আরবিআইয়ের উদ্বৃত্ত অর্থ সরানো নিয়ে সরকারের চাপ সামলাতে পারলেন না উর্জিত?

Mon, 10 Dec 2018-6:33 pm,

ব্যক্তিগত কারণে আরবিআই গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন উর্জিত প্যাটেল। কিন্তু, উর্জিত প্যাটেল যে ইস্তফা দিতে পারেন, সেই জল্পনা আগে থেকেই চলছিল। মোদী সরকারের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না বলে খবর। এর পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বায়ত্ত শাসনের উপরে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

আরবিআইয়ের ইস্তফাপত্রে উর্জিত প্যাটেল লিখেছেন, 'ব্যক্তিগত কারণে এখনই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম'।        

নোট বাতিলের সময় থেকেই আরবিআই তার গুরুত্ব হারিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। মোদীর জমানায় আরবিআই তার স্বাধীনতা হারিয়েছে। নোট বাতিলের ব্যাপারেও আরবিআইয়ের মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। নোটবন্দির পর আরবিআই গভর্নরকে সাংবাদিক বৈঠকেও পাওয়া যায়নি। প্রতিবার অর্থ সচিব এসেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।       

 

অতিসম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত অর্থের হস্তান্তর নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত।  কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রকে জোগান প্রস্তাব দেয় অর্থমন্ত্রক। ৩.৬ লক্ষ টাকা স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব গিয়েছে আরবিআইয়ের কাছে। 

আরবিআইয়ের কাছে বর্তমানে জমা অর্থের পরিমাণ ৯.৫৯ লক্ষ কোটি। সেই অর্থের এক তৃতীয়াংশের বেশি টাকা চাওয়া হয়েছে। 

অর্থমন্ত্রকের প্রস্তাবটি নিয়ে আরবিআই ও সরকারের মধ্যে তৈরি হয় মতানৈক্য। আরবিআইয়ের মত ছিল, এভাবে সঞ্চয় থেকে খরচ হলে দেশের অর্থনীতির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে  স্থিতিশীলতা ভঙ্গ হতে পারে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে (মাইক্রো ইকনমিক)।

সরকার ও আরবিআইয়ের মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের মন্তব্যেও। তিনি বলেছিলেন, ''কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতাকে সম্মান করে না সরকার। দেরিতেও হলে তার প্রভাব আর্থিক বাজারে পড়তে পারে''।            

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর। এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে মঙ্গলবার রঘুরাম রাজন বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রের সঙ্গে যে যুযুধান তৈরি হয়েছে, তা মিটতে পারে যদি স্বায়ত্তশাসন এবং ভাবনার পারস্পরিক সম্মানে।” গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের পূর্বসূরী আরও বলেন, “দেশের স্বার্থে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বায়ত্তশাসনকে সম্মান জানানো উচিত''।

সরকারের প্রস্তাব নিয়ে আরবিআই ও সরকারপক্ষের মধ্যে নভেম্বর ম্যারাথন লড়াই চলে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ম্যারাথন বৈঠকে হাজির ছিলেন আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ, আর্থিক পরিষেবা সচিব রাজীব কুমার ও স্বাধীন সদস্য এস গুরুমূর্তি। সরকারের বক্তব্য ছিল, অব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলিকে নগদ অর্থের জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করা হোক। ছোট ব্যবসাগুলিকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিল নিয়ম থেকে রেহাই দেওয়া, আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে স্বস্তি এবং আরবিআইয়ের উদ্বৃত্ত অর্থ কাজে লাগানো হোক। 

 

শেষপর্যন্ত চাপের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন উর্জিত প্যাটেল। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ালেন। সিবিআইয়ের কোন্দলের পর আরবিআইও চূড়ান্ত ডামাডোলে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link