WT20: চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য ভারত, ফিরে দেখা কিছু মুহূর্ত
১৪ সেপ্টেম্বর ডারবানে প্রথমে ব্যাট করে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান তোলে। একটা সময় পর্যন্ত টিম ইন্ডিয়ার জেতার সম্ভাবনা বাড়লেও সেটা ভেস্তে দেন বিপক্ষের অধিনায়ক মিসবা-উল-হক। ৩৫ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। ফলে পুরো ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪১ রানে থেমে যায় পাকিস্তান। সেই জন্য এই ফরম্যাটে প্রথমবার 'সুপার ওভার'-এর বদলে 'বোল আউট' দেখছিল ক্রিকেট দুনিয়া। 'বোল আউট'-এ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দেয় ভারত। তবে সেই বিশ্বকাপে 'বোল আউট' ব্যবহার করার জন্য অনেক বিতর্ক হয়েছিল। তাই এরপর থেকে 'বোল আউট' নিয়ম তুলে দেয় আইসিসি।
লিগ পর্বের সেই ম্যাচে মহম্মদ আসিফ-শাহিদ আফ্রিদির দাপুটে বোলিংয়ের সামনে কম রানে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, গৌতম গম্ভীর, যুবরাজ সিং। তবে হার মানেননি রবিন উথাপ্পা। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সঙ্গে ক্রিজে লড়তে থাকেন। ফলে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান তোলে ভারত। ৪টি চার ও ২টি ছয়ের সৌজন্যে ৩৯ বলে ৫০ করেন তিনি। ধোনি ৩৩ করেছিলেন।
২৪ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে আয়োজিত সেই ফাইনালেও সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হয়েছিল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি। তবে মাত্র তিন বল বাকি থাকতে ৫ রানে জয় ছিনিয়ে নেয় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো সিনিয়ররা সেই বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য, একঝাঁক তরুণদের নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন ধোনি। এবং সবাইকে তাক লাগিয়ে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার আইসিসি ট্রফি হাতে তুলে নেন 'ক্যাপ্টেন কুল'। সেই শুরু হয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে ধোনির সফর। এবং কাকতলীয় ভাবে ধোনির নেতৃত্বে এখনও পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত পাঁচটি জয় পেয়েছে।
লিগ পর্বের ম্যাচের মতো সেই ফাইনালের ভারতের ট্রফি জয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিসবা-উল-হক। তাঁর বিস্ফোরক মেজাজে ব্যাটিংয়ের জন্য তখন ভারতীয় ডাগ আউটে চাপ বাড়ছিল। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬ বলে ১৩ রান। সবাইকে চমকে দিয়ে ফাটকা খেলেছিলেন ধোনি। হরভজন সিংকে সুযোগ না দিয়ে আনকোরা যোগিন্দর শর্মার হাতে তুলে দিয়েছিলেন বল। প্রথম বল 'ওয়াইড' করেছিলেন হরিয়ানার বর্তমান ডিএসপি। পরের বলে অবশ্য কোনও রান হয়নি। তবে ওভাররে দ্বিতীয় বলে যোগিন্দর 'ফুল টস' দিতেই লং অফের উপর দিয়ে ছয় মেরেছিলেন পাক অধিনায়ক। ফলে জেতার জন্য ৪ বলে দরকার ছিল ৬ রান। তৃতীয় বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে। মিসবা অফ স্টাম্পে এসে শর্ট ফাইন লেগের উপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। বাউন্ডারি আটকানোর জন্য ঠিক সেখানেই ছিলেন শ্রীসন্থ। তাঁর হাতে বল জমা হতেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে যায় ধোনির ভারত।
চোটের জন্য সেই ফাইনালে খেলতে পারেননি বীরেন্দ্র শেহওয়াগ। সেটা নিয়ে দল চিন্তিত থাকলেও বিপক্ষের বোলারদের একা বুঝে নিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো সে বারের ফাইনালেও বিস্ফোরক মেজাজে ৫৪ বলে ৭৫ রান করেছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। সেই ইনিংসে মেরেছিলেন ৮টি চার ও ২টি ছয়। লোয়ার অর্ডারে ১৬ বলে ৩০ বলে অপরাজিত ছিলেন রোহিত শর্মা। ফলে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান তুলেছিল ভারত।
৩০ সেপ্টেম্বর কলম্বো স্টেডিয়ামে ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে লক্ষ্মীপতি বালাজির দাপটে মাত্র ১২৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ৩.৪ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এই জোরে বোলার। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও যুবরাজ সিং ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।
মাত্র ১২৯ রান টার্গেট হলেও সেই ম্যাচে ভারতের শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি। খালি হাতে ফিরে যান গম্ভীর। ২৯ রানে আউট হন শেহওয়াগ। তবে বিপক্ষকে মাথা তুলতে দেননি বিরাট কোহলি। ৬১ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন কোহলি। মেরেছিলেন ৮টি চার ও ২টি ছয়। ১৯ রানে অপরাজিত থেকে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন যুবরাজ। ফলে তিন ওভার বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।
২১ মার্চের সেই ম্যাচেও পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয় বজায় ছিল। মীরপুরের শের ই বাংলা স্টেডিয়ামের পিচে টপ ফর্মে ছিলেন অমিত মিশ্র। ২২ রানে ২ উইকেট নিয়ে পাক ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার। ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট নিয়েছিলেন। ফলে ৭ উইকেটে ১৩০ রানে আটকে যায় পাকিস্তান।
সেই ম্যাচটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একপেশে ছিল। প্রথমে দাপুটে বোলিং এবং পরে রান তাড়া করতে নেমে ভারতের কড়া জবাব। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান প্রথম উইকেটে ৫৪ রান তুলে দেন। রোহিত ২৪ ও ধাওয়ান ৩০ রানে ফিরলেও পরে বাকি কাজ সারেন কোহলি। 'কিং কোহলি' ৩২ বলে ৩৬ ও সুরেশ রায়না ২৮ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। ফলে ৯ বল বাকি থাকতেই সাত উইকেটে জিতে যায় ভারত।
১৯ মার্চের সেই ম্যাচ নিয়ে অনেক আগে থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। ইডেন গার্ডেন্সের সেই ব্লকবাস্টার ম্যাচে বাধ সেধেছিল প্রবল বৃষ্টি। তবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে মাঠ খেলার মতো প্রস্তুত করেছিলেন তৎকালীন সিএবি সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ১৮ ওভারের সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে ১১৮ রানে আটকে গিয়েছিল পাকিস্তান। অবশ্য জবাবে ব্যাট করতে গিয়ে ভারতও ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। মহম্মদ আমির-মহম্মদ সামি ও ওয়াহাব রিয়াজের আগুনে পেসে মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেই সময় একা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কোহলি। পুরোনো ছন্দে না দেখা গেলেও কোহলিকে সঙ্গত দিয়ে যান যুবরাজ। শেষ পর্যন্ত পাক জোরে বোলারদের আক্রমণকে রুখে দিয়ে ৩৭ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। মেরেছিলেন ৭টি চার ও ১টি ছয়। ফলে ৪ উইকেটে ১১৯ রান তুলে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত।