সুবীর ভট্টাচার্য্য


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রথম বর্ষিয়া থেকে ষোড়শি, একটি মানবীকে দেবী জ্ঞানে আরাধনাই কুমারী পূজা। পূজার দিন, তাঁকে স্নান করিয়ে, প্রসাধন ও অলঙ্কারে ভূষিতা করে পূজক তাঁকে দেবী দুর্গার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে পূজা করেন। আমাদের ঘরের ছোট্ট মেয়েটি তখন যেন শুধু আমাদের নয়, তাঁর আলতা রাঙানো চরণদ্বয়, কর কমল ও সিঁদুরের তিলক শোভিত মুখমণ্ডলের দীপ্তি- “বাল রূপাঞ্চ ত্রৈলক্য সুন্দরং...”।


শাস্ত্র মতে, কন্যা রজস্বলা হওয়ার আগে পর্যন্ত কুমারী পূজার যোগ্যা। এই পূজার মাহাত্ম কীর্ত্তনে তন্ত্র পঞ্চমুখ। বলা হয়, তিনি সাক্ষাত যোগিনী, পরম দেবতা, “কাত্যায়নায় বিদ্মহে, কন্যা কুমারী ধীমহী তন্নো দুর্গৈঃ প্রচোদয়া”-হে দুর্গা তুমি কন্যা, তুমি কুমারী, আমরা কাত্যায়নকে জানব, তুমি আমাদের সহায় হও। হে কাত্যায়ন ‘ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমানমি, ত্বং কুমার উত বা কুমারী’।


পরমহংস রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, “সব স্ত্রী লোকই ভগবতীর এক এক রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতেই তাঁর প্রকাশ অধিক”। রাবন বধের জন্য মহামায়া যাতে রাবনকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের অনুকুল হন, সেই উদ্দেশ্যে দেবতারা মহামায়ার স্তব স্তুতি করতে থাকেন, দেবী প্রসন্না হন। দেবী পরামর্শ দেন অকাল বোধনের। পরামর্শ মতো দেবতারা পৃথিবীতে এসে দেখেন এক নির্জন স্থানে বেল গাছের শাখায় নিদ্রিতা এক বালিকা, “নিদ্রিতাং তপ্ত হেমাভাং বিম্বোষ্ঠীং তনু মধ্যমাম্...” দেবতাদের কাতর প্রার্থনায়  বালিকা জাগ্রত হন এবং উগ্রচণ্ডা নামক যুবতীতে রূপান্তরিত হন ও বর প্রদান করেন যাতে  সবংশে রাবন বধ সাধিত হয়। “ঐং রাবনস্য বধার্থায় রামস্যানু গ্রহায় চ...”। তবে, শুধুমাত্র দুর্গা পূজাতেই কুমারী পূজা নয়, যে কোনও প্রসিদ্ধ শক্তিপীঠে দেবীকে কুমারী রূপে পূজা করা হয়। কামরূপের কামাক্ষ্যাধামে দেবী মন্দিরে কুমারী পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। এছাড়াও বেলুড় মঠেও মহাষ্টমীতে বিশেষ সমারহে কুমারী পূজা সাধিত হয়।


“হোমাদিকং হি সকলং কুমারী পূজনং বিনা পরিপূর্ণ ফলং ন স্যাত্ পূজয়া তদ্ ভবেত্ ধ্রুবম” অর্থাত্, কুমারী পূজা ছাড়া হোম প্রভৃতি কর্ম পূর্ণ ফল দান করে না। কিন্তু যদি ওই ক্রিয়াদির সঙ্গে কুমারী পূজাও করা হয় তাহলে, “ফলং কোটি গুনং ভবেত্”।


এতো গেল শাস্ত্রীয় বক্তব্য। কিন্তু আজ যখন চতুর্দিকে অবক্ষয়ের চিহ্ন- ধর্ষণ, খুন, শ্লীলতা হানি মহামারির আকার ধারণ করছে, যখন, কন্যা ভ্রুণ হত্যা, পন প্রথার শিকার হচ্ছেন নারীরা, তখন পুরান-শাস্ত্র-তন্ত্রের এই নারীশক্তির মহিমা কীর্ত্তন এক আদর্শ ভাবনার বীজ বপন করে। আশা একটাই, এই বীজ মহীরুহ হোক, শুভবুদ্ধির উদ্বোধনে প্রকৃত কুমারী পূজার ব্যাপক প্রসার ও চর্চা শুরু হোক। মহামায়ার কাছে এই হোক আমাদের প্রার্থনা।