অসীম ব্যানার্জি


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এবার আমি যাচ্ছি মাদ্রিদে। শুধু পুজো করতে। ব্যক্তিগতভাবে লন্ডনে অনেকবার দুর্গাপূজোয় পুরোহিত হিসেবে কাজ করেছি। এবার আমি মাদ্রিদের দুর্গাপুজোর পুরোহিত। স্প্যানিশ আর্মাডার শিল্পনগরীতে মহামায়ার আবির্ভাব, এক অন্য এবং অনবদ্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমি। সারা বছর আমি ব্যস্ত থাকি নানা কাজে। কিন্তু পুজোর চারটে দিন একেবারে পুরোহিত।


এখানে লোকে পুরোহিতকে খুব সম্মান করে। নিজেরও খুব ভাললাগে। মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। পুরোহিত দেখলেই মনে একটা খুশিখুশি ভাব লাগত। মনে হত পুরোহিত মানেই পুজো। আর পুজো মানেই খুশি। মিথ্যা বলব না এবারও যখন মাদ্রিদের মণ্ডপে বসে মন্ত্র পড়ব, তখন কলকাতার কথা খুব মনে পড়বে। তবে একটা কথা ঠিক, কলকাতায় থাকি বা লন্ডনে। মাদ্রিদে থাকি কী মেদিনীপুরে। ঠাকুরের মুখ সব দূরত্ব ভুলিয়ে দেয়। ভক্তি সব ব্যবধান মুছে দেয়।         


আমি প্রবাসী বাঙালি। দেশ ছেড়েছি প্রায় ৫০ বছর হতে চলল। আজও চোখ বুঝলে যেদিন কলকাতা ছাড়ি সেই দিনটি আর যখন ব্রিটেনের বিমানবন্দরে পা দিলাম সেই ক্ষণটি মনসচক্ষে দেখতে পাই। সে এক মিশ্রণ অনুভূতি যা সেদিন হয়েছিল তা আজও অনুভব করি।


আমার জীবনের প্রথম বিদেশযাত্রা আর এমন এক দেশে আসা যার ভাষা, আবহাওয়া এমনকি গাছপালা, ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। আজকাল বিদেশ যাত্রা এত সহজ হয়েছে যা ৫০ বছর আগে ছিল না। নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে স্বদেশের স্মৃতি মনকে আকুল করতো। এই পরিস্থিতিতে যখন এখানে থাকা বাঙালীদের কাছে খবর পেলাম যে লন্ডনের বেলসাইজ পার্কে দূর্গাপুজো হয়, মনে হল চাঁদ আপনি এসে আমার হাতে ধরা দিয়েছে।


আমি আসছি এমন পরিবার থেকে যেখানে আমাদের নিজস্ব কালীপূজো ২০০ বছরের ঐতিহ্যে ভরা। ফলে স্বভাবতই আমি এক পূজোর আনন্দময় পরিবেশে বড় হয়েছি। দূর্গাপূজো বাঙালীর সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিনের নীল আকাশ তাঁর মাঝখানে সাদা মেঘের স্তূপ আর ধরনীর বুকে কাশ ফুলের দোলা জানিয়ে দিচ্ছে, মা আসছেন। আমি গ্রামের ছেলে, বাউল সংগীত আর আগমনী গান বুকের মধ্যে এক আনন্দের আবেগেওর সৃষ্টি জানিয়ে দিত, মা আসছেন- যার অভাব আমি লন্ডনে বসে অনুভব করি এবং এখনও করছি।


জীবনের বহু বছর চাকরি, প্রতিষ্ঠা এবং আমার ছোট পরিবার নিয়ে সময় বড় তরতর করে এগিয়ে গেল। এরই মধ্যে ২০০৩, হঠাৎই দূর্গাপূজো করার আহ্বান পাই সাউথ-ওয়েস্ট লন্ডনের টটিং থেকে। মন আনন্দে ভরে গেল, এর আগে জীবনে কখনও পৌরোহিত্য করিনি। কিন্তু মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। তারপর আর পিছনে তাকাইনি। দেশের পূজোর আবহাওয়া আর রীতিনীতি বিদেশে সম্পূর্ণভাবে বজায় রাখা সম্ভব নয়। যেমন নদীতে কলা বৌ স্নান, প্রতিমা নিরঞ্জন ইত্যাদি ইত্যাদি। এদেশে নদী বা যে কোনও জলাশয়ে কিছু ফেলা আইন বিরুদ্ধ। তবুও এখানের পূজো কমিটির উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রশংসার যোগ্য। এদের সমবেত প্রচেষ্টায় পূজো মণ্ডপে এক আনন্দময় পরিবেশ গড়ে ওঠে, মনে হয় কলকাতার বনেদি বাড়ির পূজো।