এক্ষেত্রে, নবগঠিত তেলেঙ্গানা রাজ্যে কোনও নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় নাম্বার প্লেটে লেখা হয় TS। তবে, পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে তেলেঙ্গানার মধ্যে পড়লেও পুরনো AP রেজিস্ট্রেশনের গাড়ির নাম্বার প্লেট অপরিবর্তিত-ই রাখা হয়।
৬) পুরসভা, হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট কথাটি লেখা, সেখানে বদলাতে হবে রাজ্যের নাম।
৭) বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয় ও সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলিতেও রাজ্যের নাম বদল করতে হবে।
৮) নাম বদল করতে হবে দোকানের সাইনবোর্ডগুলিতেও।
৯) রাজ্যের নাম বদলের বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াবে বিভিন্ন পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রেও।
১০) আধার, ভোটার, পাসপোর্ট, জন্মের শংসাপত্র, পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত প্রতিটি নথিতেই কী রাজ্যের নাম সংশোধন করতে হবে কি না, তা বলবে সময়ই।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা যে কোনও বৈঠকে বর্ণানুক্রমে বলার সুযোগ পায় যেকোনও রাজ্য। সেক্ষেত্রে ইংরেজিতে নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল হওয়ায়, সবচেয়ে শেষে সুযোগ পায় পশ্চিমবঙ্গ। এরফলে বহু ক্ষেত্রেই বলার সুযোগ পাওয়া যায় না। সে কারণেই রাজ্যের নাম পরিবর্তন প্রয়োজনীয় বলে জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।