`শীতকাল কবে আসবে` আর জিগ্যেস করতে হবে না কবিকে, এসেই গেল তিনমাস ঘুমিয়ে থাকার কাল...

Soumitra Sen Sat, 05 Nov 2022-6:30 pm,

ভোর থেকেই কুয়াশার মেলা শুরু। এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জলপাইগুড়িতেও। তিস্তাপাড়ে কুয়াশার জালে পড়ে উধাও নদীর চিহ্ন! শীত এসে গিয়েছে। শীত আসছে। শীত জাগছে। আর বাঙালির মনে পড়ে যাচ্ছে সেই অমোঘ লাইন-- 'শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব'! না, তিন মাস ঘুমিয়ে থাকার কোনও সুযোগই নেই। তবে, ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা। সকাল হতেই নতুন শীতের আমেজ ডুয়ার্স জুড়ে।

১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ক্ষীণকায় এক কাব্যগ্রন্থ। 'শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা'। কবির নাম ভাস্কর চক্রবর্তী। নানা কারণে আধুনিক বাংলা কবিতার স্রোতে এই বইটির গুরুত্ব। তবে সব চেয়ে বড় কথা, এই বইয়ের নাম-কবিতার প্রথম লাইনটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এ-ও তো কবিতার কম বড় সার্থকতা নয়। 

কবি শুরু করেছিলেন এই ভাবে-- 'শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব-- প্রতি সন্ধ্যায়/কে যেন ইয়ার্কি করে ব্যাঙের রক্ত/ ঢুকিয়ে দেয় আমার শরীরে- আমি চুপ করে বসে থাকি-- অন্ধকারে/ নীল ফানুস উড়িয়ে দেয় কারা, সারারাত বাজি পোড়ায়/ হৈ-হল্লা-- তারপর হঠাৎ/ সব মোমবাতি ভোজবাজির মতো নিবে যায় একসঙ্গে-- উৎসবের দিন হাওয়ার মতো ছুঁয়ে যায়, বাঁশির শব্দ/ আর কানে আসে না- তখন জল দেখলেই লাফ দিতে ইচ্ছে করে আমার/ মনে হয়-- জলের ভেতর-- শরীর ডুবিয়ে/মুখ উঁচু করে নিঃশ্বাস নিই সারাক্ষণ-- ভালো লাগে না সুপর্ণা, আমি/ মানুষের মতো না, আলো না, স্বপ্ন না-- পায়ের পাতা/ আমার চওড়া হয়ে আসছে ক্রমশ-- ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনলেই/ বুক কাঁপে, তড়বড়ে নিঃশ্বাস ফেলি, ঘড়ির কাঁটা আঙুল দিয়ে এগিয়ে দিই প্রতিদিন-- আমার ভালো লাগে না-- শীতকাল/ কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব'! 

 

আশ্চর্য এক বিষাদমাখা উচ্চারণ। এই বিষাদ হয়তো কবির একার, কিন্তু শীতের আমেজ তো সকলের-- ময়নাগুড়ি, ধুপগুড়ি, বানারহাট-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের। এই সব এলাকা ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে শীতের আমেজে।

আর সেই আগেরকার মতোই পুরনো ছন্দে শীতের ডুয়ার্স। তাঁরা শীতের আমেজ অনুভব করছেন। সকাল হতেই তাঁরা ভিড় বাড়াচ্ছেন কুয়াশা-মাখা চায়ের দোকানে আশপাশে। একটু গরম চায়ে চুমুক দিতে।  

এই কবিতায় দুটি স্তবক। দ্বিতীয় স্তবকটি শুরু হচ্ছে এইভাবে-- 'একবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেঘ ঝুঁকে থাকতে দেখেছিলাম/ জানলার কাছে- চারদিক অন্ধকার/ নিজের হাতের নখও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না সেদিন--'! আবার এমনও লিখেছিলেন-- 'দীর্ঘ তিনমাস/ আর মাথা নীচু করে বসে থাকতে ভালো লাগে না-'! না, দীর্ঘতিন মাস কার আর মাথা নিচু করে বসে থাকতে ভালো লাগে! আর শীত তো উদযাপনের ঋতু বাঙালির কাছে। তার বরং ঘুম থেকে উঠে জানলার কাছে মেঘ-কুয়াশা ঝুঁকে থাকতে দেখলেই বেশি ভালো লাগবে। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link